
মনপুরা: নদী ও সাগরের কোলে গড়ে ওঠা এক অনন্য দ্বীপের ইতিহাস
বাংলাদেশের ভোলা জেলার অন্তর্গত মেঘনার বুকে অবস্থিত মনপুরা দ্বীপের ইতিহাস শুধু প্রকৃতির সঙ্গে বসবাসের কাহিনি নয়, বরং সংগ্রাম, সংস্কৃতি ও বেঁচে থাকার প্রতীক।
ভৌগোলিক উৎপত্তি ও প্রাচীন পরিচয়
মনপুরা দ্বীপের উৎপত্তি মেঘনার পলি সঞ্চয়ের মাধ্যমে। নদী বিশেষজ্ঞদের মতে, ১৮শ শতাব্দীর দিকে নদীর পলি জমে দ্বীপটি গড়ে উঠতে শুরু করে। ব্রিটিশ আমলের মানচিত্রে মনপুরার নাম পাওয়া যায়। ১৯১০ সালের ব্রিটিশ গেজেটিয়ার অনুযায়ী, মনপুরা ছিল একটি নদী বিধৌত অঞ্চল, যেখানে নদীভাঙন ও নতুন জমি সৃষ্টি ছিল নিয়মিত ঘটনা।ঐতিহাসিক ঘটনা ও দুর্যোগ
১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড় মনপুরার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা। ২২২ কিমি/ঘণ্টা বেগের বাতাস ও ১০ মিটার উঁচু জলোচ্ছ্বাসে মনপুরা প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ভোলায় প্রাণ হারায় প্রায় ৫ লাখ মানুষ, যার মধ্যে মনপুরায় ছিল কয়েক হাজার। আন্তর্জাতিকভাবে এই দুর্যোগকে ইতিহাসের ভয়াবহতম প্রাকৃতিক বিপর্যয়গুলোর একটি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে (সূত্র: United Nations Disaster Relief Office Report, 1971)।
সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব
মনপুরা দ্বীপের মানুষের প্রধান পেশা হলো মাছ ধরা ও কৃষি। ১৯৫০ সালের “East Pakistan Fisheries Survey”-এ মনপুরাকে মেঘনার অন্যতম মৎস্য সমৃদ্ধ অঞ্চল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ দ্বীপের মানুষের জীবন নদী ও সাগরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
আধুনিক সময়ে মনপুরা
মনপুরা শুধু ইতিহাস নয়, সংস্কৃতিরও অংশ হয়ে উঠেছে। ২০০৯ সালে গিয়াস উদ্দিন সেলিমের নির্মিত চলচ্চিত্র “মনপুরা” এ দ্বীপের নাম বিশ্বজুড়ে আলোচনায় আনে। আজও ভোলার মনপুরা বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন গন্তব্য।
রাজু