
লালমনিরহাটের পাটগ্রামে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই বেআইনিভাবে যেখানে-সেখানে পেট্রল, অকটেন ও ডিজেল বিক্রি করা হচ্ছে। এতে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ছাড়াও সীমান্তবর্তী এ উপজেলা শহর থেকে জ্বালানি তেল ভারতে পাচার হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ফিলিং স্টেশন মালিকরা।
এ বিষয়ে চারটি ফিলিং স্টেশন দ্রুত ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগে জানা গেছে, রাফা ট্রেডার্স, মুনতাহা ট্রেডার্স, টিএস ট্রেডার্সসহ আটটি প্রতিষ্ঠান বিস্ফোরক পরিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই মিনি ডিসপেনসিং ইউনিট ও প্লাস্টিকের ড্রাম, ট্যাংকিতে মজুত ও বিক্রি করছে। এভাবে তেল বিক্রি করার কারণে একদিকে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, অন্যদিকে ভারতে পাচার হতে পারে।
বিধি অনুযায়ী পেট্রোলিয়াম বিক্রয় ব্যবসা করতে হলে সরকারের বিস্ফোরক পরিদপ্তর কর্তৃক লাইসেন্স প্রাপ্তি বাধ্যতামূলক। এর ব্যত্যয়ের সুযোগ নেই। তবে লাইসেন্সের শ্রেণী অনুযায়ী শুধুমাত্র সেই প্রতিষ্ঠান ডিসপেনসিং ইউনিট দ্বারা পেট্রোলিয়াম বিক্রি ও ট্যাংকিতে মজুত করতে পারে, যাদের অনুমোদন রয়েছে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন রয়েছে হাতে মেপে বিক্রির। তারা স্টিলের ড্রামে মজুত করতে পারবে। যারা বিক্রি করেন, তাদের তফসিলভুক্ত জমিতে পেট্রোলিয়াম মজুত ও বিক্রির অনুমোদন থাকে। এসব প্রতিষ্ঠানের অন্য স্থানে স্থানান্তরের কোনো সুযোগ নেই।
ফিলিং স্টেশনগুলো এসব শর্তাবলি মেনে জ্বালানি তেল বিক্রি করছে বলে তারা দাবি করেন। তাদের অভিযোগ, কিছুদিন ধরে অবৈধভাবে উপজেলায় বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কের পাশে পেট্রল, অকটেন ও ডিজেল বিক্রি করা হচ্ছে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, রাফা ট্রেডার্সসহ নামে-বেনামে পাটগ্রাম-বুড়িমারী মহাসড়কের পাশে ঘরের ভেতরে দীর্ঘদিন ধরে পেট্রল, অকটেন ও ডিজেল ট্যাংকিতে মজুত করে বিক্রি করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে রাফা ট্রেডার্সের কর্মচারী ইলিয়াস হোসেন বলেন, এডি এন্টারপ্রাইজের লাইসেন্স দিয়ে তারা ব্যবসা করছেন। তাদের নিজস্ব লাইসেন্স নেই। এডি এন্টারপ্রাইজ হচ্ছে পৌর শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ডের নিকট। রাফা ট্রেডার্স থেকে এডি এন্টারপ্রাইজ প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে। আশুদেব সাহা নামে এক ব্যক্তি তার বাসার সামনে স্টিলের ড্রামে ডিজেল বিক্রি করলেও এখন তা বন্ধ।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে রংপুর বিস্ফোরক অধিদপ্তরে যোগাযোগ করা হলে ভারপ্রাপ্ত পরিদর্শক অশোক কুমার দাশ বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী লাইসেন্স স্থানান্তর ও হস্তান্তরের কোনো সুযোগ নেই। যেখানে জ্বালানি তেল বিক্রি করা হবে, সেই স্থানটি বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তফসিলভুক্ত জমি হতে হবে এবং সীমান্ত থেকে আট কিলোমিটার দূরে হতে হবে। তিনি যদি মনে করেন জায়গা স্থানান্তর করে পাশের দোকানে যাবেন, তাও পারবেন না।
আপনারা এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসনের। আমরা সহযোগিতা করতে পারি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাফা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আব্দুর রহমানের ছেলে পরিচয়দানকারী (নাম জানা যায়নি) মুঠোফোনে বলেন, আপনাকে দেখাব কেন? যাকে দেখানোর প্রয়োজন হবে, তাকে কাগজপত্র দেখাবো। তবে তাদের বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্সসহ তফসিলভুক্ত জমির সব কাগজপত্র আছে বলে তিনি দাবি করেন।
এদিকে অপর যে সাতটি প্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলোরও একই অবস্থা বলে জানা গেছে। এসব প্রতিষ্ঠান উপজেলার স্বরেও বাজার, ঘুন্টি বাজার, সরকারের হাটসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় একই পদ্ধতিতে বিক্রি করছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাশের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে রংপুর বিস্ফোরক অধিদপ্তরে আইনি বিষয় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। তাদের কাছ থেকে অবহিত হয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আফরোজা