ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

কিডনির দুর্বলতা প্রকাশ করে যে ৫ প্রাথমিক লক্ষণ

প্রকাশিত: ০১:৫৯, ১৯ জুলাই ২০২৫

কিডনির দুর্বলতা প্রকাশ করে যে ৫ প্রাথমিক লক্ষণ

ছবি: সংগৃহীত

আমাদের কিডনি শরীরের ফিল্টারের মতো কাজ করে, যা রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ, অতিরিক্ত পানি ও বিষাক্ত উপাদান দূর করে। কিডনির কার্যক্ষমতা কমে গেলে শরীরে বর্জ্যের সঞ্চয় হয়, যা নানা রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ধীরে ধীরে কিডনি কাজ কমে গেলে ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (CKD) দেখা দেয়। রোগ ধরা পড়লে সময়মতো চিকিৎসা নেয়া যায়, তাই এই প্রাথমিক লক্ষণগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি।

নিচে ধীরগতিতে কাজ করা কিডনির ৫টি সতর্কতা সংকেত দেওয়া হলো:

১. প্রস্রাবের পরিবর্তন

কিডনির সমস্যা সাধারণত প্রস্রাবের ধরণ ও ফ্রিকোয়েন্সির পরিবর্তন দিয়ে শুরু হয়। আপনি লক্ষ্য করতে পারেন:

  • রাতে বেশি প্রস্রাব হওয়া (নোকটুরিয়া)
  • স্বাভাবিকের তুলনায় কম প্রস্রাব বা প্রস্রাব করতে কষ্ট
  • প্রস্রাবে ফেনা বা বুদবুদ, যা কিডনি থেকে প্রোটিন নিঃসরণের নির্দেশ দেয়
  • গাঢ় বা রক্তমিশ্রিত প্রস্রাব

যখন কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন রক্ত শুদ্ধ করতে পারে না, ফলে প্রোটিন ও রক্ত প্রস্রাবে চলে আসে। এমন লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

২. শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফুলে যাওয়া

কিডনির ধীরগতি শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনে ব্যর্থতা ঘটায়, যা নিচের অংশে ফোলা সৃষ্টি করে। বিশেষ করে:

  • পা ও গোড়ালি
  • হাত
  • মুখ, বিশেষ করে চোখের চারপাশ

লবণ ও পানির ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে কিডনির ব্যর্থতা থাকলে শরীরে পানি জমে যায়। বিশেষ করে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় বা রাতে ফোলাভাব বেড়ে যায়। যদি না চিকিৎসা নেওয়া হয়, ফুসফুসেও পানি জমতে পারে, যা শ্বাসকষ্টের কারণ।

৩. অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা

কিডনি ‘এরিথ্রোপোয়েটিন’ (EPO) নামের হরমোন তৈরি করে, যা রক্তের লোহিত কণিকা উৎপাদন বৃদ্ধি করে। কিডনি ধীরে কাজ করলে এই হরমোনের উৎপাদন কমে যায়, যার ফলে রক্তের লোহিত কণিকার সংখ্যা হ্রাস পায় ও অ্যানিমিয়া হয়। এর ফলে:

  • দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি
  • পেশীর দুর্বলতা
  • সামান্য শারীরিক পরিশ্রমেও শক্তিহীনতা

এতটাই ক্লান্তি অনুভব হয় যে দৈনন্দিন কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এটি কিডনি সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে একটি।

৪. ত্বকের খসখসে ভাব ও পেশীর ব্যথা

কিডনি সঠিকভাবে কাজ না করলে শরীরে বর্জ্য পদার্থ ও খনিজ যেমন ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস জমে যায়। এর কারণে:

  • রাতের সময় ত্বকে চুলকানি হয়
  • পায়ে পেশীর খিঁচুনি ও পেশী সংকোচন দেখা দেয়
  • টক্সিনের জমাট ও খনিজের ভারসাম্যহীনতার ফলে ত্বক ও পেশী কোষে জ্বালা ও অস্বস্তি তৈরি হয়।

৫. মনোযোগের সমস্যা ও বিভ্রান্তি

কিডনি কাজ ধীর হওয়ায় বিষাক্ত পদার্থ রক্তে জমে যায়, যা মস্তিষ্কের কাজকে প্রভাবিত করে। এর ফলে:

  • মনোযোগ রাখা বা ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হয়
  • স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়
  • সিদ্ধান্ত গ্রহণে অসুবিধা ও বিভ্রান্তি

বিষয়টি অনুভবকারী ব্যক্তিরা বলেন মস্তিষ্ক যেন কুয়াশায় ঢাকা, সঙ্গে থাকে ক্লান্তি। মস্তিষ্কেও শরীরের মতো টক্সিন জমাট বাঁধায় এই লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়।

সুতরাং, উপরের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে কিডনি পরীক্ষার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সময়মতো ব্যবস্থা নিলে কিডনি রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

 

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।

রাকিব

×