
ছবি: প্রতীকী
পেটের ডান পাশে ব্যথা হলে আমরা অনেকেই ভয় পেয়ে যাই। এটি সাধারণ ব্যথা নাকি কোনো জটিল রোগের লক্ষণ, তা বোঝা একটু কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে যখন ব্যথা তীব্র হয় এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে, তখন অ্যাপেনডিসাইটিস (Appendicitis) বা কিডনি স্টোন (Kidney Stone) – এই দুটি রোগের নাম মাথায় আসে। এই দুটি রোগেই পেটের ডান পাশে ব্যথা হতে পারে, তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে যা লক্ষ্য করলে বোঝা সম্ভব হয় ঠিক কী হচ্ছে।
অ্যাপেনডিসাইটিস হলো এক ধরনের অস্ত্রোপচারজনিত জরুরি অবস্থা, যেখানে পেটের ডান নিচের পাশে অ্যাপেনডিক্স নামে একটি ছোট অঙ্গ সংক্রমিত হয়ে ফুলে ওঠে। এই অঙ্গটির কাজ খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ না হলেও, এতে ইনফেকশন হলে তা বিপজ্জনক হতে পারে। সাধারণত অ্যাপেনডিসাইটিসের ব্যথা পেটের মাঝখান থেকে শুরু হয়ে ধীরে ধীরে ডান নিচের দিকে সরে যায়। ব্যথার সঙ্গে সঙ্গে বমি ভাব, ক্ষুধামান্দ্য, জ্বর, পেট ফুলে যাওয়া এবং হঠাৎ ব্যথা বাড়তে থাকাও লক্ষণ হিসেবে দেখা দেয়। অনেকে ব্যথার জায়গা স্পর্শ করলে খুব তীব্র ব্যথা অনুভব করেন। অনেক সময় পেট শক্ত হয়ে যেতে পারে। অ্যাপেনডিসাইটিস সাধারণত ১০ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, তবে যে কোনো বয়সেই হতে পারে।
অন্যদিকে, কিডনি স্টোন বা বৃক্কে পাথর হলে ব্যথার ধরন কিছুটা আলাদা হয়। কিডনিতে পাথর হলে সেই পাথর যদি ইউরিনের রাস্তা ধরে নিচে নেমে আসে, তখন তীব্র ব্যথা হয়। সাধারণত এই ব্যথা হঠাৎ করে শুরু হয় এবং তলপেট বা কোমরের পাশে শুরু হয়ে ডান পেটে ছড়িয়ে পড়ে। এই ব্যথা অনেক সময় এত তীব্র হয় যে রোগী কষ্টে কুঁকড়ে যান। কিডনি স্টোনের ক্ষেত্রে বমি বা বমি ভাব থাকতে পারে, তবে সাধারণত জ্বর থাকে না যদি না সংক্রমণ হয়। প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, রক্ত মিশে যাওয়া বা প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়াও হতে পারে। অনেক সময় ব্যথা ওঠা কমে আবার কিছুক্ষণ পর শুরু হয় – একে ওয়েভস বা ঢেউয়ের মতো মনে হয়।
দুই ধরনের ব্যথার মাঝে কিছু সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে। অ্যাপেনডিসাইটিসের ব্যথা সাধারণত এক জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকে এবং সময়ের সঙ্গে বাড়ে, যেখানে কিডনি স্টোনের ব্যথা জায়গা পরিবর্তন করতে পারে এবং হঠাৎ করে তীব্র হয়, আবার কিছুক্ষণ পরে কমে আসে। অ্যাপেনডিসাইটিসে শরীর দুর্বল লাগে এবং অনেকে হাঁটতেও পারেন না, যেখানে কিডনি স্টোনের ব্যথায় রোগী বসে থাকতেও অস্থির বোধ করেন এবং নড়াচড়া করতে থাকেন।
চিকিৎসকের কাছে যাওয়াই সবচেয়ে ভালো উপায় যখন আপনি বুঝতে পারছেন না এটি কী ধরনের ব্যথা। চিকিৎসক প্রাথমিক শারীরিক পরীক্ষা, রক্ত ও প্রস্রাবের রিপোর্ট, আল্ট্রাসনোগ্রাম বা সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে সহজেই নির্ণয় করতে পারেন ব্যথার উৎস। অ্যাপেনডিসাইটিস ধরা পড়লে দ্রুত অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়, কারণ অ্যাপেনডিক্স ফেটে গেলে তা পেটের ভেতরে মারাত্মক সংক্রমণ ঘটাতে পারে। অন্যদিকে, কিডনি স্টোন ছোট হলে তা নিজে থেকেই বের হয়ে যেতে পারে প্রচুর পানি খেলে। তবে বড় পাথরের ক্ষেত্রে লিথোট্রিপসি (পাথর গুঁড়িয়ে ফেলা) বা অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।
পেটের ডান পাশে ব্যথা হলে সেটিকে হালকাভাবে না নিয়ে সচেতন হতে হবে। নিজে নিজে ওষুধ খাওয়া, গরম পানি দিয়ে সেঁক দেওয়া কিংবা ব্যথা সহ্য করা অনেক সময় বিপদ বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই কোনো ধরনের ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী বা তীব্র হলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা নিলে জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
এম.কে.