ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২

রাতে পেট ফুলে থাকে? শুধু গ্যাস নয়, হতে পারে ফ্যাটি লিভার

প্রকাশিত: ০৭:৩৩, ১৯ জুলাই ২০২৫

রাতে পেট ফুলে থাকে? শুধু গ্যাস নয়, হতে পারে ফ্যাটি লিভার

ছ‌বি: প্রতীকী

রাতে অনেকেরই পেট ফুলে থাকে বা ভারী লাগে। এটি সাধারণত গ্যাস্ট্রিক বা গ্যাসের সমস্যা বলে মনে করা হয়। কিন্তু সবসময় বিষয়টি শুধু গ্যাসের নয়, এর পেছনে অন্য কোনও গুরুতর কারণও থাকতে পারে। এমন একটি কারণ হলো “ফ্যাটি লিভার”। এখন অনেক বেশি মানুষ ফ্যাটি লিভার সমস্যায় ভুগছেন, অথচ অনেকেই তা জানেন না। কারণ এই রোগ শুরুতে তেমন কোনো স্পষ্ট উপসর্গ দেখায় না। তাই পেট ফুলে থাকা বা অস্বস্তি লাগাকে হালকা করে দেখা উচিত নয়।

ফ্যাটি লিভার বলতে বুঝায় যকৃতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিমাণে চর্বি জমে যাওয়া। এটি দুই ধরণের হতে পারে—একটি হলো অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার, যা মদ্যপানজনিত কারণে হয়। অন্যটি হলো নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার, যা মদ্যপান না করেও বিভিন্ন কারণে হতে পারে। যেমন—ওজন বেশি হওয়া, অনিয়মিত জীবনযাপন, অতিরিক্ত চিনি বা চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া, ডায়াবেটিস, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ইত্যাদি।

রাতে যদি বারবার পেট ফুলে থাকার অনুভূতি হয়, সঙ্গে গ্যাস, ঢেঁকুর, বুক জ্বালাপোড়া বা হজমে সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে সেটা লিভারের সমস্যার ইঙ্গিতও হতে পারে। লিভার ঠিকভাবে কাজ না করলে হজম প্রক্রিয়াও ব্যাহত হয়। ফলে খাবার পুরোপুরি ভাঙ্গে না, গ্যাস তৈরি হয় এবং পেট ভারী লাগে। অনেক সময় রাতে ঘুমের পরও পেট পুরোপুরি খালি লাগে না। এছাড়া মল ত্যাগে অনিয়ম, খাবারের রুচি কমে যাওয়া, বমিভাব, অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।

ফ্যাটি লিভার হলে প্রথমে তা বুঝে ওঠা কঠিন, কারণ শুরুতে এটি নীরবেই শরীরে ছড়ায়। কিন্তু ধীরে ধীরে এটি লিভারের কোষ নষ্ট করতে শুরু করে। দীর্ঘমেয়াদে এটি সিরোসিস বা লিভার ক্যানসারের মতো জটিল রোগে পরিণত হতে পারে। তাই প্রাথমিক লক্ষণগুলোকে অবহেলা করা একেবারেই উচিত নয়।

শরীরের বাড়তি ওজন, বিশেষ করে পেটের চর্বি ফ্যাটি লিভারের একটি বড় কারণ। যারা খুব কম হাঁটেন বা শারীরিকভাবে কম সচল, তাদের ঝুঁকি আরও বেশি। একই সঙ্গে যারা অতিরিক্ত মিষ্টি, সফট ড্রিংকস, তেল-মসলাযুক্ত খাবার, জাংক ফুড, প্রসেসড খাবার বেশি খান, তাদের মধ্যেও এই রোগের প্রবণতা বেশি দেখা যায়।

ফ্যাটি লিভার নির্ণয়ের জন্য আলট্রাসনোগ্রাফি একটি সহজ ও প্রচলিত পদ্ধতি। অনেক সময় নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে লিভার এনজাইমের মাত্রা দেখে বোঝা যায় লিভারে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না। তাই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো খুবই জরুরি, বিশেষ করে যদি আগে থেকেই ওজন বেশি থাকে বা ডায়াবেটিস থাকে।

এছাড়া খাবার ও জীবনযাপনে পরিবর্তন আনাই হলো এই রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের মূল উপায়। যেমন—প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা, কম ক্যালোরির খাবার খাওয়া, সাদা ভাতের বদলে লাল চাল বা আটার রুটি খাওয়া, মিষ্টি জাতীয় খাবার কমিয়ে দেওয়া, ফলমূল ও সবজি বেশি খাওয়া। যাদের ওজন বেশি, তাদের অবশ্যই ওজন কমানোর দিকে মনোযোগী হতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওজন কমানোর কার্যকর পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত।

রাতে পেট ফুলে থাকা বা গ্যাসের সমস্যাকে যদি নিয়মিত সমস্যা হিসেবে দেখা যায়, তাহলে শুধু গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেয়ে তা দমিয়ে রাখা উচিত নয়। বরং এর পেছনে লুকিয়ে থাকা বড় কোনো রোগ আছে কিনা, তা খুঁজে বের করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। ফ্যাটি লিভার এমন একটি রোগ যা একবার শরীরে বাসা বাঁধলে তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন হলেও, সময়মতো ধরা পড়লে ও জীবনযাপনে পরিবর্তন আনলে তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

তাই পেটের অস্বস্তিকে হালকাভাবে না নিয়ে, প্রয়োজন হলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নিজের শরীরকে ভালোভাবে বোঝা এবং নিয়মিত পরীক্ষা করানোই সুস্থ থাকার অন্যতম চাবিকাঠি। মনে রাখতে হবে, লিভার শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, এবং এটিকে সুস্থ রাখা মানেই পুরো শরীরকে সুস্থ রাখা।

এম.কে.

×