ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২

সুষ্ঠু তদন্ত ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে উত্তাল ইবি

ইবি সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ১৩:২৩, ১৯ জুলাই ২০২৫

সুষ্ঠু তদন্ত ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে উত্তাল ইবি

ছবি: জনকণ্ঠ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ আবদুল্লাহর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনাকে হত্যা দাবি করে সুষ্ঠু তদন্ত ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। এ সময় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে সিসিটিভি ক্যামেরা ও পর্যাপ্ত আলো নিশ্চিত করা, প্রশাসনের তৎপরতা বৃদ্ধি সহ বিভিন্ন দাবি জানান।

শনিবার বেলা ১১টা থেকে শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ভবনের সামনে বিক্ষোভের উদ্দেশ্যে জড়ো হতে শুরু করেন। সেখানে দলে দলে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষার্থী অংশ নেন। ক্যাম্পাসের ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরাও এই কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। পরে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের প্রতি ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিয়ে পৌনে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের দুই পাশ আটকে দেন। এতে উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার, প্রক্টরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তারা সেখানে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।

এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘তুমি কে আমি কে, সাজিদ সাজিদ’, ‘প্রশাসনের টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘আমার ভাই মরলো কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘বাজেট নাই বাজেট নাই, বাজেট কী তোর বাপে খায়’, ‘সাজিদ ভাইয়ের বিচার চাই’ সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। তাদের হাতে ছিল বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড, যেখানে নানা প্রতিবাদী স্লোগান লেখা ছিল।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আমরা লাশ দেখে প্রশাসনকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের জানানোর প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা পর সেই লাশ উদ্ধার করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে থানা থাকা সত্ত্বেও পুলিশ আসতে এত সময় লাগলো কেন? এছাড়া লাশ উঠানোর প্রায় আধা ঘণ্টা পার হলেও সেখানে কোনো ডাক্তার বা অ্যাম্বুলেন্স আসেনি। পরে বাধ্য হয়ে আমরা ভ্যানে করে তাকে মেডিকেলে নিয়ে যাই এবং সেখান থেকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়।

তারা আরও অভিযোগ করেন, লাশ শনাক্তের দুই ঘণ্টা পরেও প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা কিংবা হল প্রভোস্টের দেখা মেলেনি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে কোনো সিসি ক্যামেরা সচল নেই। এখন আমরা দেখতে পারছি না, সে কখন কোথায় গিয়েছে। একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন নিরাপত্তাহীনতা মোটেও কাম্য নয়। আমরা বারবার বলার পরেও প্রশাসন বাজেট ঘাটতির কথা বলে সিসি ক্যামেরা বসায়নি। তাদের যদি এতই ঘাটতি থাকে, তাহলে আমাদের বলুক—আমরা নিজেরা চাঁদা তুলে ক্যাম্পাসে সিসি ক্যামেরা লাগাব।

শিক্ষার্থীরা সাজিদের মৃত্যুর তদন্ত দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশ, পুরো ক্যাম্পাস সিসিটিভির আওতায় আনা, আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের এন্ট্রি ও এক্সিট শতভাগ মনিটরিংয়ের আওতায় আনা, ক্যাম্পাসের চারপাশে নিরাপত্তাবেষ্টিত বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ, পর্যাপ্ত স্ট্রিট লাইট স্থাপন ও চালু রাখা এবং বহিরাগত প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ-সহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। দাবি বাস্তবায়ন না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন তারা।

এই কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন সংহতি প্রকাশ করে অংশ নেয়। 

এদিকে বেলা সাড়ে ১১টায় প্রশাসন ভবন থেকে শিক্ষার্থীদের একাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ফুটবল মাঠে যান। সেখানে সাজিদ আবদুল্লাহর গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রারসহ শিক্ষক-কর্মকর্তারা জানাজায় অংশ নিতে চাইলে শিক্ষার্থীরা তাদের বাধা দেন। কর্মকর্তাদের অপেক্ষা না করেই শিক্ষার্থীরা জানাজা সম্পন্ন করেন। এরপর তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে আবারও সমবেত হন।

ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্‌ঘাটন না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন।

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় সাজিদের মৃত্যুর রহস্য উদ্‌ঘাটন ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে মানববন্ধন করে শাখা ছাত্রদল। পরে তারা মূল বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দেয়। একই দাবিতে শুক্রবার রাতে টর্চলাইট মিছিল করেছে শাখা ছাত্রশিবির। ছাত্রী হলগুলোতেও অবস্থানকারী ছাত্রীদের হলের ভেতর বিক্ষোভ দেখা গেছে। শিক্ষক ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন বিবৃতি দিয়ে বিচারের দাবি জানিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ বিষয়ে চলছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা।

শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শহীদ জিয়াউর রহমান হল কর্তৃপক্ষ আলাদা আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য (উপ-উপাচার্য) অধ্যাপক ড. এয়াকুব আলী বলেন, আমরা ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছি এবং দ্রুত তদন্ত শেষ করতে সংশ্লিষ্ট মহলের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। শিক্ষার্থীরা শোকাহত ও ব্যথিত—তাদের আবেগপ্রবণ হওয়াটা স্বাভাবিক। আমরা তাদের পাশেই আছি এবং তাদের স্বার্থেই কাজ করছি।

প্রসঙ্গত, গত ১৭ জুলাই (বৃহস্পতিবার) বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুরে সাজিদ আবদুল্লাহর মরদেহ ভেসে থাকতে দেখে শিক্ষার্থীরা। পরে বিকেল সাড়ে ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও ইবি থানা পুলিশের উপস্থিতিতে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। সাজিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শহীদ জিয়াউর রহমান হলের ১০৯ নম্বর কক্ষে অবস্থান করতেন। তার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলায়।

মুমু ২

×