ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২

শহীদ সাগরের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ: পরিবারের চোখে অশ্রু, হৃদয়ে শূন্যতা

নিজস্ব সংবাদদাতা, রাজবাড়ী

প্রকাশিত: ১৩:৩৭, ১৯ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৩:৩৭, ১৯ জুলাই ২০২৫

শহীদ সাগরের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ: পরিবারের চোখে অশ্রু, হৃদয়ে শূন্যতা

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত রাজবাড়ীর সন্তান সাগর আহমেদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ (শনিবার, ১৯ জুলাই)। দিনটি ঘিরে কেবল শোক নয়, পরিবারজুড়ে নেমে এসেছে নিস্তব্ধ শূন্যতার ছায়া।

সাগর আহমেদ (২১) রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের টাকাপোড়া গ্রামের বাসিন্দা তোফাজ্জেল হোসেনের একমাত্র ছেলে। তিনি মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। গত বছরের ১৯ জুলাই, মিরপুর গোলচত্বরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন।

এক বছর পেরিয়ে গেলেও সাগরের পরিবারের কাছে সময় যেন থমকে আছে। শোকে ভেঙে পড়েছেন তার বাবা-মা। মায়ের চোখে এখনও অশ্রু, বাবার মুখে চাপা কষ্ট। সাগরের ছোট বোন নুশমী, এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থী, ভাইকে হারিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।

শুক্রবার (১৮ জুলাই) বাদ জুমা সাগরের গ্রামের বাড়িতে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তারের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তারিফ উল ইসলাম সাগরের কবর জিয়ারত ও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়া সান্ত্বনা জানাতে সাগরের বাড়িতে যান বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী মুস্তাফিজুর রহমান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এহসানুল হক শিপন, ওসি জামাল উদ্দিনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নেতৃবৃন্দ।

সাগরের বাবা তোফাজ্জেল হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে জনকণ্ঠকে বলেন, “ছেলেটা সব সময় বলত—‘আর ক’টা দিন অপেক্ষা করো বাবা, আমি তোমাকে আর রোদে পুড়তে দেব না।’ ওর স্বপ্ন ছিল আমাদের জন্য। কিন্তু এখন শুধু স্মৃতি, আর চারপাশে নিস্তব্ধ শূন্যতা। আমার ছেলে কোনো অন্যায় করেনি, সে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল।”

সাগরের মা গোলাপী বেগম বলেন, “সাগর ছিল আমাদের ভরসা আর ভবিষ্যৎ। গত এক বছরে প্রতিদিন আমরা একটু একটু করে মরছি।”

সাগরের মৃত্যুর সময়কার ঘটনা স্মরণ করে চাচা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “সেদিন বিকেলে সাগর তার বাবাকে ফোন করে বিকাশে টাকা পাঠাতে বলে। টাকা পাঠানোর পর বহুবার ফোন করেও আর যোগাযোগ করা যায়নি। কিছুক্ষণ পর খবর আসে—সে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে।”

সাগর হত্যার মামলার অগ্রগতির বিষয়ে মামলার বাদী ও সাগরের চাচাতো ভাই সাইফুল ইসলাম জানান, “মামলাটি বর্তমানে ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শহীদদের মামলার মতোই ধীর গতিতে চলছে সাগরের মামলাও। ইতোমধ্যে প্রায় ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”

একজন আদর্শবান, সংগ্রামী ছাত্র হিসেবে সাগর ছিলেন একটি পরিবারের ভরসা, একটি গ্রামের গর্ব, এবং একটি প্রজন্মের অনুপ্রেরণা। তাঁর অনুপস্থিতি শুধু পরিবার নয়, সমাজের জন্যও এক অপূরণীয় ক্ষতি।

নুসরাত

×