
ছবিঃ সংগৃহীত
বিশ্বজুড়ে লিভারজনিত রোগ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে, যার মধ্যে লিভার ক্যানসারের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৯০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত নতুন লিভার ক্যানসারের হার ১০০ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে দায়ী ভাইরাল হেপাটাইটিস এবং ১৬ শতাংশের পেছনে আছে অজানা কারণ, যার মধ্যে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (NAFLD) অন্যতম।
লিভার আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ, যা ৫০০টিরও বেশি কাজ করে। এর মধ্যে আছে রক্ত পরিশোধন, শক্তি সংরক্ষণ এবং চর্বি হজমে সহায়তা। কিন্তু যখন লিভার ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না বা ধীরে কাজ করে—তখন শরীর কিছু সতর্ক সংকেত দিতে শুরু করে, যেগুলোকে অবহেলা করা বিপজ্জনক হতে পারে।
লিভার সমস্যার ৫টি সতর্ক সংকেত:
১. স্থায়ী ক্লান্তি ও দুর্বলতা
ঘুম থেকে উঠে পুরো রাত ঘুমিয়েও যদি ক্লান্ত অনুভব করেন, তবে এটি লিভারের সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। লিভার শরীর থেকে টক্সিন বের করে এবং গ্লুকোজ তৈরি করে শক্তি সরবরাহ করে। কিন্তু যখন এটি ঠিকমতো কাজ না করে, তখন শরীরে ক্লান্তি জমতে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, লিভার সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ক্লান্তিই সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ।
২. চামড়া বা চোখের হলুদাভ ভাব (জন্ডিস)
যখন লিভার বিলিরুবিন নামক উপাদানটি ভাঙতে ব্যর্থ হয়, তখন তা রক্তে জমে গিয়ে ত্বক ও চোখকে হলুদ করে তোলে। এ অবস্থাকে বলা হয় জন্ডিস। যদি চামড়া বা চোখ হলুদ দেখায় এবং সঙ্গে থাকে গাঢ় প্রস্রাব বা সাদা পায়খানা—তবে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
৩. হজমে সমস্যা
বারবার পেট ফুলে থাকা, বমি বমি ভাব বা ক্ষুধামান্দ্য? এসবই হতে পারে লিভারের ধীরগতির কাজের ফলে। লিভার বাইল তৈরি করে, যা চর্বি হজমে সাহায্য করে। এই উৎপাদন ব্যাহত হলে চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার পর অস্বস্তি, ঢেকুর বা কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সিরোসিসে আক্রান্ত ৮০% রোগীর বিভিন্ন ধরনের হজমজনিত সমস্যা থাকে।
৪. ত্বকে চুলকানি
চুলকানি, বিশেষ করে ত্বকে কোনো র্যাশ না থাকলেও, লিভারের সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। যখন লিভার শরীর থেকে টক্সিন বের করতে ব্যর্থ হয়, তখন তা রক্তে জমে গিয়ে ত্বকে অস্বস্তি তৈরি করে। এটি রাতের দিকে বেশি অনুভূত হয় এবং সাধারণত ‘কোলেস্টেসিস’ নামক রোগে দেখা যায়, যেখানে বাইল প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়।
৫. সহজে আঘাত লাগা বা রক্তপাত হওয়া
অল্পতেই যদি শরীরে দাগ পড়ে যায় বা নাক থেকে প্রায়ই রক্ত পড়ে, তা স্বাভাবিক নয়। লিভার রক্ত জমাট বাঁধানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন তৈরি করে। এই কার্যক্ষমতা কমে গেলে এমন উপসর্গ দেখা দেয়। বিশেষ করে যারা ফ্যাটি লিভার বা দীর্ঘমেয়াদি লিভার সমস্যায় ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে এটি গুরুতর সংকেত হতে পারে।
উপরের যে কোনো একটি লক্ষণ যদি আপনি দীর্ঘদিন ধরে অনুভব করেন, তবে দ্রুত একজন চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে লিভার ফাংশন টেস্ট করিয়ে নেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ পদক্ষেপ।
নোভা