ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

ঘুম আসে না? জেনে নিন অনিদ্রার সমাধান

প্রকাশিত: ০১:৪৯, ১৮ জুলাই ২০২৫

ঘুম আসে না? জেনে নিন অনিদ্রার সমাধান

প্রতিদিন রাতভর ছটফট করে কাটছে? ঘুমের সমস্যা দূর করতে জিমে ছুটতে বা ম্যারাথনে দৌড়াতে হবে না—নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, কম মাত্রার, হালকা ব্যায়ামও অনিদ্রা দূর করতে কার্যকর হতে পারে।

বিএমজে এভিডেন্স-বেইজড মেডিসিন নামক একটি সাময়িকীতে প্রকাশিত ২২টি র‍্যান্ডমাইজড ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের এক মেটা-বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ইয়োগা, তাই চি, হাঁটা ও দৌড়ানোর মতো সহজ ব্যায়ামগুলো ঘুম আসা সহজ করে এবং ঘুম গভীর করে তোলে।

এই গবেষণায় মোট ১৩টি ওষুধবিহীন অনিদ্রা নিরাময় পদ্ধতি বিশ্লেষণ করা হয়, যার মধ্যে ছিল ৭টি শরীরচর্চার ধরন, আকুপাংচার, মালিশ এবং কগনিটিভ বিহেভিয়র থেরাপি (সিবিটি)।

গবেষণার প্রধান লেখক এবং চীনের নানজিং ইউনিভার্সিটি অফ চায়নিজ মেডিসিনের ডক্টরাল শিক্ষার্থী ঝি-জুন বু বলেন, “শরীরচর্চা শুধু শারীরিক স্বাস্থ্যই উন্নত করে না, ঘুমের মানও বাড়ায়।”

তিনি বলেন, এ ধরনের ব্যায়ামগুলো অনিদ্রার প্রচলিত চিকিৎসার তুলনায় সাশ্রয়ী এবং ওষুধবিহীন বিকল্প হতে পারে।

অনিদ্রার কারণ ও চিকিৎসা কী?

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের এক জরিপ অনুযায়ী, ১৪.৫% প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি প্রায় প্রতিদিনই ঘুম আসার সমস্যা অনুভব করেন।

সেন্ট লুইস বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. শালিনি পারুতি জানান, সপ্তাহে তিন বা তার বেশি দিন ঘুম আসতে সমস্যা হলে বা ঘন ঘন ঘুম ভেঙে গেলে সেটিকে ক্লিনিক্যাল অনিদ্রা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

অনিদ্রার সাধারণ কারণের মধ্যে রয়েছে চাপ, খারাপ ঘুমের অভ্যাস, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও অন্যান্য ঘুম সংক্রান্ত রোগ যেমন স্লিপ অ্যাপনিয়া।

অনিদ্রার মূল চিকিৎসা হিসেবে প্রথমেই দেওয়া হয় কগনিটিভ বিহেভিয়র থেরাপি (CBT), যা রোগীর ঘুম সংক্রান্ত চিন্তাভাবনা ও আচরণ বদলে দেয়। সিবিটি সাধারণত দুই থেকে ছয় সপ্তাহে ফল দেয় এবং এর প্রভাব ওষুধের চেয়েও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।

ঘুম উন্নত করতে যেসব ব্যায়াম কার্যকর

ঝি-জুন বুর গবেষণায় তিনটি ব্যায়াম বিশেষভাবে কার্যকর বলে দেখা গেছে:

  1. ইয়োগা: সপ্তাহে ২–৬ বার ৪৫–৬০ মিনিট করে অনুশীলনে প্রতিরাতে গড়ে দুই ঘণ্টা বেশি ঘুম হয়েছে এবং ঘুম ভেঙে থাকার সময় এক ঘণ্টা কমেছে।

  2. তাই চি: সপ্তাহে ২–৩ বার ৪৫–৬০ মিনিটের অনুশীলনে ঘুমের সময় প্রায় ৫০ মিনিট বেড়েছে এবং ঘুম ভেঙে থাকার সময় ৩০ মিনিট কমেছে।

  3. হাঁটা বা দৌড়ানো: সপ্তাহে ৩–৫ দিন, ৩০–৭৫ মিনিট অনুশীলনে ঘুমের মান ভালো হয়েছে এবং অনিদ্রার লক্ষণ হ্রাস পেয়েছে।

বু বলেন, “এই ব্যায়ামগুলো শরীরের শক্তি ব্যয় করে, কর্টিসলের মতো স্ট্রেস হরমোন কমায়, মন ভালো করে, মেলাটোনিন উৎপাদন বাড়ায় এবং গভীর ঘুম নিশ্চিত করে।”

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ব্যায়াম ঘুমের একমাত্র চিকিৎসা নয়, তবে তা কার্যকর পরিপূরক হতে পারে। ঘুম উন্নত করতে চাইলেই হঠাৎ ভারী ব্যায়াম শুরু না করে ধীরে ধীরে অভ্যাস তৈরি করা উচিত।

ডা. পারুতি বলেন, সকালের দিকে ব্যায়াম করলে সারা দিন সজাগ থাকা যায়, কিন্তু ঘুমের ঠিক আগে বেশি কষ্টসাধ্য ব্যায়াম ঘুম আসতে বাধা দিতে পারে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এমন ব্যায়াম বেছে নেওয়া যা নিয়মিত করা যায়। যদি জীবনযাপনের পরিবর্তনেও ঘুমের উন্নতি না হয়, তাহলে ঘুম বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়ার সময় এসেছে।

প্রয়োজনীয় সতর্কতা: যেকোনো নতুন ব্যায়াম শুরু করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ব্যথা অনুভব করলে ব্যায়াম বন্ধ করুন।
যারা অনিদ্রায় ভুগছেন, তাদের জন্য হালকা ব্যায়াম হতে পারে সহজ ও সাশ্রয়ী সমাধান। নিয়মিত ইয়োগা, তাই চি বা হাঁটাচলা শুধু ঘুমই নয়, মানসিক স্বাস্থ্যও উন্নত করে।

Jahan

×