ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

শিক্ষার্থীদের নিয়ে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ইশা, বামপন্থী, সমন্বয়ক ও এক্টিভিস্টরা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল

প্রকাশিত: ০১:৩৬, ১৮ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০১:৩৭, ১৮ জুলাই ২০২৫

শিক্ষার্থীদের নিয়ে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ইশা, বামপন্থী, সমন্বয়ক ও এক্টিভিস্টরা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল

ছবি: সংগৃহীত

চব্বিশে ১৭ জুলাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এক স্মরণীয় দিন। এই দিনটি শুধু গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিলের দিন ছিল না— এটি ছিল ছাত্রজনতার প্রতিরোধ, সাহসিকতা এবং ঐক্যের এক অনন্য নজির। সেই স্মৃতি স্মরণ করে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি আবু সাদিক কায়েম।

তিনি লেখেন, ঢাবি শিবিরের ছাত্র আন্দোলন বিভাগের সদস্য জায়েদুল হক, যাকে সবাই জায়েদ নামে চেনে, শুরু থেকেই আন্দোলনের প্রতিটি পর্যায়ে নির্ভরতার প্রতীক ছিলেন। মিছিলের জনশক্তি জোগাড়, খাবার-স্যালাইন সরবরাহ, ব্যানার-মাইক কিংবা মাঠে সমন্বয়— সব দায়িত্বেই তিনি ছিলেন অগ্রভাগে। “নো কুশ্চেন আস্কড!”— এমনই ছিল তার মনোভাব।

১৭ জুলাই শহীদদের স্মরণে গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিলের সিদ্ধান্ত হয় সর্বসম্মতিক্রমে। কর্মসূচি নির্ধারণ নিয়ে চলে দফায় দফায় আলোচনা, যেখানে ফরহাদ, মাহফুজ, আসিফ মাহমুদ, সাংবাদিক সমিতির আল সাদী ভূঁইয়াসহ অনেকে যুক্ত ছিলেন। এ সময় ক্যাম্পাসে যৌথবাহিনী ও পুলিশের উপস্থিতি বাড়ছিলো এবং আক্রমণের প্রস্তুতি চলছিল।

কফিন সংগ্রহের দায়িত্ব দেওয়া হয় জায়েদকে। তিনি দ্রুত সমন্বয় করেন ঢাবি শিবিরের সাবেক সভাপতি শাহ মাহফুজ ভাইয়ের সঙ্গে। ফরহাদ শাহবাগের আমীর শাহ মাহফুজ, তানভীর ভাই, শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলোয়ার ভাই এবং পল্টন থানা আমীর শাহীন ভাইয়ের মাধ্যমে কফিনের ব্যবস্থা করেন।

জায়েদুল হক, নাহিদ, আব্দুল কাদের ও অন্যদের সহায়তায় ভিসি চত্বরে কফিন পৌঁছে দেওয়া হয়। মুজিব হলের পকেট গেট দিয়ে আনা হয় কাফনের কাপড়, ফুল ও পতাকা। একদল ছাত্র নীলক্ষেত থেকে কফিন সহ মিছিল নিয়ে আসে, অন্যদিকে ফ্রিজিং এম্বুলেন্সে আরও কফিন ভিসি চত্বরে পৌঁছে দেওয়া হয়।

গায়েবানা জানাজার নামাজ শুরু হওয়ার পরপরই পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল হামলা শুরু হয়। ভিসি চত্বর, মল চত্বর, সূর্যসেন হল, হলপাড়া জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ইশা, বামপন্থী সংগঠন ও স্বতন্ত্র এক্টিভিস্টরা ছাত্রজনতার সঙ্গে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

এ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পোষা ভিসি দ্রুত ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করে এবং সন্ধ্যার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু ছাত্রজনতা সিদ্ধান্ত নেয়, এই আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। সেই ধারাবাহিকতায় ৩৬ জুলাই অনুষ্ঠিত হয় ফতহে গণভবন, যার মাধ্যমে স্বৈরাচারী হাসিনার শাসনের অবসান ঘটে এবং সফল হয় ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লব।

আবু সাদিক কায়েমের স্ট্যাটাসে ফুটে ওঠে সেই আন্দোলনের গোপন সাহসিকতা, নেতৃত্ব ও সমন্বয়ের এক অনন্য অধ্যায়— যা শুধু স্মৃতির অংশ নয়, বরং প্রেরণার বাতিঘর।

শেখ ফরিদ 

×