ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

কোলেস্টেরল বাড়ছে বুঝবেন যেভাবে– রক্তপরীক্ষা ছাড়াও কিছু লক্ষণ

প্রকাশিত: ১২:৪৮, ১৭ জুলাই ২০২৫

কোলেস্টেরল বাড়ছে বুঝবেন যেভাবে– রক্তপরীক্ষা ছাড়াও কিছু লক্ষণ

ছ‌বি: প্রতীকী

কোলেস্টেরল আমাদের শরীরের জন্য দরকারি এক ধরনের চর্বি জাতীয় উপাদান। এটি রক্তে মিশে থাকে এবং শরীরের বিভিন্ন কাজে লাগে, যেমন হরমোন তৈরি, কোষ গঠন, ও ভিটামিন ডি উৎপাদনে সহায়তা করে। তবে শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে সেটি ক্ষতির কারণ হতে পারে। বেশি কোলেস্টেরল ধমনির ভেতর জমে গিয়ে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। এতে হৃদরোগ, স্ট্রোকসহ নানা জটিল রোগের ঝুঁকি বাড়ে।

রক্তপরীক্ষা ছাড়া কোলেস্টেরল বেড়েছে কিনা তা নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন হলেও কিছু লক্ষণ দেখে সন্দেহ করা যায়। নিচে এমন কিছু লক্ষণ তুলে ধরা হলো, যেগুলোর মাধ্যমে কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যেতে পারে।

প্রথমত, হঠাৎ করে ক্লান্তি ও শারীরিক দুর্বলতা বেড়ে গেলে সতর্ক হতে হবে। শরীরে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল থাকলে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। এতে হৃৎপিণ্ড ও পেশিগুলো ঠিকভাবে অক্সিজেন পায় না। এর ফলে সহজেই ক্লান্ত লাগে, ঘুম থেকে উঠেও মন চাঙ্গা থাকে না, আর অল্পতেই হাঁপ ধরে।

দ্বিতীয়ত, বুক ধড়ফড় করা বা ব্যথা অনুভব হওয়া একট গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। বেশি কোলেস্টেরল ধমনিতে চর্বি জমিয়ে ফেললে রক্ত প্রবাহ ঠিকমতো হয় না। এই কারণে হার্ট পর্যাপ্ত রক্ত না পেয়ে সংকুচিত হয়, তখন বুক ধড়ফড় করে বা মাঝেমধ্যে ব্যথা অনুভূত হয়। বিশেষ করে হাঁটা বা সিঁড়ি ভাঙার সময় যদি বুক ভারী লাগে বা ব্যথা হয়, তাহলে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।

তৃতীয়ত, পায়ের পেশিতে ব্যথা ও ঝিনঝিনে ভাব কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়ার এক ধরনের সংকেত হতে পারে। অনেক সময় ধমনিতে জমে থাকা কোলেস্টেরলের কারণে পায়ের নিচের অংশে রক্ত ঠিকমতো পৌঁছাতে পারে না। এতে করে হাঁটার সময় পায়ে টান লাগে বা ব্যথা করে। আবার কোনো কোনো সময় পায়ের আঙুলে ঝিনঝিনে ভাব বা অবশ অবশ লাগতেও পারে।

চতুর্থত, চোখের পাতায় বা চেহারায় চর্বিযুক্ত ছোট ছোট গুটি বা দাগ দেখা দিলে সেটাও অস্বাভাবিক কোলেস্টেরলের লক্ষণ হতে পারে। একে বলা হয় জ্যানথেলাজমা (xanthelasma)। এগুলো সাধারণত হলুদচে বা সাদা রঙের হয় এবং চোখের চারপাশে জমে। এগুলো কোনো ব্যথা বা চুলকানি না দিলেও শরীরে কোলেস্টেরলের ভারসাম্য ঠিক নেই—এই বার্তা দেয়।

পঞ্চমত, হঠাৎ করে শরীর ভারী বা বদ্ধবোধ করা, বিশেষ করে খাবার খাওয়ার পর যদি বুকে জ্বালাপোড়া বা গ্যাসের সমস্যা বাড়ে, তাহলে সেটিও কোলেস্টেরলের প্রভাব হতে পারে। রক্তে কোলেস্টেরল বেশি থাকলে পাচনতন্ত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। অনেক সময় খাবার হজমে সমস্যা হয়, গ্যাস-অম্বল বেড়ে যায়।

আরও একটি লক্ষণ হচ্ছে স্মৃতিভ্রংশ বা মনোযোগের ঘাটতি। বেশি কোলেস্টেরল থাকলে মস্তিষ্কে রক্ত পৌঁছানো কমে যেতে পারে। এতে করে মনোযোগ ঠিক থাকে না, কথা ভুলে যাওয়া, বা কোনো কাজে স্থিরভাবে মনোযোগ দিতে না পারার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এছাড়া ওজন বেড়ে যাওয়া, হাঁপানি জাতীয় সমস্যা, ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসা (sleep apnea) ইত্যাদিও কোলেস্টেরল বাড়ার পরোক্ষ লক্ষণ হতে পারে। বিশেষ করে যারা স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাদের মধ্যে এসব উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা পরীক্ষা করা জরুরি।

কোলেস্টেরল বাড়া অনেক সময় শরীরে সরাসরি কোনো কষ্ট দেয় না, তাই একে ‘নীরব ঘাতক’ বলা হয়। কিন্তু সময়মতো সচেতন না হলে এটি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। তাই উপরের লক্ষণগুলোর প্রতি মনোযোগী হতে হবে এবং নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা উচিত। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম এবং নিয়মিত ঘুমের মাধ্যমে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তবে যাদের ঝুঁকি বেশি, তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজনও হতে পারে।

এম.কে.

×