
ছবি: প্রতীকী
থাইরয়েড সমস্যা নারীদের মধ্যে খুবই সাধারণ একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। অনেক সময় এই সমস্যার লক্ষণগুলো সহজেই উপেক্ষা হয়ে যায়, যার ফলে সময় মতো চিকিৎসা না পেয়ে অবস্থা জটিল হয়ে দাঁড়ায়। তাই থাইরয়েড রোগের লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি। অনেক নারীরই থাইরয়েড সমস্যা থাকে, কিন্তু তারা দৈনন্দিন জীবনের নানা পরিবর্তনকে ছোটখাটো সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করে গুরুত্ব দেয় না। আসলে থাইরয়েড একটি গ্রন্থি যা ঘাড়ের সামনের অংশে অবস্থিত এবং এটি শরীরের হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। যখন এই গ্রন্থির কার্যক্ষমতা কমে যায় বা বেড়ে যায়, তখন নানা শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়।
নারীরা প্রায়শই যখন ওজন বেড়ে যায়, তখন তারা সেটাকে ডায়েট না মানার ফল মনে করে। কিন্তু ওজন বৃদ্ধিও থাইরয়েড সমস্যার অন্যতম লক্ষণ হতে পারে। কারণ থাইরয়েড হরমোন শরীরের মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণ করে। হরমোনের কমতিতে শরীরের সব কাজ ধীরে ধীরে হয় এবং ওজন বেড়ে যায়। তাই যখন শরীরের অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পায়, তখন অবশ্যই থাইরয়েড পরীক্ষা করানো উচিত।
আরেকটি লক্ষণ হলো শারীরিক দুর্বলতা ও ক্লান্তি। দিনের শুরুতেই অনেকেই যদি অতিরিক্ত ক্লান্তি বোধ করেন, শক্তি হীন হয়ে পড়েন, কিংবা ভালোভাবে ঘুম হলেও পর্যাপ্ত বিশ্রাম পাওয়া যায় না, তাহলে সেটাও থাইরয়েডের লক্ষণ হতে পারে। বিশেষ করে যারা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেও শারীরিক শক্তি ফিরে পাচ্ছেন না, তারা এই ব্যাপারে বেশি সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
ত্বকের রং ও মানসিকতাতেও থাইরয়েডের প্রভাব পড়ে। অনেক নারী লক্ষ করেন তাদের ত্বক শুষ্ক ও খসখসে হয়ে গেছে। ত্বক ধীরে ধীরে ফাটা, ঝুরঝুরে ভাব দেখা দেয়, যা সাধারণ বয়স বৃদ্ধির কারণে নয়। এই ধরনের পরিবর্তনও থাইরয়েড সমস্যা ইঙ্গিত করতে পারে। এছাড়াও চুল পড়া বা চুল পাতলা হয়ে যাওয়া এক সাধারণ কিন্তু অনেক সময় উপেক্ষিত লক্ষণ। অনেক নারী চুল পড়াকে নিয়মিত জীবনযাপনের অংশ হিসেবে দেখেন, কিন্তু এটা থাইরয়েড সমস্যার প্রধান লক্ষণও হতে পারে।
মেজাজ পরিবর্তন এবং মনোযোগের অভাবও থাইরয়েডের আরেকটি লক্ষণ। হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে নারীরা মন খারাপ, অবসাদ, চিন্তা করতে কষ্ট হওয়া, কিংবা মনে একাগ্রতা ধরে রাখতে অসুবিধার মুখোমুখি হতে পারেন। এই ধরনের মানসিক সমস্যা অনেক সময় ডিপ্রেশন বা স্ট্রেসের সঙ্গে মিশে যায়, ফলে থাইরয়েডের সমস্যা শনাক্ত করা যায় না।
আরেকটি লক্ষণ হলো শীতে অসহনীয়তা বা শরীর ঠান্ডা লাগা বেশি হওয়া। থাইরয়েড কম কাজ করলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে অসুবিধা হয়, তাই সাধারণের থেকে বেশি শীতে কাঁপতে শুরু করেন অনেক নারী। একই সঙ্গে হাত-পা ঠাণ্ডা থাকা, শুষ্ক ও ঠাণ্ডা ত্বকও লক্ষণ হতে পারে।
থাইরয়েডের সমস্যা হলে নিয়মিত মাসিক চক্রেও পরিবর্তন আসতে পারে। অনেক নারী মাসিক অনিয়ম, মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া, বা অতিরিক্ত রক্তপাতের সমস্যায় ভুগেন। কিন্তু এসব লক্ষণ অনেক সময় চিকিৎসকের কাছে না নিয়ে উপেক্ষা করা হয়। মাসিকের সমস্যা যেকোনো নারীর জন্যই গুরুত্বপূর্ণ, তাই এ বিষয়ে অবহেলা করা ঠিক নয়।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হলো গলার সামনের অংশে ফুলে যাওয়া বা গলা ফুলে থাকা। এটি থাইরয়েড গ্রন্থির বড় হওয়ার কারণ হতে পারে। অনেক নারী যখন গলায় কিছু একটা বেড়ে যাচ্ছে মনে করেন, তখন অনেকেই তাকে গুরুত্ব দেন না, কিন্তু গলার ফুলে যাওয়া থাইরয়েডের স্পষ্ট লক্ষণ। এটা অনেক সময় শ্বাসকষ্ট বা গলার সমস্যা তৈরি করতে পারে।
এইসব লক্ষণগুলো উপেক্ষা করলে থাইরয়েড সমস্যা আরও বাড়তে পারে এবং এর প্রভাব শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই যেসব লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা পরীক্ষা করানো যেতে পারে। সময় মতো চিকিৎসা শুরু করলে থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব এবং জীবনযাত্রায় স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনা যায়।
সুতরাং, নারীরা যেন নিজের শরীরের যেসব পরিবর্তন লক্ষ্য করেন, সেগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করেন। ওজন বেড়ে যাওয়া, ক্লান্তি, ত্বকের সমস্যা, চুল পড়া, মেজাজ খারাপ, গলার ফুলে যাওয়া কিংবা মাসিকের অনিয়মের মতো যেকোনো পরিবর্তন দেখা দিলে সৎকার পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। থাইরয়েড সমস্যা সঠিক সময়ে ধরা না পড়লে শারীরিক সমস্যা ছাড়াও মানসিক চাপ বেড়ে যেতে পারে, যা সামগ্রিক জীবনযাত্রার মান নষ্ট করে দেয়।
অতএব, থাইরয়েডের উপসর্গগুলো কখনোই ছোট করে দেখা উচিত নয়। সচেতন থাকুন, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান এবং যেকোনো সন্দেহ হলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। স্বাস্থ্য ভালো থাকলে জীবন সুন্দর হয়, তাই নিজের যত্ন নেওয়াটাই সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।
এম.কে.