ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

ব্রেন ফগ? মনে থাকে না কিছু? দোষ হতে পারে সকালের খাবারের!

প্রকাশিত: ০৭:৩৩, ১৭ জুলাই ২০২৫

ব্রেন ফগ? মনে থাকে না কিছু? দোষ হতে পারে সকালের খাবারের!

ছ‌বি: প্রতীকী

অনেক সময় আমাদের মনে হয়, মাথা ভারী হয়ে আছে। ঠিকমতো কিছু ভাবতে পারছি না। মনোযোগ ধরে রাখা যাচ্ছে না, সহজ জিনিস ভুলে যাচ্ছি। এই অবস্থাকে বলা হয় “ব্রেন ফগ”। একে রোগ বলা যায় না, তবে এটি আমাদের দৈনন্দিন কাজে অনেক সমস্যা তৈরি করতে পারে। অনেকেই ভাবেন, হয়তো ঘুম ঠিকমতো হয়নি, মানসিক চাপ বেশি, তাই এমন হচ্ছে। অবশ্যই এগুলোর প্রভাব আছে। কিন্তু অনেক সময় সকালে আমরা যা খাই, তার প্রভাবেও ব্রেন ফগ হতে পারে।

সকালের খাবার আমাদের সারা দিনের মস্তিষ্ক ও শরীরের জন্য জ্বালানি হিসেবে কাজ করে। রাতে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার পর সকালে আমাদের শরীর ও মস্তিষ্ক চায় কিছু পুষ্টিকর খাবার। কিন্তু আমরা অনেক সময় না বুঝেই এমন খাবার খেয়ে ফেলি, যা শরীরের পরিবর্তে ক্ষতি ডেকে আনে। এতে করে মাথা ঝিমঝিম করতে পারে, ঘোলাটে ভাব আসে, মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয় এবং স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে।

প্রথমত, সকালে উচ্চমাত্রার চিনি বা কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার খেলে রক্তে গ্লুকোজ হঠাৎ করে বেড়ে যায়। এতে শরীর এক ধরনের তাৎক্ষণিক শক্তি পায় বটে, কিন্তু সেটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। কিছুক্ষণের মধ্যে সেই গ্লুকোজ আবার কমে গিয়ে শরীরে ও মস্তিষ্কে ক্লান্তি আসতে পারে। অনেকেই সকালে মিষ্টি জাতীয় সিরিয়াল, পেস্ট্রি, কেক, অথবা মিষ্টিযুক্ত চা-কফি খেয়ে থাকেন। এইসব খাবার রক্তে শর্করার ওঠানামা তৈরি করে, যার সরাসরি প্রভাব পড়ে আমাদের ব্রেনের কার্যকারিতায়।

দ্বিতীয়ত, প্রক্রিয়াজাত খাবার (processed food) যেমন প্যাকেটজাত স্ন্যাকস, বেকড ফুড, প্রিজারভেটিভ দেওয়া খাবার ইত্যাদি মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এসব খাবারে ট্রান্স ফ্যাট ও কৃত্রিম উপাদান থাকে, যা মস্তিষ্কে প্রদাহ সৃষ্টি করে। এর ফলে মানসিক স্বচ্ছতা কমে যেতে পারে, সৃষ্টি হয় ব্রেন ফগের।

তৃতীয়ত, সকালে একেবারে না খাওয়াও সমস্যা হতে পারে। অনেকে ব্যস্ততার কারণে বা ওজন কমানোর চিন্তায় সকালের নাশতা বাদ দেন। এতে শরীরে গ্লুকোজের ঘাটতি দেখা দেয়, যা ব্রেনের প্রধান জ্বালানি। ফলে মনোযোগ ধরে রাখা যায় না, মাথা ভার লাগে এবং স্মৃতিশক্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

চতুর্থত, পানিশূন্যতাও ব্রেন ফগের বড় কারণ হতে পারে। রাতে দীর্ঘসময় না খাওয়ার ফলে শরীর হালকা পানিশূন্য অবস্থায় থাকে। যদি সকালে পানি না খাওয়া হয়, তাহলে রক্তচাপ কমে যেতে পারে, যা সরাসরি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। অনেক সময় আমরা কেবল চা বা কফি খেয়ে দিন শুরু করি, কিন্তু এই পানীয়গুলো শরীরকে আরও ডিহাইড্রেট করতে পারে।

তবে চিন্তার কিছু নেই। ব্রেন ফগ কমাতে সকালের খাবারকে একটু পরিবর্তন করলেই অনেক ভালো ফল পাওয়া সম্ভব। সকালে এমন খাবার খাওয়া উচিত যাতে প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং আঁশযুক্ত কার্বোহাইড্রেট থাকে। উদাহরণস্বরূপ, ডিম, ওটস, বাদাম, ফল, দই, সবজি ও হোল গ্রেইন রুটি বা ভাত এসব হতে পারে ভালো বিকল্প। এগুলো ধীরে হজম হয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে মস্তিষ্কে শক্তি সরবরাহ করে।

তাছাড়া, সকালে এক গ্লাস পানি দিয়ে দিন শুরু করা খুবই উপকারী। এটি শুধু শরীর নয়, মস্তিষ্ককেও সতেজ করে তোলে। চা বা কফি খেতে পারেন, তবে সেটি যেন খালি পেটে না হয় এবং পরিমাণে সীমিত হয়।

মনে রাখতে হবে আমাদের খাওয়া খাবারের গুণগত মান শুধু শরীর নয়, মস্তিষ্কের উপরও ব্যাপক প্রভাব ফেলে। সকালে ভুল খাবার খেলে দিনের শুরুতেই মাথা ঝিমঝিম করতে পারে, কাজের প্রতি অনীহা আসতে পারে এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভুলে যেতে পারেন। তাই সচেতনভাবে সকালের খাবার নির্বাচন করলেই ব্রেন ফগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। মনে রাখবেন, সুস্থ মস্তিষ্কের চাবিকাঠি হতে পারে এক বুদ্ধিমানের সকালের নাশতা।

এম.কে.

×