ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

শরীর ক্লান্ত? হতে পারে আয়রন ঘাটতি – জানুন লক্ষণগুলো

প্রকাশিত: ০৭:৩০, ১৭ জুলাই ২০২৫

শরীর ক্লান্ত? হতে পারে আয়রন ঘাটতি – জানুন লক্ষণগুলো

ছ‌বি: প্রতীকী

শরীর যদি প্রতিদিন ক্লান্ত লাগে, এমনকি বিশ্রাম নেওয়ার পরেও সেই ক্লান্তি না কাটে, তাহলে এটি কোনো সাধারণ সমস্যার লক্ষণ নাও হতে পারে। হতে পারে আপনার শরীরে আয়রনের ঘাটতি হয়েছে। আয়রন একটি প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান যা রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে সাহায্য করে। হিমোগ্লোবিন আমাদের রক্তে অক্সিজেন পরিবহন করে থাকে। যদি শরীরে পর্যাপ্ত আয়রন না থাকে, তাহলে রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়, আর এতে করে শরীর ঠিকভাবে অক্সিজেন পায় না। এর ফলে দেখা দেয় বিভিন্ন উপসর্গ, যার মধ্যে ক্লান্তি সবচেয়ে সাধারণ।

আয়রনের ঘাটতির কারণে শরীর দুর্বল ও অবসন্ন হয়ে পড়ে। অনেকে ভাবেন কাজের চাপে বা ঘুম কম হওয়ার কারণে ক্লান্ত লাগছে। কিন্তু যদি এই ক্লান্তি দীর্ঘদিন ধরে থাকে এবং এর সঙ্গে অন্য কিছু লক্ষণও দেখা দেয়, তাহলে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

একটি সাধারণ লক্ষণ হলো নিশ্বাসে কষ্ট। হালকা হাঁটা বা অল্প কাজেও যদি শ্বাসপ্রশ্বাস বেড়ে যায় বা হাঁপ ধরে, তাহলে সেটি আয়রনের অভাবের ইঙ্গিত হতে পারে। কারণ, হিমোগ্লোবিন কমে গেলে শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছায় না, ফলে নিঃশ্বাসে কষ্ট হয়।

আয়রনের ঘাটতি হলে ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় ঠোঁট ও চোখের নিচের চামড়া স্বাভাবিকের তুলনায় সাদা বা বিবর্ণ হয়ে পড়ে। এটি শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়ার স্পষ্ট লক্ষণ।

এছাড়া মাথা ঘোরা, মাথাব্যথা বা মনোযোগে ঘাটতিও হতে পারে আয়রনের ঘাটতির কারণে। রক্তে অক্সিজেন কম থাকলে মস্তিষ্ক ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। এর ফলে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়, স্মরণশক্তি দুর্বল হয় এবং মাথা ঘোরে।

আরও একটি লক্ষণ হলো হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়া। কিছু মানুষ স্বাভাবিক অবস্থাতেও বুক ধড়ফড় অনুভব করেন, যাকে বলে পালপিটেশন। এটি আয়রনের ঘাটতির কারণে হতে পারে, কারণ হৃদপিণ্ড তখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিশ্রম করে রক্তে অক্সিজেন পৌঁছাতে।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে নখ ভেঙে যাওয়া বা নখ পাতলা হয়ে যাওয়া, চুল ঝরার পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, এমনকি মুখে বা জিভে ব্যথা, ফাটা অথবা জ্বালাভাব দেখা যেতে পারে। আয়রনের অভাবে শরীরের কোষগুলো ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না বলে এসব উপসর্গ দেখা দেয়।

গর্ভবতী নারীদের মধ্যে আয়রনের চাহিদা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়। কারণ, গর্ভের শিশুর বিকাশের জন্যও আয়রনের প্রয়োজন হয়। তাই গর্ভাবস্থায় আয়রনের ঘাটতি হলে মায়ের পাশাপাশি শিশুর স্বাস্থ্যের ওপরও খারাপ প্রভাব পড়ে।

শিশুদের মধ্যেও আয়রনের অভাব দেখা দিতে পারে। এতে করে তারা দুর্বল হয়ে পড়ে, পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারে না এবং বেড়ে ওঠার গতি কমে যায়।

অনেক সময় পেটের সমস্যা, যেমন আলসার, অন্ত্রের রোগ বা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলেও শরীরে আয়রনের পরিমাণ কমে যেতে পারে। নারীদের মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ থাকলেও আয়রনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

আয়রনের ঘাটতি নির্ণয়ের জন্য রক্ত পরীক্ষা করা জরুরি। বিশেষ করে হিমোগ্লোবিন ও ফেরিটিন পরীক্ষা করলে বোঝা যায় শরীরে আয়রনের স্তর ঠিক আছে কিনা।

এই ঘাটতি পূরণ করতে প্রথমেই আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। যেমন লাল মাংস, কলিজা, পালং শাক, কলা, ডাল, ডিমের কুসুম, শুকনা ফল (যেমন কিশমিশ), ইত্যাদি। ভিটামিন ‘সি’ আয়রন শোষণে সাহায্য করে, তাই আয়রনের খাবারের সঙ্গে টমেটো, লেবু বা মাল্টার মতো ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উপকারী।

প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আয়রন সাপ্লিমেন্ট খাওয়া যেতে পারে। তবে নিজের ইচ্ছেমতো সাপ্লিমেন্ট খাওয়া উচিত নয়, কারণ অতিরিক্ত আয়রনও শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

শরীর যদি নিয়মিত ক্লান্ত থাকে, তাহলে সেটা অবহেলা না করে কারণ খুঁজে বের করা জরুরি। অনেক সময় ছোট্ট একটি উপসর্গ বড় কোনো ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়। আয়রনের অভাব ঠিক সময়ে ধরতে পারলে সহজেই তা পূরণ করা যায় এবং শরীর আবার চাঙ্গা হয়ে ওঠে। স্বাস্থ্য সচেতন থাকলে জীবনের প্রতিটি দিনই হবে প্রাণবন্ত ও কর্মক্ষম।

এম.কে.

×