ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

সাহিত্য

সাহিত্য বিভাগের সব খবর

একের ভেতরে তিন

একের ভেতরে তিন

বাবলী হকের লেখা ‘অ্যাভিনিউ পার হয়ে’ বইটি পড়ে খুব ভালো লাগল। লেখাগুলোতে মুন্সিয়ানার পরিচয় পেয়ে মুগ্ধ হয়েছি। তিনি পূর্বে দুটো উপন্যাস লিখেছেন। অ্যাভিনিউ পার হয়ে তৃতীয় গ্রন্থ। গ্রন্থটিতে ছোটগল্প, রম্যগদ্য ও ভ্রমণকথা সন্নিবেশিত হয়েছে। তিনটি বিভাগে ১৪টি রচনা অন্তর্ভুক্ত। সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বিভাগের মেলবন্ধনে গ্রন্থটি বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠেছে।  প্রথমে ছোটগল্পগুলোর উপর আলোকপাত করতে চাই। গ্রন্থে সুপ্রাণু হরণ, আঁধারে একা, নিঃশব্দ কড়া নাড়ে, এমএলপিনাক-৬, কোয়ারেটিন- গল্পগুলোতে প্রেম ভালবাসা, দ্রোহ, নারীর ক্ষমতায়নের চিত্র অঙ্কন করেছেন। বর্তমানকাল পর্বে পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন হওয়ার ফলে মানুষের মধ্যে একাকিত্ব, নৈরাশ্য, হতাশা উত্তরোত্তর বৃদ্ধির চিত্র গল্পকার বাস্তবতার আঙ্গিকে গল্পের আকারে তুলে ধরেছেন। গ্রন্থের প্রথম গল্প ‘সুপ্রাণু হরণ’। ভবিষ্যৎ নেই জেনেও সুপ্রাণু অসম লড়াইয়ে নামে। লক্ষ্মীবালা তার স্বামীকে বাঁচাতে ও অনাগত সন্তানের সুরক্ষার জন্য সহোদরকে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। টিকে থাকার খাতিরেই লক্ষ্মীবালা এটা করে। এই গল্পে বাবলী হক লক্ষ্মীবালার ভাই প্রভাংশু, স্বামী সুপ্রাণুর অস্তিত্বের লড়াইয়ের গল্প শুনিয়েছেন। পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসবে এই আশায় শান্তিবাহিনীর সুপ্রাণুরা অস্ত্র জমা দিয়েছিল। ঘর-সংসার করার জন্য সুপ্রাণু ভালোবেসেই লক্ষ্মীবালাকে বিয়ে করে। কিন্তু লক্ষ্মীবালার দাদা প্রভাংশু চাকমা অস্ত্র জমা দেয় না। সেনাবাহিনীর সঙ্গে শান্তিবাহিনীর একাংশ গেরিলা যুদ্ধ চালিয়ে যায়। শান্তিবাহিনী গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বে দ্বিধা বিভক্ত।

সালমান রুশদির সর্বশেষ উপন্যাস ‘ভিক্টোরি সিটি’

সালমান রুশদির সর্বশেষ উপন্যাস ‘ভিক্টোরি সিটি’

ভিক্টোরি সিটি বিশ্বনন্দিত লেখক সালমান রুশদির সর্বশেষ সাহিত্যকর্ম। কথাসাহিত্যের একটি বাস্তব আর উর্বর মস্তিষ্কের চিন্তাপ্রসূত এক কীর্তি, যা পরিচয়, ক্ষমতা এবং ঐতিহ্য এবং শুভ পরিবর্তনের মধ্যে সংগ্রামের জটিলতাগুলোকে খুঁজে বের করে। দক্ষিণ ভারতের একটি ঋদ্ধ শহরের পটভূমিতে রচিত উপন্যাসটি বেশ কজন ব্যক্তির জীবনের প্রাণবন্ত এবং বিশদ সময়চিত্র উপস্থাপন করে। সূক্ষ্ম গদ্য এবং নিপুণ গল্প বলার অলৌকিক কৌশলের মাধ্যমে রুশদি উপন্যাসে একটি পরাবাস্তব এবং স্বপ্নের মতো পরিবেশ তৈরি করেছেন যা একই সঙ্গে লোভনীয় এবং ভয়ঙ্কর, অলৌকিক এবং দৈনন্দিনের সারমর্মকে একই সমগ্রের দুটি অংশ হিসেবে ধারণ করে। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র পাম্পা কাম্পানা একজন অলৌকিক কর্মী, ভাবুক এবং কবি, যার দৃষ্টিশক্তির মর্মান্তিক গতি সে যা চায় তা করতে সক্ষম হয়েছে। এই অনুভূতি বইটির সারমর্মকে ধারণ করে। কারণ রুশদি মিথ, স্মৃতি, ইতিহাস এবং কল্পনাকে এক কামুক এবং সুরেলা কল্পভূমিতে বুনেছেন। তার চরিত্রগুলো জটিল এবং কৌতূহলপূর্ণ। প্রত্যেকেই একটি কল্পনাপ্রবণ বিশ্বে তাদের আপন জায়গা খুঁজে পেতে লড়াই করে।

অরণ্যে নির্জন ঝরাপাতা

অরণ্যে নির্জন ঝরাপাতা

নামের সঙ্গে জীবনের একটা যোগাযোগ আছে। এই যোগাযোগের ব্যাপারটা বাবা জানলে আমার নাম কি নির্জন রাখতেন?  নামটা কেন রেখেছিল বাবা প্রশ্নটার উত্তর আমি পাইনি। নামে কিছু এসে যায়  না যদিও এমনটাই জানতাম কিন্তু এই নামের কারণেই সম্ভবত অকারণ এই গভীর অরণ্যে বসে আছি, যেখানে কেউ কোনোদিন আসেনি এবং কেউ কোনোদিন আসবেও না।  আমি যেখানে বসে আছি সেখানে কি এখন রাত নাকি দিন বোঝার উপায় নেই। এত গভীর আর ঘন সব গাছ, যাদের নাম শহরে বড় হওয়া আমার জানার কোনো সুযোগ নেই সেখানে শিকড়ের কাছে বসে সূর্যের সন্ধান করা যায় না।  সূর্যের সন্ধান করতে আমি চাচ্ছিও না। এই গভীরভাবে বসে থাকা আমাকে এতটাই ক্লান্ত করে তুলেছে যে এক পা হেঁটে কোথাও যেতে মন চাইছে না।  মানুষ কেন খারাপ থাকে? মানুষের ঐ খারাপ থাকার পেছনের যত কারণ তার সবগুলো কারণ থেকে নিজেকে মুক্ত করে আজকের এখানে এসে বসেছি, থেমেছি। আমার ভালো লাগার কথা। ধ্যানে বসে নতুন কিছুর সন্ধান পাওয়ার কথা। তারপরও আমার ভালো লাগছে না।  গাছের ঘনত্বের চাপে যেখানে হাত ঠিকভাবে নাড়ানোই দায় সেখানে বসে বসে ডায়েরি লিখছি। লেখার কারণ সময় কাটানো, লেখার কারণ আমি ধ্যানে বসতে পারছি না, লেখার কারণ এই ডায়েরিটা যদি আমার মতো কারও হাতে কখনো যায়, সে যেন একলা বোধ না করে।   আমি যে এখানে এলাম, এখানেই আসতে চেয়েছি সারাজীবন, এটা এমন একটা জায়গা যার কথা কেউ জানে না, হয়তো কল্পনা করে, হয়তো স্বপ্ন দেখে কিংবা দেখে না, না দেখে, না জেনে তাদের জীবন পার করে ফেলে, আমি সেই জায়গায় বসে আছি, যদিও আমি এর বাস্তব অস্তিত্ব স¤পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলাম না। আমার মনে হতো কিংবা আমি চাইতাম আমি এমন কোনো জায়গায় চলে যাবে যেখানে আশপাশে কোনো প্রাণের চিহ্ন থাকবে না, নাম না জানা অনেক অনেক বড় গাছ থাকবে, তার মাঝ দিয়ে হাঁটাচলার বুনো পথ। একটা ছোট্ট ঘরের কথাও ভাবতাম, বনের মাঝে হঠাৎ ফাঁকা জায়গা কিন্তু আকাশ দেখা যায় না, পাতা ছড়িয়ে আলোর পথ বন্ধ করে রাখবে এমন। আমি ঠিক তাই পেয়েছি।  আমি চাইতাম আমার ক্ষুধা লাগবে না, আমার চুমুর প্রতি তৃষ্ণা থাকবে না, শরীরের প্রতি আকর্ষণ থাকবে না, আমি তাই পেয়েছি। কেন চেয়েছি? কারণ সুখকে স্থায়ী করতে চেয়েছিলাম। আমরা জানি, চাহিদাই তৈরি করে কষ্ট। যদি চাহিদা না থাকে, যদি এই মেকানিক্যাল পৃথিবীতে ছুটে চলা না থাকে, তবে ঐ সুখকে আজীবনের মতো নিজের করে নিতে আর ঠেকাবে কে?  আমি কি এখন সুখী? সম্ভবত না। সুখের সঙ্গে ভালো লাগার স¤পর্ক আছে। আমার এখন ভালো লাগছে না। আমার মনে হচ্ছে আমার নাম নির্জন কেন রাখা হলো? বন্ধুরা অবশ্য আমাকে এড়িয়েই চলত। পাগলও বলত। এ কথা সত্যি আমি পাগল না হলেও বোকা ছিলাম। না হলে এসব ফ্যান্টাসির কথা কি মানুষকে বলে বেড়াতাম?  ভার্সিটিতে আমার নামও ছিল একটা। দ্য সেক্সলেস ম্যান। আমি যৌনতা থেকে মুক্তি চাইতাম কিন্তু যৌনতা আমার প্রিয় ছিল। পাতার সঙ্গে স¤পর্কের পর সেক্স আরও প্রিয় হয়ে ওঠে। অথচ তারপরও বন্ধুদের কাছে আমি ছিলাম সেক্সলেস ম্যান। ওরা আমাকে কত ভুলটাই না জানত!

নাটকের সংলাপ ভাবনা ও শিল্পগুণ

নাটকের সংলাপ ভাবনা ও শিল্পগুণ

অন্যান্য সাহিত্য থেকে নাটকের আঙ্গিক ও গঠনকৌশল সম্পূর্ণ আলাদা। নাটকের সঙ্গে পাঠক বা দর্শক ও শ্রোতার সম্পর্ক সরাসরি ও প্রত্যক্ষ। ফলে নাটকের ভাষা ও ভাবনা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের দাবি রাখে। প্রতিটি নাটকে প্রধান চারটি উপাদান থাকে। এগুলো হচ্ছে- ১. কাহিনী বা বিষয়, ২. চরিত্র, ৩. সংলাপ, ৪. মঞ্চ সজ্জা বা পরিবেশ। একজন নাট্যকারকে এ চারটি উপাদানের প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রেখে নাট্যভাবনাকে এগিয়ে নিতে হয়। প্রতিটি নাটকে একটি নির্দিষ্ট কাহিনী থাকে। মানবজীবন মূল অবলম্বন হলেও মানুষের সম্পূর্ণ জীবন নাটকে উপস্থাপন করা যায় না। নাট্যকারকে সব সময় মনে রাখতে হয়, নাটক নির্দিষ্ট চরিত্রের সংলাপ বর্ণনায় বা অভিনেতা-অভিনেত্রীর অভিনয়ের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে হয়।

মীনা অ্যালেক্সান্দারের কবিতা

মীনা অ্যালেক্সান্দারের কবিতা

২০১৩ সালের ৩০ মে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল বিজয়ের শত বার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠান হয়। বিখ্যাত ভারতীয়-মার্কিন কবি মীনা অ্যালেক্সান্ডার সেদিন শুনিয়েছিলেন শৈশবে কেরালায় ডাকঘর নাটকে অমলের চরিত্রে অভিনয়ের কথা। মীনা অ্যালেক্সান্ডার জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ভারতের আল্লাহাবাদে। তার বাবা সরকারি চাকরি করতেন আবহাওয়াবিদ হিসাবে। তিনি সদ্য স্বাধীন সুদানে আসেন সপরিবারে চাকরি নিয়ে। জাহাজে মীনার পঞ্চম জন্মদিন পালন করা হয়।  মীনা অ্যালেক্সান্ডার ১৯৬৯ সালে খার্তুম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি এবং ফরাসি ভাষায় ¯œাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন ইংরেজিতে ১৯৭৩ সালে ইংল্যান্ডের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তিনি ভারতে ফিরে আসেন এবং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় এবং হায়দ্রাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। ভারতে থাকাকালীন ডেভিড লেলিভেল্ডের সঙ্গে দেখা হয়, একজন ইতিহাসবিদ যিনি মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণা বই লেখার জন্য ছুটিতে এসেছিলেন। তারা ১৯৭৯ সালে বিয়ে করেন এবং নিউইয়র্ক সিটিতে স্থায়ী হন। মীনা অ্যালেক্সান্ডারের লেখা মালয়ালম, হিন্দি, জার্মান, সুইডিশ, আরবি এবং স্প্যানিশ ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তিনি গুগেনহেইম ফাউন্ডেশন, ফুলব্রাইট ফাউন্ডেশন, রকফেলার ফাউন্ডেশন, আর্টস কাউন্সিল অফ ইংল্যান্ড, সাউথ এশিয়ান লিটারারি অ্যাসোসিয়েশন এর মতো প্রতিষ্ঠান থেকে পুরস্কার পেয়েছেন। মীনা অ্যালেক্সান্ডার ব্রাউন, কলাম্বিয়া, সোরবোন এবং হায়দ্রাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। দীর্ঘদিন তিনি হান্টার কলেজ এবং নিউইয়র্কের সিটি ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করেন। তার প্রকাশিত কাব্য গ্রন্থের সংখ্যা আট। মার্কিন কবি ইউসেফ কমুনিয়াকা কবি মীনা আলেকজান্ডারকে প্রশংসা করে বলেছেন, তিনি একজন সত্য-বক্তা যিনি জানেন ভাষাকে তার ইচ্ছামতো রূপ দিতে। তার গদ্য এবং কবিতায় নারীবাদ, উত্তর ঔপনিবেশিকতা, অভিবাসন ও স্মৃতি স্থান পেয়েছে। তার কবিতায় পশ্চিমা রোমান্টিসিজমের সঙ্গে ভক্তি ও সুফিজমের প্রভাব দেখতে পাওয়া যায়। মীনা অ্যালেক্সান্ডার এন্ডোমেট্রিয়াম ক্যান্সারে মারা যান ৬৭ বছর বয়সে।  মীনা আলেকজান্ডারের গীতিকবিতা ‘গঁংব’ প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল তার কবিতা সংকলন ‘ওষষরঃবৎধঃব ঐবধৎঃ’ এ । বইটি প্রকাশিত হয়েছিল ২০০২ সালে ও একই বছরে পেন ওপেন বুক পুরস্কার পায়। ভারতের কেরালায় থাকার সময় তার শৈশবের স্মৃতির আলেখ্য এই কবিতা।