ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩১ ভাদ্র ১৪৩১

সাহিত্য

কবিতা

কবিতা

মনে রাখব- জবা ফুল কতটা প্রগাঢ় লাল। কীভাবে চোখের মধ্যে একরাশ গতকাল, বারুদমাখা হেলিকপ্টার নিয়ে মাতাল মাতাল ক্রোধোন্মত্ত এক আকাশসুদ্ধ ঢুকে গেল, তখনো ছিলাম বেঁচে, বলো এবং নেচে নেচে নেচে ঝাঁঝরা ঝাঁঝরা...গুলি... ঘরবাড়ি ঘুলঘুলি সব ফুঁড়ে ছিঁড়ে ছুড়ে কীভাবে খুলির নিচে পাক খায়Ñ বেঁচে তো ছিলাম হায়, মরে গিয়েও জিন্দা ছিলাম। তখনো মাথার মধ্যে গাছের পাতার মধ্যে সমস্ত মুখের মধ্যে যে চিৎকার ছুটে বের হতে চেয়েছিল, মুহূর্তে যাদের পরিচয় বদলে দেবার চেষ্টা হয়েছিল, ঝঞ্ঝার আবেগে যারা যারা হয়েছে পাগলপারা, বহু পরে আকাশে ঘা মেরে হয়ে গেল কারা দূর আকাশের তারাÑ মনে রাখব সব, সেই সবগুলো জ্বললে ফুঁ সমস্বরে কী গভীর হুলুস্থুল। ও সবুজ বাগাছ, রক্তে আমার ধারালো কাচÑ তোমার পরাগায়ন আর পাপড়িতে আমরাই লাল... ভুলব না বলে ফুটে আছি ভোর থেকে প্রগাঢ় সকাল ! 

সাহিত্য বিভাগের সব খবর

বাংলা একাডেমির নতুন মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ আজম

বাংলা একাডেমির নতুন মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ আজম

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করলেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজম। রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টায় একাডেমির শহীদ মুনীর চৌধুরী সভাকক্ষে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে নবনিযুক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজমকে স্বাগত জানান একাডেমির সচিব মোহা. নায়েব আলী, একাডেমির পরিচালক ও উপপরিচালকরা। বাংলা একাডেমি আইন, অন্তর্বর্তী সরকার ২০১৩ এর ধারা-২৬(২) এবং ধারা-২৬(৩) অনুযায়ী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজমকে গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে পরবর্তী ৩ (তিন) বছরের জন্য বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে নিয়োগ প্রদান করে। বাংলা একাডেমির নবনিযুক্ত মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ আজম বলেন, বাংলা একাডেমির প্রতি বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা অপরিসীম। গণঅভ্যুত্থানের পর একাডেমিকে ঘিরে এদেশের মানুষের নতুন আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। আশা করি, সবার সমবেত সংযোগ ও সক্রিয়তায় আমরা বাংলা একাডেমিকে গবেষণামূলক জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে রূপ দিতে সক্ষম হবো। অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমির সচিব মোহা. নায়েব আলী বলেন, আমরা আশা করি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজমের দক্ষ ও সৃজনশীল নেতৃত্বে বাংলা একাডেমি তার প্রতিষ্ঠার তাৎপর্য এবং উদ্দেশ্যকে সফল করতে সক্ষম হবে।

মর্গ স্ট্রিটের হত্যা রহস্য

মর্গ স্ট্রিটের হত্যা রহস্য

১৮ সালের বসন্তকাল আর গ্রীষ্মের কিছুটা সময় আমি প্যারিসে কাটিয়েছি। সেই সময় মঁসিয়ে অগাস্ট দুপঁ নামে এক যুবকের সঙ্গে পরিচয় হয়। ভালো পরিবারের সন্তান এই যুবক, ভাগ্যের ফেরে এখন আর্থিক দুর্দশায় পড়েছে। উত্তরাধিকার সূত্রে বাপের কাছ থেকে কিছু সম্পত্তি পেয়েছিল দুপঁ- পাওনাদারের দেনাটেনা মিটিয়ে এখনো অল্প কিছু সম্পত্তি রয়ে গেছে। তাই দিয়ে কোনোমতে দুপঁর চলে যায়। ওর একমাত্র বিলাসিতা বই কেনা, আর প্যারিসে তো বইয়ের কোনো অভাব নেই।  দুপঁর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয় মমাঁর্ত স্ট্রিটের লাইব্রেরিতে। একই বই খুঁজছিলাম আমরা দুজনÑদুর্লভ একটা বই, সেই থেকে পরিচয়। এরপর প্রায়ই দেখা করতাম আমরা। দুপঁর পারিবারিক ইতিহাস জেনে ওর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলাম আমি। ওর ব্যাপক পড়াশোনা দেখেও মুগ্ধ হয়েছিলাম। আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।  শেষে আমরা ঠিক করলাম দুজনে একসঙ্গে থাকব। আমার আর্থিক অবস্থা দুপঁর চেয়ে কিছুটা ভালোÑ আমি থাকি পুরনো আমলের একটা পোড়ো বাড়িতেÑ নানারকম ভুতুড়ে গল্প শোনা যায় বাড়িটাকে ঘিরে, তবে সেসব পাত্তা দিই না আমি। এই ভুতুড়ে বাড়িতেই আমরা একসঙ্গে থাকতে শুরু করলাম।  আমাদের প্রতিদিনের রুটিন ছিল অদ্ভুতÑ লোকে শুনলে হয়তো ভাববে পাগলের বাস এই বাড়িতে। বাড়িটা নির্জন এলাকায়। কেউ আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসতো না। আমার বন্ধুরাও জানতো না আমি এখানে থাকি। ভোরের আলো ফুটে উঠলেই আমরা ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে মোমবাতি জ্বালিয়ে দিতাম, তারপর আধো আলো আধো অন্ধকারে যে যার মতো লেখাপড়ায় ডুবে যেতাম কিংবা গল্প-আড্ডায় মেতে উঠতাম। 

কারফিউ

কারফিউ

জীবনানন্দ দাশ যেমন আক্ষেপ আর এক বুক হাহাকার নিয়ে বলেন- ‘জীবন বড়ই বিচিত্র। সন্ধ্যা কাটে না অথচ দিব্যি বছর কেটে যাচ্ছে!’ কিংবা টিএস এলিয়ট যখন বলেন-  ‘April is the cruelest month, breeding  lilacs out of the dead land, mixing memory and desire, stirring dull roots with spring rain’ তখন মনে হয় এগুলো আমারই আক্ষেপ, আমারই হাহাকার! একটা ভয়াবহ বন্ধ্যা সময় বয়ে যাচ্ছে খরস্রোতা নদীর মতো এই ক’দিন ধরে। সারা দেশ উত্তাল সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের কোটাবিরোধী আন্দোলনে। দুই শতাধিক কিশোর-তরুণের তাজা প্রাণ গুলিতে ঝরে গেছে। চারদিকে জ্বালাও-পোড়াও ধ্বংসযজ্ঞের পর এখন সারাদেশে কার্ফু চলছে, পথে পথে সেনাবাহিনী বন্দুক উঁচিয়ে টহল দিচ্ছে, দুষ্কৃতকারীদের দেখামাত্রই গুলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। এ রকম একটা অগ্নিগর্ভ অবস্থা দেশবাসী সর্বশেষ কবে দেখেছে কেউই সঠিকভাবে এক বসাতে মনে করতে পারছে না।

গবেষণা ও প্রবন্ধ-সাহিত্য

গবেষণা ও প্রবন্ধ-সাহিত্য

সাহিত্য ও শিল্প কিংবা ইতিহাস ও দর্শন সম্পর্ক এ-যুগে বিদ্বানদের ধারণা বদলে গেছে। আগেকার যুগে যে- কিছু সুন্দর করে আঁকলে-শিখলেই শিল্প বা সাহিত্যরূপে গৃহীত হতো। তেমনি তথ্যের সমাবেশে হতো ইতিহাস এবং তত্ত্বের উপস্থাপনায় হতো দর্শন। এখনকার যুগে ঘনিষ্ঠ জীবন-প্রতিবেশের নিরিখেই এগুলোর গুণাগুণ ও উপযোগ নির্ধারিত হয়। যেহেতু মানুষ তার সমকালীন স্বদেশে আনন্দ ও যন্ত্রণা এবং সম্পদ ও সমস্যা নিয়েই বাঁচে সেজন্যে তার সাহিত্যে ও শিল্পে কিংবা ইতিহাসে ও দর্শনে দেশ-কাল-সমাজ-প্রতিবেশপ্রসূত চেতনার স্বরূপ বিধৃত হবে, পাঠক-দর্শক এই প্রত্যাশাই রাখে। যদি সে প্রত্যাশা পূরণ না হয়, তাহলে রচিত শিল্প-সাহিত্য-ইতিহাস-দর্শন উপযোগ হারায়। কেননা উপযোগই সব সাধনার ও গুরুত্ব নিরূপণের মাপকাঠি। গবেষণাও আজ আর তথ্যের উদঘাটনে ও সমাবেশে সমাপ্ত নয়। দেশগত কালিক জীবন প্রতিবেশের উন্মোচন ও বিশ্লেষণই গবেষকের লক্ষ্য। তাই ইতিহাসের ক্ষেত্রে কেবল বাহ্য ঘটনা কিংবা আচরণ ও তার ফলাফলই শুধু জ্ঞাতব্য নয়।