ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২

রাতে ঘাম হলে সাবধান! এটা হতে পারে ক্যান্সারের উপসর্গ

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ১৯ জুলাই ২০২৫

রাতে ঘাম হলে সাবধান! এটা হতে পারে ক্যান্সারের উপসর্গ

ছ‌বি: প্রতীকী

রাতে ঘাম হওয়া আমাদের অনেকেরই পরিচিত একটি বিষয়। গরমে বা ঘন কম্বলের নিচে ঘুমালে ঘাম হওয়া স্বাভাবিক। তবে কোনো কারণ ছাড়াই যদি রাতে ঘুমের মধ্যে অতিরিক্ত ঘাম হতে থাকে, তাহলে সেটি হতে পারে একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, নিয়মিতভাবে রাতের বেলা অতিরিক্ত ঘাম হওয়া ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণও হতে পারে। তাই বিষয়টিকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়।

রাতে ঘাম হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। হরমোনের তারতম্য, ইনফেকশন, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, কিংবা মানসিক চাপের কারণেও এমন হতে পারে। তবে যদি ঘন ঘন এবং প্রচুর ঘাম হয়, যা বিছানার চাদর বা পোশাক ভিজিয়ে দেয়, তাহলে তা অবশ্যই দুশ্চিন্তার বিষয়। বিশেষ করে যদি তার সঙ্গে ওজন কমে যাওয়া, শরীরে দুর্বলতা, অরুচি, জ্বর বা কাশি যুক্ত হয়, তাহলে ক্যান্সারের মতো রোগের আশঙ্কা থেকেই যায়।

অনেক সময় ক্যান্সার শরীরে তৈরি হওয়ার পর ইমিউন সিস্টেম তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এই প্রতিরোধ গঠনের প্রক্রিয়ায় শরীরের তাপমাত্রা বাড়ে এবং শরীর নিজেই ঘাম দিয়ে সেই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। ফলে রাতে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে। বিশেষ করে লিম্ফোমা বা রক্তের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এই উপসর্গটি অনেক সময় প্রথমেই দেখা যায়। এছাড়াও লিউকেমিয়া, থাইরয়েড ক্যান্সার বা শরীরের অন্য কোনো অংশে টিউমার থাকলেও এমন সমস্যা দেখা দিতে পারে।

রাতে ঘাম হওয়া ক্যান্সারের একমাত্র উপসর্গ নয়, তবে এটি প্রাথমিক উপসর্গগুলোর মধ্যে একটি হতে পারে। তাই বারবার এমন হলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক রোগীর শরীরের অন্যান্য উপসর্গ পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর নিশ্চিত করতে পারেন আসলে কোনো জটিল রোগ আছে কিনা। যদি সন্দেহ থাকে, তাহলে রক্ত পরীক্ষা, এক্স-রে, সিটি স্ক্যান বা বায়োপসির মতো পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা হয়।

অনেকে রাতে ঘাম হওয়াকে অযথা ভয় পান না। তারা ভাবেন, এটি আবহাওয়ার কারণে বা কম্বলের জন্য হচ্ছে। কিন্তু যদি কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ ছাড়াই দিনের পর দিন ঘুমানোর সময় শরীর ঘেমে যায় এবং সেই ঘাম অতিরিক্ত হয়, তাহলে অবহেলা করা ঠিক নয়। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়লে চিকিৎসা সহজ হয় এবং রোগীর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে। বিশেষ করে ক্যান্সারের মতো জটিল রোগ যদি প্রাথমিক স্তরেই ধরা পড়ে, তাহলে অনেক ক্ষেত্রেই তা সফলভাবে চিকিৎসা করা যায়।

অন্যদিকে, রাতে ঘাম হওয়ার পাশাপাশি যদি শরীরে গাঁট ফোলা, অল্পতেই ক্লান্তি, অকারণে ওজন কমে যাওয়া, হজমে সমস্যা বা ত্বকে ফুসকুড়ির মতো সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে তা আরও বেশি উদ্বেগের বিষয় হয়ে ওঠে। এমন উপসর্গগুলো একসঙ্গে থাকলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

এমনকি কিছু ওষুধ খাওয়ার কারণেও রাতে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে। যেমন—অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট, স্টেরয়েড বা হরমোন জাতীয় ওষুধ। তবুও এমন কোনো ওষুধ না খেয়েও যদি এই উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই পরীক্ষা করে নেওয়া ভালো।

সাধারণত পুরুষদের তুলনায় নারীদের ক্ষেত্রে হরমোনগত কারণে মাঝেমধ্যে এমন ঘাম হওয়া দেখা যায়, বিশেষ করে মেনোপজের সময়। কিন্তু তা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং অন্য কোনো উপসর্গ যুক্ত হয়, তাহলে তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা প্রয়োজন।

শরীরের যেকোনো অস্বাভাবিকতা উপেক্ষা না করাই ভালো। রাতে ঘাম হওয়া যদি আপনার দৈনন্দিন জীবনে সমস্যা তৈরি করে বা তা নিয়মিত হতে থাকে, তাহলে তা হালকাভাবে না দেখে একজন চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। মনে রাখবেন, সময়মতো সচেতনতা এবং সঠিক চিকিৎসাই পারে জীবন বাঁচাতে। যত দ্রুত রোগ ধরা পড়বে, তত দ্রুতই সম্ভব হবে চিকিৎসা শুরু করা। রাতের ঘাম হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা, যেটা আপনার শরীর আপনাকে পাঠাচ্ছে—সেটা বুঝে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

এম.কে.

×