ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২

শেরপুরে প্রথমবার বিড়ালের সিজার! জন্ম নিল চার ফুটফুটে বাচ্চা

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১৯ জুলাই ২০২৫

শেরপুরে প্রথমবার বিড়ালের সিজার! জন্ম নিল চার ফুটফুটে বাচ্চা

ছবি: সংগৃহীত

শেরপুরে প্রথমবারের মতো সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে জন্ম নিল পার্শিয়ান জাতের চারটি সুস্থ বিড়ালছানা। শহরের সদবরখিলা এলাকায় অবস্থিত ভেট এন্ড ফেট মেডিকেল সেন্টারে এই সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বিড়াল ছানাগুলোর সঙ্গে মায়ের জীবনও রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।

গত ১৩ জুলাই রাতে লিতাবাড়ি উপজেলার একজন ইউপি চেয়ারম্যানের প্রিয় পোষ্য পার্শিয়ান জাতের একটি বিদেশী বিড়াল দীর্ঘ সময় ধরে প্রসব যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছিল। স্বাভাবিকভাবে প্রসব করতে না পারায় গভীর রাতে তাকে শেরপুর শহরের প্রাণী চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়।

রাতভর পরীক্ষানিরীক্ষা শেষে অভিজ্ঞ ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মোহাম্মদ সুজন মিয়া জানান, স্বাভাবিক প্রসব অসম্ভব। এরপর দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে অপারেশন শুরু করা হয়। দুই থেকে তিন ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অস্ত্রপচারের পর জন্ম নেয় চারটি সুস্থ ও সবল বিড়ালছানা।

ডা. সুজন মিয়া বলেন, “সি-সেকশন এটা মানুষ এবং প্রাণীতে একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। যদি বাচ্চার পজিশন ঠিক না থাকে, কিংবা প্রসবজনিত জটিলতা দেখা দেয়, তাহলে মা ও সন্তানের জীবন বাঁচাতে এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। উন্নত বিশ্বে বহু আগেই প্রাণীদের ক্ষেত্রেও সিজারিয়ান প্রচলিত হয়েছে। বাংলাদেশেও এখন দক্ষ সার্জনদের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে।”

তিনি জানান, “আমাদের নিয়ামুল কাউসার নামের একজন ইউপি চেয়ারম্যানের বিড়ালটি দুই-তিন ঘণ্টা ধরে প্রসব করতে পারছিল না। তখন তিনি প্রাইভেট কারে করে বিড়ালটিকে নিয়ে আসেন। অনেক সময় দেখা যায় জরায়ু পেঁচিয়ে ডেলিভারি বন্ধ হয়ে যায়, যেটিকে ডিস্টকিয়া বলে। আমরা সিজারিয়ানের মাধ্যমে সফলভাবে মা ও বাচ্চাদের জীবন রক্ষা করতে পেরেছি।”

অপারেশন, ওষুধ এবং চিকিৎসা ব্যয়ে মোট খরচ হয় ৬ হাজার টাকা। ১০ দিন পর বিড়ালটির সেলাই খুলে ফেলা হবে। এই সাফল্যে পরিবারে যেমন খুশির আমেজ, তেমনি এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে ব্যাপক কৌতূহল।

ডা. সুজন আরও বলেন, “গরু, ছাগল, কুকুর, বিড়ালসহ সব ধরনের প্রাণীর চিকিৎসা, ভ্যাকসিন ও অস্ত্রোপচার এখন আধুনিক পদ্ধতিতে করা হচ্ছে। ফলে শেরপুর ছাড়াও আশপাশের জেলা থেকেও মানুষ আসছেন তাদের প্রিয় পোষ্য প্রাণীদের চিকিৎসা করাতে।”

তিনি জানান, সরকারি হাসপাতালগুলোতে ছুটির দিনে একটি মাত্র সার্জনের পক্ষে সেবা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। এ কারণে সাধারণ মানুষের বিশেষ করে দরিদ্র শ্রেণির জন্য সহজলভ্য চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে তিনি নিজ উদ্যোগে এই প্রাণী চিকিৎসা ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার ভাষায়, “অনেক সময় মানুষের প্রাণীগুলো চিকিৎসা না পেয়ে মারা যেত। তাই আমি চেয়েছি শেরপুরে এমন একটা প্রতিষ্ঠান থাকুক যেখানে প্রাণীরাও পাবে সময়মতো ও মানসম্মত চিকিৎসা।”

শেখ ফরিদ

×