ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২

শ্যামপুর সুগার মিল: কর্মমুখর প্রাঙ্গণ, এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে!

মোঃ সুজা উদ্দিন, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, রংপুর

প্রকাশিত: ১০:১২, ১৯ জুলাই ২০২৫

শ্যামপুর সুগার মিল: কর্মমুখর প্রাঙ্গণ, এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে!

ছবি: জনকণ্ঠ

এক সময়ের কর্মচঞ্চল রংপুর জেলার একমাত্র কৃষিভিত্তিক ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান শ্যামপুর সুগার মিল এখন নীরব, নিষ্প্রাণ। বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নে শ্যামপুর রেল স্টেশনের পাশে প্রায় ৭৮ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এই চিনিকলটি গত কয়েক বছর ধরে অচল অবস্থায় পড়ে আছে। লোকসান এবং আধুনিকায়নের অজুহাতে বন্ধ করে দেওয়া এই মিলটির ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত, যা স্থানীয় অর্থনীতি এবং হাজার হাজার মানুষের জীবন-জীবিকাকে গভীর সংকটে ফেলেছে।

প্রতিষ্ঠা ও সোনালী অতীত
১৯৬৫ সালে শ্যামপুর সুগার মিলের নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ১৯৬৭ সালে তা শেষ হয়। ১৯৬৭-৬৮ সাল থেকে এটি চিনি উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করে। স্বাধীনতা লাভের পর, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার এই প্রতিষ্ঠানটিকে রাষ্ট্রায়ত্ত ঘোষণা করে। এক সময় এই মিলটির বার্ষিক চিনি উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১০,১৬১ মেট্রিক টন। এটি শুধু রংপুরের নয়, উত্তরবঙ্গের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল এবং হাজার হাজার মানুষের জীবিকার উৎস হিসেবে কাজ করত।

বর্তমান পরিস্থিতি ও উদ্বেগ
২০২০ সালে লোকসানের কারণ দেখিয়ে মিলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে এটিকে পুনরায় চালু করার কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। সরেজমিনে দেখা গেছে, কারখানার টিনের চালে অসংখ্য ছিদ্র তৈরি হয়েছে, কোথাও কোথাও পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। অধিকাংশ যন্ত্রপাতিতে মরিচা পড়েছে এবং কিছু কিছু যন্ত্রপাতি বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষায় পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। এক সময়ের কর্মমুখর শ্যামপুর সুগার মিলের বর্তমান চিত্র অত্যন্ত নাজুক। পুরো কারখানা ঢেকে গেছে ঝোপঝাড় ও জঙ্গলে, আর অসংখ্য যানবাহন অলস পড়ে থাকতে থাকতে নষ্টের পথে। রাতের আঁধারে বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরির ঘটনাও ঘটছে।

প্রভাব ও প্রত্যাশা
চিনিকল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শুধু স্থানীয় অর্থনীতিই সংকটে পড়েনি, লক্ষাধিক মানুষের জীবন ও জীবিকাও অনিশ্চয়তায় পড়েছে। মিলটির সাবেক শ্রমিক এবং বিভিন্ন কৃষক সংগঠনের নেতারা দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, অন্তর্বর্তী সরকার সম্ভাবনাময় এই মিলটি পুনরায় চালু করবে এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনায় এটি লাভজনকভাবে চলবে। তারা মনে করেন, এই মিলটি পুনরায় চালু হলে এটি স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার পাশাপাশি কৃষক ও শ্রমিকসহ অনেক মানুষের জীবনে সমৃদ্ধি এনে তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে।

শ্রমিক নেতাদের অভিযোগ, চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণ করতেই বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তৎকালীন সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে পরিকল্পিতভাবে এসব চিনিকল বন্ধ করেছে, যার প্রভাব পড়েছে ভোক্তা পর্যায়ে। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব চিনিকল চালুর উদ্যোগ নেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এক সময়কার উত্তরের অর্থনীতির বড় শক্তি ষাটের দশকে গড়ে ওঠা এই কারখানা এখন ধ্বংসের মুখে। শ্যামপুর সুগার মিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণই নয়, এর সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার মানুষের স্বপ্ন এবং ভবিষ্যতের প্রশ্নও।

মুমু ২

×