
রাতে ঘুমের সমস্যা
সপ্তাহের অধিকাংশ দিনেই অনেকেই ঘুমের আগে নানাভাবে শারীরিক পারিশ্রম করেন, যাতে রাতে ঘুম ভালো হয়। এ জন্য কেউ জিমে গিয়ে দৌঁড়ান, কেউ অন্যভাবে শরীরচর্চা করেন। তবে নতুন গবেষণা বলছে, ম্যারাথন দৌড়ানো কিংবা জিমে যাওয়া ছাড়াই ভালো ঘুম সম্ভব।
সংবাদমাধ্যম সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিএমজে এভিডেন্সভিত্তিক মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত ২২টি এলোমেলো ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের একটি নতুন বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে। বিশ্লেষণ অনুযায়ী, কম তীব্রতার, কম প্রভাবশালী ব্যায়াম ঘুমের উন্নতি করতে পারে এবং অনিদ্রার লক্ষণ কাটিয়ে তুলতে পারে। পরীক্ষাগুলোর মধ্যে ১৩টি নন-ফার্মাসিউটিক্যাল অনিদ্রার চিকিৎসা অন্তর্ভুক্ত ছিল। এর মধ্যে সাতটি ফিটনেস পদ্ধতি, আকুপাংচার, ম্যাসাজ এবং জ্ঞানীয় আচরণগত থেরাপি অন্তর্ভুক্ত ছিল।
গবেষণার প্রথম লেখক এবং নানজিং ইউনিভার্সিটি অব চাইনিজ মেডিসিনের ক্লিনিক্যাল মেডিসিনের ডক্টরেট ছাত্র ঝি-জুন বু বলেছেন, ক্রমবর্ধমান প্রমাণ থেকে এটা স্পষ্ট যে, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম শুধু শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে না, বরং ঘুমের মানও উন্নত করে। তবে তুলনার অভাব রয়েছে যে, অধিকাংশ বিদ্যমান গবেষণা শুধু এক ধরনের ব্যায়ামের ওপর দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
গবেষণাটি অনিদ্রা দূরীকরণে চিকিৎসার সম্ভাব্য সাশ্রীয়, ওষুধমুক্ত বিকল্প উপায়গুলোর দিকে প্রভাবিত করে এবং প্রতিটি ব্যায়ামের নানাদিক সুবিধাগুলো বুঝতে পারা ও পদক্ষেপ নিতে সহায়ক হতে পারে বলে জানিয়েছেন ঝি-জুন বু।
অনিদ্রার কারণ কী, কীভাবে এর চিকিৎসা হয়:
ঘন ঘন অস্থিরতা কিংবা হতাশার সঙ্গে লড়াই করা স্বাভাবিক বিষয়। মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের ২০২০ সালের এক জরিপ অনুযায়ী, প্রায় ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ আগের মাসে (জরিপের আগের মাস) অধিকাংশ দিন বা প্রতিদিন ঘুমানোর সময় সমস্যার কথা জানিয়েছেন।
সেন্ট লুইস ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের ইন্টারনাল মেডিসিন এবং পেডিয়াট্রিক্সের অ্যাডজাঙ্কট অধ্যাপক এবং আমেরিকান একাডেমি অব স্লিপ মেডিসিনের মুখপাত্র ডা. শালিনী পারুথি বলেন, ক্লিকিন্যাল প্রক্রিয়ায় অনিন্দ্রা তখনই নির্ণয় করা হয়, যখন কারও ঘুমাতে সমস্যা হয় এবং সপ্তাহে তিনবার বা এরও বেশি সময় ধরে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। বংশগত কিংবা পরিবেশগত কারণে দীর্ঘমেয়াদী অনিদ্রার সমস্যা হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে মানসিক চাপ, খারাপ ঘুমের অভ্যাস, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, ওষুধ বা স্লিপ অ্যাপনিয়ার মতো অন্যান্য ঘুমের সমস্যা।
অনিদ্রার চিকিৎসার প্রথম ধাপ হচ্ছে জ্ঞানীয় আচরণগত থেরাপি বা সিবিটি, যা একটি মনস্তাত্ত্বিক পদ্ধতি যা ঘুমের আশপাশে রোগীদের চিন্তাভাবনা, অনুভূতি ও আচরণকে সামঞ্জস্য করার জন্য কাজ করে।
ডা. শালিনী পারুথি বলেন, কোনো ক্লিনিক্যাল নির্দেশনায় ব্যায়ামকে অনিদ্রার জন্য মূল সমাধান হিসেবে কখনো বিবেচনা করা হয় না। এরপরও অন্যান্য পদ্ধতির পাশাপাশি প্রতি সপ্তাহে ১৫০ মিনিট মাঝারি বা তীব্র শারীরিক কার্যকলাপ করার পরামর্শ এ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের। তবে এ জন্য অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যায়াম করতে হবে।
ভালো ঘুমের জন্য তিনটি ব্যায়াম করা যেতে পারে। ঝি-জুন বু-এর দল বিশ্লেষণ করা র্যান্ডমাইজ ক্লিনিক্যাল ট্রয়ালগুলোর মধ্যে অনিদ্রার জন্য স্বতন্ত্র চিকিৎসা হিসেবে তিনটি শারীরিক কার্যকলাপের কার্যকারিতার কথা জানিয়েছেন। সেসব সম্পর্কে এবার জেনে নেয়া যাক-
যোগব্যায়াম:
এক থেকে চার মাস সপ্তাহে দুই থেকে ছয়বার ৪৫ থেকে ৬০ মিনিট যোগব্যায়াম করলে মোট ঘুমের সময়কাল প্রতি রাতে দুই ঘণ্টা বৃদ্ধি পায় এবং ঘুম থেকে উঠার পর জেগে থাকার ঘটনা এক ঘণ্টা কমে যায়। যোগব্যায়াম গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস, শারীরিক সচেতনতা ও শান্ত মানসিক অবস্থাকে উৎসাহিত করে ভালো ঘুমের উন্নতি করতে পারে। যা অনিদ্রার দুটি সাধারণ কারণ মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে সহায়তা করে।
তাই চি:
ক্লিনিক্যালি মানসম্মত স্কোরিং সিস্টেমের ওপর ভিত্তি করে দেখা গেছে যে, তিন থেকে চার মাস ধরে সপ্তাহে দুই থেকে তিনটি ৪৫ থেকে ৬০ মিনিটের সেশন মোট ঘুমের সময়কাল ৫০ মিনিটেরও বেশি বৃদ্ধি করে। একইসঙ্গে জেগে থাকার সময় ৩০ মিনিটেরও বেশি কমিয়েছে।
ঝি-জুন বু বলেন, চীনা মার্শাল আর্টে হালকা নড়াচড়ার সঙ্গে গভীর ও ধীর শ্বাস-প্রশ্বাসের সমন্বয় জড়িত, যা আপনার চাপ কমাতে সহায়তা করে এবং শরীরকে শান্ত করতে ভূমিকা রাখে।
হাঁটা বা জগিং:
ঝি-জুন বু বলেন, হাঁটা বা জগিং শারীরিক ও মানসিক উভয়ভাবেই ঘুমের উন্নতি করে। এটি শক্তি খরচের পরিমাণ বাড়ায়, কর্টিসলের মতো স্ট্রেস হরমোন কমায়, মেজাজ উন্নত করে, মেলাটোনিন উৎপাদন বাড়ায় (ঘুম নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন) এবং গভীর ঘুম হতে ও অনিদ্রার লক্ষণগুলো কমাতে সহায়তা করে।
তাসমিম