
ছবি: প্রতীকী
তরুণ এবং সুস্থবয়সী মানুষ হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাকে পতিত হচ্ছেন—এই বিষয়টি আমাদের আধুনিক সমাজের স্বাস্থ্যসংক্রান্ত ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। যেখানে বাহ্যিক সৌন্দর্যকে প্রাধান্য দেওয়া হয়, অথচ অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্য অনেক সময় উপেক্ষিত হয়।
জিম, ফিটনেস স্টুডিও আর হেলথ ফুড স্টোরগুলোতে এক প্রোডাক্ট এখন শক্তি, সহনশীলতা ও সাফল্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে—প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট। চকচকে টিনে বিক্রি হয় এগুলো, দ্রুত পেশী গঠন, চর্বি কমানো এবং অতুলনীয় শক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে। ২০-৩০ বয়সীদের মধ্যে এই প্রোটিন পাউডার অনেকের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে গেছে। কিন্তু একটা ব্যাপার ঠিক মতো মিলছে না।
রিপড দেহ আর নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাসের পরেও, হাসপাতালে দিনে দিনে বেড়েই চলেছে তরুণ হৃদরোগীদের সংখ্যা, এমনকি ৩০ বছর বয়সী অনেকের। যাদের মধ্যে কেউ ধূমপায়ী নন, কেউ ফাস্ট ফুড প্রেমিকও নন, আবার পরিবারের ইতিহাসও নেই হৃদরোগের। তাহলে কী হচ্ছে?
কেবল বাহ্যিক সৌন্দর্যই সব কিছু নয়
‘যা বাহ্যিক দৃষ্টিতে ভালো মনে হয়, তা হয়তো ভেতরে ধ্বংসপ্রাপ্ত,’ এমন কথা চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রচলিত। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দিমিত্রি যারণভ সম্প্রতি ইনস্টাগ্রামে এই বাস্তবতার এক ভারী তথ্য শেয়ার করেছেন। তিনি এমন তরুণ ও মজবুত পেশীবাহুল্য পুরুষদের কথা বলেছেন, যারা আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
তাদের ফিটনেস ছিল চমৎকার, কিন্তু ধমনীগুলো? তেমন নয়। ধমনীতে নীরবে প্রদাহ, শক্তকরণ ও সংকোচনের চিহ্ন ছিল—সবই হৃদযন্ত্রের জন্য ভয়াবহ সংকেত। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, তাদের অধিকাংশেরই দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট ও প্রাণীজ উৎস থেকে প্রোটিন গ্রহণের অভ্যাস ছিল।
অতিরিক্ত প্রোটিন ডায়েটের গুপ্ত ঝুঁকি
প্রোটিন পেশী মেরামত, রোগ প্রতিরোধ ও বিপাকক্রিয়ার জন্য অপরিহার্য। তবে ‘যতো বেশি, ততো ভালো’ এই ধারনা হৃদপিণ্ডের জন্য হুমকি তৈরি করতে পারে। ডা. দিমিত্রি বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি অতিরিক্ত প্রোটিন সেবনে দেখা যায়:
এলডিএল (খারাপ) কোলেস্টেরল বৃদ্ধি
- এন্ডোথেলিয়াল ডিসফাংশন — রক্তনালীয়ের স্বাভাবিক শিথিল হওয়ার ক্ষমতা হারানো
- দীর্ঘস্থায়ী হালকা প্রদাহ
- আগাম এথেরোসক্লেরোসিস (ধমনীর মধ্যে প্লাক জমাট বাঁধা)
শুধু প্রোটিনের পরিমাণ নয়, উৎসও গুরুত্বপূর্ণ। অনেক প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট ‘হোয়েই’ বা ‘কেসিন’ থেকে তৈরি, যা কিছু মানুষের কোলেস্টেরল বাড়াতে পারে। পাশাপাশি লাল মাংস, ডিম ও দুগ্ধজাত খাবারের অতিরিক্ত সেবন যখন থাকে, আর সবুজ শাক-সবজি কম থাকে, তখন স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।
আধুনিক স্বাস্থ্যবিধির ভুল মাপকাঠি
স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের অনেক প্রচারণা পেশীর আকার, কম চর্বি ও দৃশ্যমান শিরা প্রদর্শনে বেশি গুরুত্ব দেয়। অথচ আসল স্বাস্থ্য, যা আকস্মিক হৃদরোগ থেকে রক্ষা করে, তা বাহ্যিকভাবে ধরা পড়ে না।
সতর্কতার মূল ইঙ্গিতগুলো প্রায়ই অদৃশ্য থাকে:
১. রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকতে পারে।
২. কোলেস্টেরলের মাত্রা প্রথমদিকে আতঙ্কের কারণ নয়।
৩. শ্বাসকষ্ট বা বুকে ব্যথা শুরু হয় যখন রোগ অনেক আগেভাগেই ছড়িয়ে পড়ে।
এন্ডোথেলিয়াল কোষ, অর্থাৎ রক্তনালীর অভ্যন্তরীণ পরত, যখন দীর্ঘদিন প্রদাহ ও খাদ্যজনিত চাপের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন প্লাক জমাট বাঁধা শুরু হয় এবং এ থেকেই নীরব হৃদরোগের সূচনা।
দ্রষ্টব্য: এই প্রতিবেদন শুধুমাত্র তথ্যের উদ্দেশ্যে, চিকিৎসাগত পরামর্শ নয়। খাদ্যাভ্যাস, সাপ্লিমেন্ট বা ব্যায়াম পরিবর্তনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।
রাকিব