ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২

কাটা অঙ্গ গজাবে নতুন করে, চিকিৎসা ক্ষেত্রে চীনের যুগান্তকারী সফলতা

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১৯ জুলাই ২০২৫

কাটা অঙ্গ গজাবে নতুন করে, চিকিৎসা ক্ষেত্রে চীনের যুগান্তকারী সফলতা

ছবি: সংগৃহীত

 

 যুদ্ধকৌশল, বাণিজ্য বা কূটনীতি—সবখানেই বিশ্বের নেতৃত্বে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে চীন। এবার চিকিৎসাবিজ্ঞানে এনেছে এক যুগান্তকারী সাফল্য। চীনা বিজ্ঞানীদের হাত ধরে খুলে যাচ্ছে নতুন এক সম্ভাবনার দরজা—কাটা অঙ্গ পুনরায় গজিয়ে তোলার সম্ভাবনা।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্স-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় জানানো হয়েছে, চীনা বিজ্ঞানীরা ইঁদুরের কানের ভেতরের ফুটো অংশ পুনরায় গজাতে সক্ষম হয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে পূর্ণ কার্টিলেজ-ও। এই ঘটনাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে এক বিরল সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।

গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন ডক্টর ওয়াং ওয়ে, বেইজিং-এর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ বায়োলজিক্যাল সায়েন্স-এর গবেষক। তিনি বলেন, “এই অঙ্গ পুনর্জন্মের পেছনে রয়েছে এক বিশেষ জেনেটিক সুইচ যা এতদিন বিজ্ঞানের অজানা ছিল। আমরা সেই সুইচ অন করেই দেখিয়েছি, পুনরায় অঙ্গ গজানো সম্ভব।”

এই গবেষণায় মুখ্য ভূমিকা রেখেছে রেটিনোইক এসিড নামে একটি রাসায়নিক উপাদান, যা ভিটামিন A থেকে তৈরি হয়। এটি শরীরের কোষকে জানায়, কোথায় এবং কিভাবে পুনর্গঠন শুরু করতে হবে। রেটিনোইক এসিড তৈরির পেছনে কাজ করে একটি নির্দিষ্ট জিন, যেটি খুঁজে বের করতে গবেষকরা কাজ করছেন গত তিন বছর ধরে।

গবেষণায় ব্যবহৃত হয়েছে একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি—এস্টোরিওসিক, যাকে বিজ্ঞানীরা বলেন ‘জীবনের ক্যামেরা’। এই প্রযুক্তি কোষের ভেতরকার কার্যক্রম শুধু ধারণই করে না, বরং দেখে কোন জিন কখন কীভাবে কাজ করছে।

সহগবেষক ডেং জিচিং, বিজিআই রিসার্চের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী জানান, “এই প্রযুক্তির মাধ্যমে অঙ্গ পুনর্জন্মের পুরো মানচিত্র আমাদের সামনে খুলে গেছে।”

তবে গবেষকরা সতর্ক করে বলছেন, মানুষের শরীর ইঁদুরের চেয়ে অনেক বৃহৎ, জটিল ও বহুমাত্রিক। প্রতিটি অঙ্গ কাজ করে ভিন্ন ভিন্ন সংকেত প্রক্রিয়ায়, তাই মানবদেহে এই প্রযুক্তি প্রয়োগ এখনো সময়সাপেক্ষ।

ডক্টর ওয়াং ওয়ে বলেন, “এই গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে জিনগত একটি সুইচ সত্যিই আছে যা অঙ্গ পুনর্জন্ম শুরু করতে পারে। এখন আমাদের লক্ষ্য হলো মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গের সেই সুইচগুলো খুঁজে বের করা।”

যদিও এই গবেষণা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে, তবে বিজ্ঞানীরা আশাবাদী—একদিন হয়তো পঙ্গু মানুষ ফিরে পাবে চলার ক্ষমতা, আর কাটা অঙ্গ নতুন করে গজিয়ে উঠবে।

এই আবিষ্কার চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে শুধু চীনের একক সাফল্য নয়, এটি হয়ে উঠতে পারে পঙ্গু মানুষের স্বপ্ন পুনর্গঠনের পথ। আজ হয়তো এটি শুরু, কিন্তু দিগন্তে স্পষ্টভাবেই আলো দেখা যাচ্ছে।

শেখ ফরিদ

×