ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২

৪ জনের একজন আক্রান্ত এক অজানা রোগে, হতে পারে মৃত্যু

প্রকাশিত: ০৮:৫০, ১৯ জুলাই ২০২৫

৪ জনের একজন আক্রান্ত এক অজানা রোগে, হতে পারে মৃত্যু

৪ জনের একজন আক্রান্ত এক অজানা রোগে

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি চারজনের একজন এই রোগে ভুগলেও, সচেতনতা ও নির্ণয়ের অভাবে অনেকেই জানেন না তারা আক্রান্ত। অথচ সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে এই রোগ মারাত্মক রূপ নিতে পারে। রোগটির নাম ক্রনিক ভেনাস ইনসাফিসিয়েন্সি (সিভিআই)।

ইয়েল স্কুল অব মেডিসিনের ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের প্রধান ড. রাউল গুজম্যান বলেন, ‘এই রোগে পায়ের শিরার ভালভ দুর্বল হয়ে যায়। ফলে রক্ত নিচের দিকে জমে থাকে ও শিরায় চাপ বাড়ে। ধীরে ধীরে তা ত্বক ও পেশিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।’

কীভাবে বুঝবেন আপনি সিভিআই রোগে ভুগছেন?

রোগটির প্রাথমিক উপসর্গ খুব সাধারণ, পায়ের পেশিতে টান লাগা, ক্লান্তিভাব, ভারী অনুভব বা রাত্রে পা ঝিনঝিনে লাগা। রোগটি বাড়লে পা ফুলে যায়, ত্বক শুকিয়ে ফেটে যেতে পারে, এমনকি ক্ষতও তৈরি হয়।

ভ্যারিকোস ভেইন বা ফুলে ওঠা শিরা এই রোগের বড় একটি চিহ্ন। তবে সবার ক্ষেত্রে তা দেখা যায় না। চিকিৎসা না করালে এতে রক্ত জমাট বাধতে পারে, এমনকি ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিসের ঝুঁকি থাকে।

কারা বেশি ঝুঁকিতে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারীরা বিশেষ করে ৫০ বছরের বেশি বয়সী ও গর্ভবতী নারীরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হন। পুরুষরাও বাদ যাচ্ছেন না বিশেষ করে যারা দীর্ঘসময় বসে বা দাঁড়িয়ে কাজ করেন, যেমন- শিক্ষক, ব্যাংকার, বা কারখানার শ্রমিক।

ধূমপান, উচ্চ রক্তচাপ, অতিরিক্ত ওজন এবং পরিবারে শিরার রোগের ইতিহাস থাকলেও ঝুঁকি বাড়ে।

ড. মেরি রবার্ট, যিনি ইয়েল স্কুল অব মেডিসিনে সার্জিকাল প্যাথলজিস্ট, বলেন, ‘কর্মস্থলে একটানা বসে বা দাঁড়িয়ে থাকার অভ্যাস থাকলে শিরায় রক্ত জমে যায়, যা সময়ের সঙ্গে সমস্যাকে বাড়িয়ে তোলে।’

কেন রোগটি ধরা পড়ে না?

সিভিআই’র বড় সমস্যা হলো- এর লক্ষণগুলো অনেক সময় অন্য রোগ ভেবে উপেক্ষা করা হয়।

পা ফোলাকে বয়সজনিত, ভ্যারিকোস ভেইনকে সৌন্দর্যগত সমস্যা, আর ত্বকের পরিবর্তনকে অনেকেই একজিমা বা অ্যালার্জি ভেবে নেন। ফলে রোগটি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং এক সময় চিকিৎসা করেও পুরোপুরি সেরে ওঠা কঠিন হয়ে পড়ে।

তবে, চিকিৎসকরা বলছেন, একটি সাধারণ শারীরিক পরীক্ষা ও আল্ট্রাসাউন্ড বা এমআরএ (এমআরএ) করলেই রোগটি নির্ভুলভাবে শনাক্ত করা সম্ভব।

চিকিৎসা আছে, তবে শুরুটা সচেতনতায়

ভালো খবর হলো- রোগটি সময়মতো ধরা পড়লে সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। চিকিৎসার শুরু হয় কমপ্রেশন স্টকিং ব্যবহার, পা উঁচু করে বসা ও জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনার মাধ্যমে।

ওজন নিয়ন্ত্রণ, ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, দীর্ঘসময় একভাবে না বসে থাকা- এসব অভ্যাস সিভিআই নিয়ন্ত্রণে কার্যকর।

জরুরি ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে রক্ত পাতলা করার ওষুধ, স্ক্লেরোথেরাপি, এন্ডোভেনাস অ্যাবলেশন বা অপারেশনের মাধ্যমে শিরা অপসারণও করা হয়।

ড. গুজম্যান বলেন, ‘চিকিৎসা নির্ভর করে কোন শিরা কতটা আক্রান্ত তার ওপর। তবে সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু হলে, অধিকাংশ রোগী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারেন।’

উপেক্ষা নয়, সচেতন হোন

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, যারা নিয়মিত পা ফোলার সমস্যায় ভুগছেন, হালকা হলেও ব্যথা অনুভব করেন বা ত্বকে কালচে দাগ পড়ছে- তাদের দেরি না করে ভাসকুলার বিশেষজ্ঞ দেখানো উচিত।

ড. রবার্ট বলেন, ‘সিভিআই খুব সাধারণ একটা রোগ হলেও, সময়মতো ধরা না পড়লে তা জটিলতায় গড়াতে পারে। সচেতনতাই এর প্রধান প্রতিরোধ।’

খবর ন্যাশনাল জিওগ্রাফি
 

তাসমিম

×