ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২

নিজ হাতেই সন্তান প্রসব, যেভাবে উপার্জন করতেন কর্ণাটকের গুহায় আশ্রয় নেওয়া রুশ নারী

প্রকাশিত: ১৪:১৩, ১৯ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৪:১৬, ১৯ জুলাই ২০২৫

নিজ হাতেই সন্তান প্রসব, যেভাবে উপার্জন করতেন কর্ণাটকের গুহায় আশ্রয় নেওয়া রুশ নারী

ছবি: সংগৃহীত

২০টি দেশের ওপর ভ্রমণ, জঙ্গলের গুহায় বাস এবং নিজ হাতে সন্তান প্রসব—এই অভূতপূর্ব জীবনের গল্প বললেন ৪০ বছর বয়সী রুশ নাগরিক নিনা কুটিনা। সম্প্রতি ভারতের কর্ণাটকের একটি দুর্গম পাহাড়ি গুহা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে তাকে ও তার দুই কন্যাকে।

গত ১১ জুলাই কর্ণাটকের রামতীর্থ পাহাড়ি এলাকায় একটি নির্জন গুহা থেকে উদ্ধার করা হয় নিনা ও তার দুই মেয়ে—ছয় বছর বয়সী প্রেয়া ও চার বছর বয়সী আমাকে। জানা গেছে, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে তারা সেখানে অবস্থান করছিলেন। গুহায় প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জীবনযাপন করছিলেন নিনা। কখনও কাঠের আগুনে, কখনও গ্যাস সিলিন্ডারে রান্না করতেন, এবং প্রয়োজনীয় বাজার সদাই করতেন পাশের গ্রাম থেকে।

তিনি বলেন, ‘সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে জেগে উঠতাম, নদীতে সাঁতার কাটতাম, বই পড়তাম, ছবি আঁকতাম, গান গাইতাম—সব মিলিয়ে প্রকৃতির সঙ্গে শান্তিপূর্ণ জীবন কাটাচ্ছিলাম।’

কর্ণাটকের পুলিশ জানিয়েছে, গুহায় মোমবাতির আলোয় ধ্যান করতেন নিনা। তিনি নাকি ‘জঙ্গলে থাকতেই আগ্রহী এবং স্রষ্টার উপাসনায় মগ্ন ছিলেন।’

১৫ বছরের ভ্রমণজীবন

নিনা কুটিনা জানান, গত ১৫ বছরে তিনি ২০টির বেশি দেশ ভ্রমণ করেছেন। একটি ব্যবসায়িক ভিসায় ভারতে প্রবেশ করে গোয়ার মাধ্যমে গন্তব্যস্থল গোকার্ণ শহরে পৌঁছান। তবে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর তারা গভীর অরণ্যে আশ্রয় নেন এবং এক প্রাকৃতিক গুহাকেই করে নেন নিজেদের বাসস্থান।

পুলিশকে তিনি জানান, তিনি একজন প্রশিক্ষিত শিক্ষক এবং গোয়ায় রুশ ভাষার গৃহশিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। তবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তিনি ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আট বছর ধরে অবৈধভাবে ভারতে অবস্থান করছেন।

সন্তান প্রসবও নিজ হাতে

অবাক করা তথ্য দিয়েছেন নিনা—তার সন্তানদের জন্মও হয়েছে বিভিন্ন দেশে, এবং কোনো ডাক্তার বা হাসপাতালের সাহায্য ছাড়াই নিজ হাতে তিনি সন্তান প্রসব করেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমার সব সন্তানই জন্মেছে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায়। আমি নিজেই প্রসব করেছি, কারও সাহায্য ছাড়াই, কারণ আমি জানি কীভাবে করতে হয়।’

উদ্ধারের পর হাসপাতালে নেওয়া হয় তাদের। নিনার ভাষ্য, ‘এটাই প্রথমবার আমার মেয়েরা হাসপাতালে এসেছে। ওদের শরীরে একটিও ব্যথা নেই, কখনও অসুস্থও হয়নি।’

গত ৯ জুলাই বিকেল ৫টার দিকে টহলের সময় পুলিশের নজরে আসে এই পরিবার। গুহায় তল্লাশি চালিয়ে মা ও দুই সন্তানকে উদ্ধার করা হয়।

কীভাবে আয় করতেন?

নিনা জানান, ছবি আঁকা, সংগীত ভিডিও তৈরি, বাচ্চাদের দেখাশোনা কিংবা পড়ানো—এসবের মাধ্যমেই চলত তার আয়। কখনও কোনো কাজ না থাকলে তার ভাই, বাবা বা ছেলে তাকে আর্থিকভাবে সাহায্য করতেন।

‘আমি এই কাজগুলো করেই আয় করি। যদি কোনো কাজ না পাই, কেউ আমার সাহায্য না চায়, তাহলে পরিবারের সদস্যরা আমাকে সাহায্য করে। আমাদের প্রয়োজন মেটানোর মতো টাকাই যথেষ্ট,’ বলেন তিনি।

দেশে না ফেরার কারণ?

কেন তিনি রাশিয়ায় ফেরেননি প্রশ্ন করা হলে, নিনা বলেন, ‘এখানে অনেক জটিল কারণ রয়েছে। আমার ছেলে ছাড়াও আরও কয়েকজন কাছের মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আমরা শোক, কাগজপত্র ও নানান সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম।’

তিনি জানান, আরও চারটি দেশ ঘুরে তিনি আবার ভারতে ফিরে এসেছেন। ‘আমরা ভারতকে ভালোবাসি—এর পরিবেশ, এর মানুষ, সবকিছু,’ বলেন নিনা। বর্তমানে তিনি রুশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং দূতাবাস তার পরিবারকে সহায়তা করছে বলেও জানান।

 

সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস।

রাকিব

আরো পড়ুন  

×