
সংগৃহীত
উপমহাদেশের অন্যতম প্রবাদপ্রতিম গায়ক ও সুরস্রষ্টা ছিলেন। পাকিস্তানের চলচ্চিত্র জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন।
মেহেদি হাসান খান পাকিস্তানের গজল গায়ক ও বলিউডের নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী ছিলেন। গজল সম্রাট ও মেহেদি হাসান নামেই সমধিক পরিচিত ব্যক্তিত্ব।
পাকিস্তান সরকারের তরফে তমঘা-ই-ইমতিয়াজ, প্রাইড অফ পারফরম্যান্স এবং হিলাল-ই-ইমতিয়াজ এবং নেপাল সরকারের পক্ষ থেকে গোর্খা দক্ষিণা বাহু উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন।
অবিভক্ত ভারতের রাজস্থানে ঝুনঝুন জেলার লুনা'য় মেহেদি হাসান জন্মগ্রহণ করেন ১৯২৭ সালের ১৮ জুলাই । তিনি দাবি করেছিলেন যে, তাদের ষোল পূর্ব-পুরুষগণ সঙ্গীতে আসক্ত ছিলেন। তার পিতা ওস্তাদ আজিম খান একজন গায়ক ছিলেন।
চাচা ওস্তাদ ইসমাইল খান ও পিতা আজিম খানের কাছ থেকে তার সঙ্গীতে হাতে খড়ি ঘটে। তারা উভয়েই সনাতন ঘরানার ধ্রুপদী সঙ্গীতে দক্ষ ছিলেন। শৈশব থেকেই তিনি সঙ্গীত পরিবেশন করতেন। প্রথম গান আনুষ্ঠানিকভাবে পরিবেশন করেন ১৯৩৫ সালে। পরিবেশনার স্থানটি ছিল অবিভক্ত ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের ফাজিলকা বুংলায়, বর্তমান ডিসি হাউজে।
ভারত বিভাজনের পর ২০ বছর বয়সী মেহেদি হাসান এবং তার পরিবার পাকিস্তানে অভিবাসিত হন। সেখানে তাকে ব্যাপক অর্থনৈতিক সমস্যাও ভুগতে হয়। চিচাওয়ান্তি এলাকার একটি সাইকেলের দোকানে কাজ করতে থাকেন।
সেখানে তিনি গাড়ী এবং ডিজেল ট্রাক্টর মেকানিক হিসেবে ছিলেন। আর্থিক অসচ্ছলতা থাকা সত্ত্বেও সঙ্গীত চর্চা করতে থাকেন। প্রত্যহ রুটিনমাফিক গান চর্চা অব্যাহত রাখেন।
ব্যক্তিগত জীবনে আসিফ মেহেদী-সহ ৯ পুত্র ও ৫ কন্যা সন্তানের জনক তিনি। ১৯৫২ সালে মেহেদি হাসান প্রথমবারের মতো রেডিও পাকিস্তানে গান করার সুযোগ পান। প্রাথমিকভাবে সেখানে তিনি ঠুমরী গায়ক ছিলেন।
চাচা ইসমাইল খান তাকে সঙ্গীত পরিচালকরূপে গড়ে তুলতে সর্বতোভাবে সহায়তা করেন। এতে তিনি সঙ্গীতবোদ্ধাদের মন জয় করেন। উর্দু ভাষায় রচিত কবিতায় তার আগ্রহ ছিল অনেক। পরীক্ষামূলকভাবে খণ্ডকালীনভিত্তিতে তিনি গজল গাইতে শুরু করেন।
রেডিও কর্মকর্তা দ্বয়় - জেড.এ. বুখারী এবং রফিক আনোয়ার তার গজল গানের অনুরক্ত হন। তাদের আন্তরিক অনুপ্রেরণা তিনি পাকিস্তানসহ প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গীত ঘরানায় অন্যতম জনপ্রিয় গজল গায়কে পরিণত হন।
১৯৮০-এর দশকের শেষার্ধ থেকে তিনি বিভিন্ন ধরনের অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হতে থাকেন। ফলে একান্তই বাধ্য হয়ে সঙ্গীত জগৎ ত্যাগ করেন মেহেদি হাসান। ক্রমবর্ধমান অসুখের পীড়ায় অবশেষে সঙ্গীত জীবন ত্যাগ করেন।
অক্টোবর, ২০১০ সালে এইচএমভি থেকে 'সারহাদে' শিরোনামে দ্বৈত গানের অ্যালবাম প্রকাশ করে। ধারণা করা হয় যে এটি ছিল তার প্রথম এবং শেষ দ্বৈত গানের অ্যালবাম। এতে 'তেরে মিলনা' গানে লতা মঙ্গেশকরের সাথে গান করেন তিনি।
গানটির সুরকার ছিলেন তিনি স্বয়ং, গানটি লিখেছিলেন ফারহাত শাহজাদ। ২০০৯ সালে গানটি পাকিস্তানে রেকর্ড করা হয়। পরবর্তীকালে লতা মঙ্গেশকর গানটি শ্রবণ করে ২০১০ সালে ভারতে রেকর্ড করেন। এর ফলশ্রুতিতেই উভয়ের মিলিত কণ্ঠে গানটি প্রকাশিত হয়।
মেহেদি হাসান ফুসফুসের প্রদাহে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকেন। ২০১২ সালের ১৩ জানুয়ারি, করাচির একটি বেসরকারি ক্লিনিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। জন্মদিনে নিরন্তর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
হ্যাপী