
দৈনিক জনকণ্ঠ
এক সময়ের ত্রাসের প্রতীক নিষিদ্ধ ঘোষিত কাকন বাহিনীর বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে ঈশ্বরদীর পদ্মা নদীর চরাঞ্চল ও নদী পাড় এলাকায় লাগাতার বন্দুকযুদ্ধ এবং নৈরাজ্য পরিস্থিতি থেকে অবশেষে মুক্তি পেয়েছে নদী এলাকাবাসী।
সেনাবাহিনীর পাবনা ও নাটোর ক্যাম্পের আকস্মিক ও সাঁড়াশি অভিযানের ফলে কাকন বাহিনীর দৌরাত্ম্য অনেকটাই কমে এসেছে, যা এলাকার মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছে। সাধারণ মানুষ এখন নির্বিঘ্নেœ চলাচল করতে পারছে।
দীর্ঘদিন ধরে নদীর চরাঞ্চলের বিভিন্ন পয়েন্ট ও নদীতে নানা প্রকার চাঁদাবাজি,মাদক আমদানি ও চরাঞ্চলে অবৈধ বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে কাকন বাহিনী তাদের আধিপত্য বজায় রেখেছিল প্রশাসনের বিভিন্ন কর্তাকে মাসোহারা দিয়ে।
এইসব অপকর্ম ও বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে প্রায়শই স্থানীয় প্রতিপক্ষ বালু উত্তোলনকারী ও অন্যান্য গোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের বন্দুকযুদ্ধ লেগে থাকত, যার ফলে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছিল। দিনের পর দিন এই সশস্ত্র সংঘাতের কারণে নদী এলাকার চরাঞ্চল ও নদী পাড় এলাকার বাসিন্দারা চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছিল।
সন্ধ্যা নামলেই রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যেত এবং স্বাভাবিক জনজীবন পুরোপুরি স্থবির হয়ে পড়েছিল।স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় অভিযান চালানো হলেও কাকন বাহিনীর শক্তিশালী নেটওয়ার্ক,অর্থের বিনিময়ে প্রশাসনের কতিপয় কর্তাকে ম্যানেজ এবং তাদের অস্ত্রের ভান্ডারের কারণে তাদের পুরোপুরি দমন করা সম্ভব হচ্ছিল না।
এই পরিস্থিতিতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে সেনাবাহিনী পদ্মা নদীর চরাঞ্চলে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত। এই অভিযানে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ,দেশীয় অস্ত্র,মাদকদ্রব্য,মানুষের মাথার খুলি উদ্ধার করা হয়েছে এবং কাকন বাহিনীর তিন সদস্যকে আটক করেছে।
এরা হলো সোহাগ,রোকেয়া ও আশরাফুল ইসলাম বাপ্পী। এসময় পাকিস্তানি রিভলভার একটি,একটি ডাবল ব্যারেল শাটারগান ২৯ রাউন্ড,৭.৬৫ মিমি গুলি ৯ রাউন্ড,২২মিমি গুলি,৭.৬৫মিমি এফসিসি,১২ মিমি গেজেট সেল,১৭ টি দেশীয় রামদা,একটি সুইস নাইফ,৮৬ পিস ইয়াবা,
৫ বোতল ফেন্সিডিল,দুটি গাঁজার গাছ ও ছয় গ্রাম গাঁজা,মাদক সেবনের উপকরণ,নগদ ১২ লাখ ৫৬ হাজার ৩১২ টাকা,৪টি স্মার্ট ফোন,৫ টি বাটন ফোন,জেনারেট ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড,এনআইডি কার্ড,তিনটি নৌকা ও একটি মানুষের মাথার খুলি উদ্ধার করে।
সেনাবাহিনীর এই কঠোর অভিযানের ফলেই কাকন বাহিনীর সাংগঠনিক শক্তির উপর অনেকটা আঘাত পড়েছে । ফলে, নদীর চড় ও পাড় এলাকায় তাদের ত্রাসের রাজত্ব এ মুহূর্তে অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছে, সেনাবাহিনীর উপস্থিতি এবং তাদের কার্যকরী পদক্ষেপের কারণে এলাকায় শান্তি ফিরে এসেছে। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ এখন নির্ভয়ে চলাচল করতে পারছে। বাজারঘাট এবং দৈনন্দিন কার্যকলাপ স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে এসেছে।
ঈশ্বরদী নৌ থানার এসআই সজল জানান , "সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় আমরা নদী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছি।
স্থানীয়রা সেনাবাহিনীর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এবং আশা প্রকাশ করেছেন যে এই শান্তি দীর্ঘস্থায়ী হবে। তবে, প্রশাসনের প্রতি তাদের অনুরোধ, কাকন বাহিনীর বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তার এবং ভবিষ্যতে তাদের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা রোধে যেন নজরদারি অব্যাহত রাখা হয়
হ্যাপী