
সংগৃহীত
হৃদ্রোগ মানেই যেন বুক চেপে ধরা, চরম ব্যথা, হাসপাতালে ছুটোছুটি। কিন্তু এমন একটি হার্ট অ্যাটাকও রয়েছে যা চুপিচুপি শরীরের ক্ষতি করে যাচ্ছে—যার নাম "Silent Heart Attack" বা নীরব হার্ট অ্যাটাক। এটি কোনো নাটকীয় উপসর্গ ছাড়াই শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর ক্ষতি করে থাকে।
অনেক সময় মানুষ বুঝতেই পারেন না তিনি একটি হার্ট অ্যাটাকের শিকার হয়েছেন। কিন্তু সাবধান! যদি আপনি নিচের উপসর্গগুলোর কোনোটি অনুভব করেন, তবে এটি হতে পারে এমন একটি ‘নীরব সংকেত’—যার পরিণতি হতে পারে প্রাণঘাতী।
নীরব হার্ট অ্যাটাকের ৬টি গুপ্ত লক্ষণ
১. শ্বাসকষ্ট বা হাঁপ ধরা
- আপনি কি হঠাৎ কিছুটা হাঁটার পরেই হাঁপিয়ে যাচ্ছেন? মনে হচ্ছে বুকটা চেপে ধরছে?
- এটি কিন্তু ফুসফুস নয়, বরং হার্ট থেকে আসা সংকেত হতে পারে। হার্ট ঠিকভাবে রক্ত পাম্প না করলে শরীরে অক্সিজেন কমে যায়—ফলে দ্রুত শ্বাস নিতে হয়।
২. অত্যন্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা
- আপনি কি কোনো কাজ না করেও মনে করছেন যেন এক ঘণ্টা দৌড়েছেন? এমন চরম ক্লান্তি হঠাৎ করেই এসে গেলে এটি উপেক্ষা করা বিপজ্জনক।
- এই ক্লান্তির কারণ হতে পারে হার্টে রক্ত চলাচলে সমস্যা—যা ধীরে ধীরে শরীরকে দুর্বল করে তোলে।
৩. বমিভাব, অম্বল বা হজমে সমস্যা
- অনেকেই গ্যাস্ট্রিক বা অম্বল ভেবে এসব উপসর্গকে হালকা ভাবে নেন। কিন্তু গবেষণা বলছে, অনেক সময় হার্ট অ্যাটাকের সময় বমিভাব, বুকজ্বালা বা পেটের অস্বস্তি দেখা দেয়।
- বিশেষত বয়স্ক মানুষদের মধ্যে এমন উপসর্গ হার্ট অ্যাটাকের মূল লক্ষণ হিসেবেও ধরা পড়ে।
৪. মাথা ঘোরা বা দৃষ্টিতে অন্ধকার দেখা
- আপনি কি কখনো হঠাৎ দাঁড়ানোর পর চোখে অন্ধকার দেখেছেন বা মাথা ঘুরে পড়েছেন?
- এই উপসর্গ হার্টে রক্ত সরবরাহ কমে যাওয়ার ইঙ্গিত দিতে পারে। রক্তচাপ দ্রুত নেমে গেলে মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না—ফলে আপনি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন।
৫. ঠান্ডা ঘাম হওয়া
- হাত-পা ঠান্ডা হয়ে ঘেমে যাওয়া, বা গা দিয়ে পানি-পানি ভাব—এই লক্ষণটি অবহেলা করবেন না। এটি হৃৎপিণ্ডের ওপর চাপের প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
- হার্ট অ্যাটাকের আগেও অনেকেই হঠাৎ ঘেমে যান—যা 'সাইলেন্ট' হলেও মারাত্মক সংকেত।
৬. বুকের চাপা অস্বস্তি বা ভার লাগা
- যদিও অনেকেই বলেন, হার্ট অ্যাটাক মানেই তীব্র বুক ব্যথা, কিন্তু সাইলেন্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে ব্যথা না-ও হতে পারে। বরং হালকা চাপ, ভারী লাগা, বা বুকটা যেন গ্যাসে ফুলে আছে—এমন অনুভূতিই হয়ে থাকে।
- অনেকে এটিকে সাধারণ অম্বলের ভুল ভাবেন, যা সবচেয়ে ভয়ংকর বিভ্রান্তি।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
- যদি এই উপসর্গগুলোর একাধিকটি একসঙ্গে অনুভব করেন
- উপসর্গ ২০ মিনিট বা তার বেশি সময় স্থায়ী হয়
- আপনার যদি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগের পারিবারিক ইতিহাস থাকে
নিজেকে রক্ষা করবেন
- নিয়মিত ECG/ইকো বা হার্ট চেকআপ করান
- ওজন, কোলেস্টেরল ও সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখুন
- ধূমপান বন্ধ করুন, ব্যায়াম করুন, স্ট্রেস কমান
- ঘুম ঠিক রাখুন এবং তেল-মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করুন
সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক যেমন ভয়ংকর, তেমনি এটি প্রতিরোধযোগ্য—যদি আমরা শরীরের ছোট ছোট সংকেতগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে দেখি।
শরীর হঠাৎ করে যখন কিছু অস্বাভাবিক বার্তা দেয়, তখন সেটিকে হালকা ভাবে না নিয়ে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। একবার সময়মতো ধরা পড়লে জীবন রক্ষা করা সম্ভব। তাই নিজের শরীরকে ভালোবাসুন, নিয়মিত চেকআপ করুন, এবং সুস্থ থাকার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
হ্যাপী