ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

তরুণদের মধ্যেই বাড়ছে ক্যানসারের ঝুঁকি, চিন্তিত চিকিৎসকেরা?

প্রকাশিত: ০২:১০, ১৯ জুলাই ২০২৫

তরুণদের মধ্যেই বাড়ছে ক্যানসারের ঝুঁকি, চিন্তিত চিকিৎসকেরা?

ছবি: সংগৃহীত

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তরুণদের মধ্যে কোলন ও পরিপাকতন্ত্রের (GI) ক্যানসারের হার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। আগে যেসব ক্যানসার প্রধানত বয়স্কদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, এখন তা ৫০ বছরের নিচের তরুণদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে কোলোরেক্টাল ক্যানসার (Colon and Rectal Cancer) এখন তরুণ-তরুণীদের ক্যানসারজনিত মৃত্যুর শীর্ষ কারণগুলোর একটি।

কোলন ও পরিপাকতন্ত্রের ক্যানসার কী?

কোলন ক্যানসার:
এটি বৃহদন্ত্রের (Colon) ক্যানসার। বৃহদন্ত্র হজম প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা খাদ্যকে ভেঙে পুষ্টি শোষণ করে। এই অঙ্গে অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধির ফলে ক্যানসার তৈরি হতে পারে।

পরিপাকতন্ত্রের (GI) ক্যানসার:
এই ক্যানসারগুলো হজমতন্ত্রের বিভিন্ন অঙ্গে হতে পারে — যেমন খাদ্যনালী, পাকস্থলী, যকৃৎ, অগ্ন্যাশয়, কোলন, রেক্টাম, ক্ষুদ্রান্ত্র, গলব্লাডার ও মলদ্বার। একসাথে এদের বলা হয় GI ক্যানসার।

তরুণদের মধ্যে কেন বাড়ছে এই ক্যানসার?

বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ চিহ্নিত করেছেন, যেমন:

🔵 বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শ: পরিবেশে থাকা কিছু রাসায়নিক পদার্থ ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।

🔵 আন্ত্রিক জীবাণুর ভারসাম্য নষ্ট হওয়া: শরীরের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া বা মাইক্রোবায়োমে পরিবর্তন ক্যানসারের পথ তৈরি করতে পারে।

🔵 জীবনযাত্রার ধরন: উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত, প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া, ব্যায়ামের অভাব এবং স্থূলতা GI ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।

🔵 জিনগত পরিবর্তন: কিছু তরুণের শরীরে এমন জেনেটিক মিউটেশন থাকতে পারে, যা ক্যানসার প্রবণতা বাড়ায়।

কেবল কোলন নয়, আরও কিছু ক্যানসারও বাড়ছে

✅ খাদ্যনালীর ক্যানসার (Esophageal Cancer):
যারা দীর্ঘদিন গ্যাস্ট্রিক বা GERD-এ ভোগেন বা স্থূলতায় ভুগছেন, তাদের মাঝে এই ক্যানসার বেশি দেখা যায়।

✅ পাকস্থলীর ক্যানসার (Gastric Cancer):
Helicobacter pylori নামক ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হলে পাকস্থলীর ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

✅ অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার (Pancreatic Cancer):
এটি সাধারণত দেরিতে ধরা পড়ে এবং রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কম থাকে।


GI ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে করণীয় কী?

🔹 ৫০ বছরের নিচে হলেও, যদি পারিবারিক ইতিহাস থাকে তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে স্ক্রিনিং করানো উচিত।
🔹 প্রতিদিন ফলমূল, সবজি ও উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
🔹 নিয়মিত শরীরচর্চা করুন — অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা ব্যায়াম।
🔹 ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন — অতিরিক্ত ওজন অনেক ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
🔹 ধূমপান ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন।

তরুণদের মধ্যে ক্যানসার এখন আর দূরবর্তী কোনো রোগ নয়। সচেতনতা, নিয়মিত চেকআপ, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন — এই তিনটি দিকেই দিতে হবে গুরুত্ব। কারণ সময় থাকতেই প্রতিরোধই পারে আপনাকে সুস্থ রাখতে।

Mily

×