
ছবি: সংগৃহীত
উত্তর-পূর্ব ইংল্যান্ডের নিউক্যাসল ফার্টিলিটি সেন্টারে ২২ জন মহিলার মধ্যে ৮ শিশুর জন্ম হয়েছে নতুন ধরনের এক IVF (ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন) পদ্ধতিতে। এই চিকিৎসা পদ্ধতি মাতৃকোষ থেকে বংশগত জেনেটিক রোগ হওয়ার ঝুঁকি কমাতে উদ্ভাবিত। বুধবার প্রকাশিত এই ফলাফল চিকিৎসাবিজ্ঞানে এক ঐতিহাসিক অগ্রগতি হিসেবে গণ্য হচ্ছে।
এই বিপ্লবী পদ্ধতিটি সেইসব মহিলাদের জন্য নতুন আশা নিয়ে এসেছে, যাদের মাইটোকন্ড্রিয়াল DNA-তে (মাতৃকোষের শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র) মিউটেশন বা পরিবর্তন রয়েছে। মিউটেশন থাকলে সন্তানদের মধ্যে এমন গুরুতর বা অচিকিত্সেয় রোগের সম্ভাবনা থাকে, যা চোখের সমস্যা, ডায়াবেটিস, পেশীর দুর্বলতা ও অন্যান্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ৫,০০০ শিশুর মধ্যে একটির ক্ষেত্রে মাইটোকন্ড্রিয়াল রোগ থাকে, যা বর্তমানে চিকিৎসার বাইরে।
কীভাবে কাজ করে ‘তিনজনের IVF’?
বৈজ্ঞানিক পত্রিকা Nature-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই পদ্ধতিতে একটি ক্ষতিগ্রস্ত মাইটোকন্ড্রিয়া যুক্ত ডিম্বাণুর কেন্দ্রীয় অংশ (নিউক্লিয়াস) সুস্থ মাইটোকন্ড্রিয়া যুক্ত ডোনার ডিম্বাণুতে স্থানান্তর করা হয়। এতে শিশুর শরীরে জন্ম নেয় তিনজনের জিনের সংমিশ্রণ—জন্মদাতা মা ও বাবার নিউক্লিয়ার DNA এবং অন্য এক ডোনারের মাইটোকন্ড্রিয়াল DNA।
কোলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেম সেল বিশেষজ্ঞ ডাইত্রিচ এগলি বলেন, ‘এটি মাইটোকন্ড্রিয়াল রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী গবেষণা।’
নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটি জানায়, এই পদ্ধতিতে জন্ম নেওয়া আটটি শিশুই সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বিকাশ করছে। এই শিশুরা জন্মগ্রহণের সময় মাইটোকন্ড্রিয়াল DNA রোগের কোনও লক্ষণ দেখায়নি বা এমন পর্যায়ে ছিল যেগুলো রোগ সৃষ্টির সম্ভাবনা কম।
মাইটোকন্ড্রিয়াল দানের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া এক শিশুর মা বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের সন্তানকে সুস্থ জীবন দিতে পারি। এই পদ্ধতিই আমাদের সেই স্বপ্ন পূরণ করেছে। বছর কয়েকের অনিশ্চয়তার পর এ চিকিৎসা আমাদের নতুন আশা দিয়েছে, আর তারপর আমাদের সন্তান। এখন আমরা তাদের দেখে খুশি ও কৃতজ্ঞ। বিজ্ঞান আমাদের জীবন বদলে দিয়েছে।’
আরেক শিশুর মা যোগ করেন, ‘আমাদের পরিবার এখন সম্পূর্ণ। এই সফলতা মাইটোকন্ড্রিয়াল রোগের ভয় ভুলিয়ে দিয়েছে। আশা, আনন্দ ও কৃতজ্ঞতাই এখন আমাদের সঙ্গী।’
NHS-এর গবেষণায় নতুন সম্ভাবনা
ব্রিটিশ জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা (NHS) এর ‘মাইটোকন্ড্রিয়াল রিপ্রোডাকটিভ কেয়ার পাথওয়ে’ গবেষণা প্রকল্পের অংশ হিসেবে এই পদ্ধতি পরিচালিত হচ্ছে। যারা এই রোগে আক্রান্ত, তাদের জন্য এটি নতুন একটি চিকিৎসা বিকল্প।
নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক স্যার ডগ টার্নবুল বলেন, ‘মাইটোকন্ড্রিয়াল রোগ পরিবারগুলোকে বিধ্বস্ত করে দিতে পারে। আজকের এই সাফল্য অনেক নারীর জন্য নতুন আশার বাতিঘর হয়ে উঠেছে। যারা এই রোগ তাদের সন্তানদের কাছে পৌঁছাতে পারে, তারা এখন সুস্থ সন্তান জন্ম দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। NHS-এর নিয়ন্ত্রণে নিরাপদ পরিবেশে এই পদ্ধতি গবেষণার মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে।’
সূত্র: এনডিটিভি।
রাকিব