সূর্যালোক ও সালোকসংশ্লেষণ ছাড়াই জন্মাবে গাছ। সম্প্রতি ‘ইলেকট্রো-এগ্রিকালচার’ নামের নতুন এক রোমাঞ্চকর পদ্ধতি এনেছেন গবেষকরা, যার মাধ্যমে আলো ছাড়াই জন্মানো যাবে গাছ। ফলে খাদ্য উৎপাদনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে দাবি তাদের। গবেষকরা বলছেন, সূর্যের আলো ও সালোকসংশ্লেষণের উপর নির্ভর করার বদলে গাছ জন্মানোর জন্য বিদ্যুৎ ও কার্বন ডাই অক্সাইড ব্যবহার করবে এই পদ্ধতিটি। সালোকসংশ্লেষণ এমন এক প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে সূর্যের আলো ও কার্বন ডাই অক্সাইডকে খাদ্যে রূপান্তর করতে ব্যবহার করে উদ্ভিদ। এর জন্য দরকার সময়সহ আরও অনেক কিছুর।
গোটা বিশ্বে খাদ্যের চাহিদা ব্যাপক হারে বাড়ছে। ফলে প্রচলিত চাষের প্রক্রিয়া খাদ্য চাহিদা সামাল দেওয়ার জন্য আর যথেষ্ট নয় । তাই খাদ্য উৎপাদনের আরও দ্রুত ও কার্যকর সমাধান দরকার, আর সেখানেই সম্ভাবনা দেখাচ্ছে নতুন এই ‘ইলেকট্রো-এগ্রিকালচার’ পদ্ধতিটি। এ জৈবিক পদ্ধতিতে কার্বন ডাই অক্সাইডের সঙ্গে ইলেকট্রোলাইসিসকে সমন্বয় করে কাজ করবে নতুন পদ্ধতিটি, যা নাটকীয়ভাবে বাড়িয়ে তুলবে খাদ্য উৎপাদনকে। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে কৃষিজমির প্রয়োজনীয়তাও প্রায় ৯০ শতাংশ কমিয়ে আনতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
‘ইলেকট্রো-এগ্রিকালচার’-এর মাধ্যমে সূর্যের আলো বা কীটনাশকের প্রয়োজন ছাড়াই শহরাঞ্চল, মরুভূমি ও অন্যান্য দুর্গম জায়গায় ফসল ফলানো যাবে। একইসঙ্গে এ পদ্ধতিতে আরও কার্যকরভাবে সার ব্যবহার করতে পারবেন কৃষকরা, যা বর্জ্য কমিয়ে পরিবেশকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করবে। এ গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন ‘ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি’র কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ফেং জিয়াও। এই নতুন পদ্ধটির এক মূল উপাদান অর্থাৎ কার্বন ডাই অক্সাইডকে রাসায়নিক যৌগ ‘অ্যাসিটেট’-এ রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়াটিকে নিখুঁত করতে কাজ করছেন তিনি ও তার গবেষণা দলটি।
সাধারণত শক্তির প্রধান উৎস হিসাবে অ্যাসিটেট ব্যবহারের জন্য উদ্ভিদের জিনগত রূপান্তর ঘটানো দরকার হতে পারে। এর ফলে বিভিন্ন গাছ ঘরের মধ্যে জন্মানোর প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর করা সম্ভব। এ নতুন পদ্ধটির মূল লক্ষ্য এমন ধরনের গাছ জন্মানো, যা সালোকসংশ্লেষণের বদলে পুরোপুরি নির্ভর করবে অ্যাসিটেটের উপর। এ পদ্ধটির মাধ্যমে সফলভাবে গাছ জন্মানো গেলে তা উদ্ভিদ সংরক্ষণের পাশাপাশি বাঁচানো যাবে অনেক কৃষিজমি। আর প্রাকৃতিকভাবে কার্বন দূষণ ঠেকাতে সহায়তা করতে পারে এই পরিবর্তন, যা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়েও সাহায্য করবে। খাদ্য উৎপাদন ছাড়াও জ্বালানি বা বায়োডিগ্রেডএবল উপাদান তৈরিতেও ব্যবহার করা যেতে পারে এই ‘ইলেকট্রো-এগ্রিকালচার’।
গবেষকরা জোর দিয়ে বলছেন, অবশ্যই দায়িত্বশীলতার সঙ্গে বিকাশ করতে হবে নতুন পদ্ধতিকে। কারণ, বৈশ্বিক খাদ্য ঘাটতির অবস্থা যাতে আরও খারাপ না হয় তা নিশ্চিত করা জরুরী। এ যুগান্তকারী গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘জুল’-এ। গবেষণায় অর্থায়ন করেছে ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’।