ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

সকালেই ব্যায়াম না করলে কী হয়? বিজ্ঞান কী বলে?

প্রকাশিত: ০৭:০৫, ৪ জুলাই ২০২৫

সকালেই ব্যায়াম না করলে কী হয়? বিজ্ঞান কী বলে?

ছ‌বি: প্রতীকী

প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে শরীর একটু নড়াচড়া করলেই মনটাও যেন চনমনে হয়ে ওঠে। কিন্তু আমরা অনেকেই নানা ব্যস্ততা, আলসেমি কিংবা সময়ের অভাবে সকাল সকাল ব্যায়াম করতে পারি না। কেউ কেউ আবার ভাবেন, যেকোনো সময় ব্যায়াম করলেই তো হলো। সকাল না হোক, সন্ধ্যা বা রাতেই বা ক্ষতি কী? কিন্তু বিজ্ঞান বলছে, ব্যায়ামটা যদি সকালেই করা যায়, তবে শরীর-মন দুটোই পায় বাড়তি উপকার। আর যারা সকালে ব্যায়াম বাদ দেন, তারা এই বিশেষ সুবিধাগুলো অজান্তেই প্রতিদিনই মিস করেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সকালবেলা ব্যায়াম করলে শরীরের বিপাকক্রিয়া (Metabolism) সারা দিনের জন্য একধরনের ছন্দে চলে আসে। মানে, সকালের ব্যায়ামের ফলে শরীর খাবার হজম ও শক্তিতে রূপান্তরের কাজটা তুলনামূলক বেশি কার্যকরভাবে করতে পারে। তাই যারা সকালে ব্যায়াম করেন, তারা অনেক সময় বাড়তি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হন। আর যারা করেন না, তাদের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়াটা অনেকটা ধীর গতিতে চলে। ফলে ওজন বাড়ার আশঙ্কা থাকে বেশি।

সকালবেলা ব্যায়াম করলে মানসিকভাবে দিনটা শুরু হয় একধরনের ইতিবাচক অনুভূতি নিয়ে। শরীর যখন সচল হয়, তখন ‘এন্ডোরফিন’ নামের হরমোন নিঃসরণ হয়, যেটা আমাদের আনন্দ এবং প্রশান্তি দেয়। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সকালে নিয়ম করে কিছুটা সময় হাঁটা, দৌড়ানো বা হালকা ফিটনেস রুটিনে ব্যয় করেন, তাদের উদ্বেগ, মানসিক চাপ বা বিষণ্ণতার পরিমাণ তুলনামূলক কম থাকে। আর যারা সকালে ব্যায়াম করেন না, তাদের মুড সারা দিনেই একটু নিচু থাকতে পারে, মনমরা ভাবটা সহজেই কাটে না।

শুধু মানসিক স্বাস্থ্য নয়, সকালের ব্যায়াম ঘুমের উপরও প্রভাব ফেলে। যেহেতু সকালে ব্যায়াম করলে দেহ একটি অভ্যন্তরীণ ছন্দ তৈরি করে। যেটাকে বলে সারকেডিয়ান রিদম, তাতে রাতে ঘুম আসার সময়টা স্বাভাবিক হয়। বিজ্ঞানীরা বলেন, সকালের ব্যায়াম রাতে ঘুমের মান বাড়ায়। অন্যদিকে যারা বিকেল বা সন্ধ্যায় ব্যায়াম করেন, তাদের ঘুমে সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে যাদের ঘুম নিয়ে আগে থেকেই সমস্যা আছে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, সকালে ব্যায়াম করলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এবং মনোযোগও বাড়ে। বিশেষ করে যারা অফিসে বা পড়াশোনায় সারা দিন মনোযোগ ধরে রাখতে চান, তাদের জন্য এটা বেশ কার্যকর। কারণ, সকালের ব্যায়াম রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়িয়ে মস্তিষ্ককে করে তোলে আরও সচল। যারা সকালে ব্যায়াম করেন না, তারা হয়তো দিনের একদম শুরুতেই ক্লান্তি বা ঝিম ভাব অনুভব করতে পারেন, যা Productivity-তে প্রভাব ফেলে।

এছাড়া বিজ্ঞান বলছে, সকালবেলার সূর্যালোক আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। সকালে ব্যায়াম করলে আমরা সূর্যের আলোও পাচ্ছি, যা ভিটামিন ডি-এর উৎস। এই ভিটামিন হাড়, দাঁত ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু যারা সকালে ব্যায়াম করেন না, বিশেষ করে যারা ইনডোরে থাকেন, তারা এই প্রাকৃতিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন।

তবে এটাও ঠিক, দিনের অন্য সময় ব্যায়াম করলে যে কোনো উপকার হয় না, এমন নয়। কিন্তু গবেষণাগুলো বারবার বলছে, সকালের ব্যায়ামের উপকারিতা তুলনামূলক বেশি এবং দীর্ঘস্থায়ী। সকালে শরীর খালি পেটে থাকে, শরীর তখন টক্সিন ফেলার প্রক্রিয়ায় থাকে, সেই সময় হালকা ব্যায়াম শরীরকে করে আরও পরিচ্ছন্ন। যারা সকালে ব্যায়াম করেন না, তারা এই প্রাকৃতিক ‘ডিটক্স’ সুবিধাটাও হারান।

সবশেষে, সকালে ব্যায়াম না করলে শরীর সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয় না বটে, কিন্তু আমরা যে বিশেষ সুফলগুলো পেতে পারতাম— ততটা সতেজতা, মনোযোগ, ওজন নিয়ন্ত্রণ, ভালো ঘুম, মানসিক প্রশান্তি সেগুলোর অনেকটাই মিস করি। ফলে জীবনযাত্রার মানে আসতে পারে নেতিবাচক প্রভাব।

সুতরাং, একটু সময় বের করে, খুব ভারী না হলেও হালকা হাঁটা, কিছু স্ট্রেচিং বা ইয়োগা দিয়ে দিনটা শুরু করলে দিনটা যেমন ভালো কাটে, তেমনি শরীর ও মনও থাকে একধরনের সজীবতায় ভরা। আর সেটা না করলেই যে তার প্রতিটি মুহূর্তে একটা কিছু ‘মিস’ হচ্ছে, তা বিজ্ঞানের ভাষায় আরেকটু নিশ্চিতভাবে বলা যায়।

এম.কে.

×