ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৪ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২

আইনস্টাইনের ভবিষ্যদ্বাণী অনুসরণে মিলেছে ‘মৃত্যু কামনাকারী’ অদ্ভুত গ্রহের সন্ধান

প্রকাশিত: ২০:০৭, ৩ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২০:০৮, ৩ জুলাই ২০২৫

আইনস্টাইনের ভবিষ্যদ্বাণী অনুসরণে মিলেছে ‘মৃত্যু কামনাকারী’ অদ্ভুত গ্রহের সন্ধান

ছবি: সংগৃহীত

মহাকাশ গবেষণায় এবার এক চমকপ্রদ আবিষ্কার করলেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা এবং লিথুয়ানিয়া-পোল্যান্ডসহ একাধিক দেশের গবেষকদের যৌথ প্রচেষ্টায় শনাক্ত হয়েছে এক অদ্ভুত গ্রহ, যার আচরণ দেখে বিজ্ঞানীরা বলছেন—এটি যেন নিজেই নিজের মৃত্যু ডেকে আনছে।

এই অদ্ভুত গ্রহের নাম এইচপি ৬৭৫২২বি। আকারে এটি বৃহস্পতির মতো বড় হলেও এর ভবিষ্যৎ অত্যন্ত অনিশ্চিত। গবেষকদের মতে, আগামী ১০ কোটি বছরে গ্রহটি ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে নেপচুনের মতো হয়ে যাবে এবং হয়তো একদিন মহাকাশ থেকে সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যাবে।

‘মৃত্যু কামনাকারী’ গ্রহ!

এই অস্বাভাবিক পরিণতির কারণ কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাকহোল নয়। বরং, গ্রহটির নিজের নক্ষত্রের সঙ্গে অত্যধিক ঘনিষ্ঠ অবস্থানই ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাত্র ৭ দিনে একবার নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে এইচপি ৬৭৫২২বি। এমন ঘনিষ্ঠ কক্ষপথের ফলেই গ্রহটি ধীরে ধীরে মৃত্যুর পথে এগোচ্ছে। বিজ্ঞানীরা একে আখ্যা দিচ্ছেন ‘ডেথ উইশ প্ল্যানেট’, বাংলায় যার অনুবাদ দাঁড়ায় ‘মৃত্যু কামনাকারী গ্রহ’।

এই গ্রহটি আবিষ্কারে ব্যবহার করা হয়েছে নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ এবং TESS স্যাটেলাইট। এটি ঘূর্ণায়মান এইচপি ৬৭৫২২ নামের এক তরুণ নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে আবর্তন করছে, যার বয়স মাত্র দেড় কোটি বছর। তুলনায় আমাদের সূর্যের বয়স প্রায় ৪৫০ কোটি বছর।

আইনস্টাইনের তত্ত্বে আরও একটি গ্রহের সন্ধান

এদিকে, আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব অনুসরণ করে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন আরেকটি বহির্গ্রহ—‘২০২১ উয়ে বি’। এটি পৃথিবী থেকে প্রায় ৩ হাজার ২০০ আলোকবর্ষ দূরে, গ্যালাক্সির স্ফীতিস্থলে অবস্থিত। মহাকর্ষীয় মাইক্রোলেন্সিং পদ্ধতিতে এই গ্রহ শনাক্ত করা হয়েছে।

মাইক্রোলেন্সিং কীভাবে কাজ করে?

মাইক্রোলেন্সিং পদ্ধতিতে কোনো বড় বস্তু যখন দূরবর্তী নক্ষত্রের সামনে দিয়ে যায়, তখন সেই নক্ষত্রের আলো বাঁক নেয় ও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। এই আলো বিকৃতির মাধ্যমেই শনাক্ত করা যায় গ্রহের উপস্থিতি। গবেষক মারিয়াস মাসকোলিউনাস বলেন, ‘মাইক্রোলেন্সিং অনেকটা একটি পাখির ছায়া দেখে তার প্রকৃতি বোঝার মতো—সরাসরি দেখা না গেলেও বিশ্লেষণে বোঝা যায় এটি চড়ুই না রাজহাঁস।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ ধরনের সঠিক সারিবিন্যাস পাওয়া খুবই দুর্লভ এবং পর্যবেক্ষণযোগ্য নক্ষত্রগুলোর ৯০ শতাংশ নিজস্ব কারণে কম্পন করে, যা গবেষণাকে আরও জটিল করে তোলে।’

বিজ্ঞানীদের মতে, এই ধরনের দূরবর্তী ও প্রতিকূল পরিবেশে গ্রহের উপস্থিতি বর্তমান গ্রহ গঠনের তত্ত্বগুলোকে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করছে। কারণ এত দূরের ও অস্বাভাবিক কক্ষপথে থাকা গ্রহের অস্তিত্ব তাদের ধারণার বাইরে ছিল।

রাকিব

×