
ছবি: সংগৃহীত।
পৃথিবীর মতো আবহাওয়া ও শিলার অস্তিত্ব থাকা সত্ত্বেও মঙ্গলে কেন কোনো প্রাণ নেই—এই প্রশ্নের সম্ভাব্য ব্যাখ্যা দিয়েছে নাসার রোভার কিউরিওসিটি। সম্প্রতি পাওয়া কার্বোনেট খনিজের বিশ্লেষণ থেকে জানা যাচ্ছে, মঙ্গলে প্রাণ বিকাশের জন্য অনুকূল পরিবেশ ছিল, তবে তা ছিল অত্যন্ত স্বল্প সময়ের জন্য।
মঙ্গল বহুদিন ধরেই বিজ্ঞানীদের কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে ‘বাসযোগ্য’ গ্রহ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছিল। অতীতে গ্রহটিতে নদী, হ্রদ এমনকি সমুদ্র থাকার প্রমাণও মিলেছে। কিন্তু এত কিছুর পরও প্রাণের অস্তিত্ব মেলেনি কেন?
নেচার জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়— “মঙ্গলে বয়ে যাওয়া নদীগুলো স্থায়ী পানি সরবরাহ করতে পারেনি। ফলে যে পরিবেশে প্রাণ বিকশিত হতে পারত, তা পর্যাপ্ত সময় টিকেই থাকেনি।”
গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক ও শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রহবিজ্ঞানী এডউইন কাইট বলেন, “মঙ্গলের নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় স্বল্প সময়ের জন্য প্রাণের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু তা ছিল ব্যতিক্রম—not the rule.”
পৃথিবীতে বায়ুমণ্ডল উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে একটি প্রাকৃতিক চক্র—কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ ও পুনরায় নির্গমন। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, মঙ্গলে আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপ ছিল অত্যন্ত সীমিত। ফলে সেই প্রাকৃতিক আবহাওয়া চক্র কাজ করেনি। এতে মঙ্গল ধীরে ধীরে পরিণত হয়েছে এক শীতল মরুভূমিতে।
গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, ১০ কোটি বছর ধরে মঙ্গল ছিল সম্পূর্ণ শুষ্ক, যা প্রাণ সৃষ্টির পথে এক বিশাল বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
২০২১ সালে নাসার পারসিভিয়ারেন্স রোভার মঙ্গলের জেজেরো ক্র্যাটার নামক প্রাচীন নদীর মোহনায় অবতরণ করে। সেখানে পাওয়া যায় কার্বোনেট খনিজ, যা প্রমাণ করে এক সময় মঙ্গল স্বল্প সময়ের জন্য হলেও বসবাসযোগ্য ছিল।
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, মঙ্গলের গভীরে এখনো তরল পানির অস্তিত্ব থাকতে পারে।
নাসা ও চীন এখন প্রতিযোগিতায় নেমেছে—মঙ্গলের মাটি ও শিলা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে এনে বিশ্লেষণ করা হবে, যা হয়তো এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারে— "মহাবিশ্বে প্রাণ কতটা বিরল বা সাধারণ ঘটনা?"
যদি শিলায় প্রাচীন প্রাণের চিহ্ন পাওয়া যায়—তা হবে এক ঐতিহাসিক বার্তা: “প্রাণের সৃষ্টি খুব সাধারণ ব্যাপার। মহাবিশ্বে প্রাণ থাকতে পারে আরও অনেক গ্রহে।”
আর যদি না পাওয়া যায়—“তবে বুঝতে হবে, প্রাণের সৃষ্টি একটি জটিল ও বিরল ঘটনা।”
নুসরাত