ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

যেভাবে ফিনিক্স পাখির মত জুলাই আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়ে দেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

প্রকাশিত: ১২:৫১, ৪ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১২:৫১, ৪ জুলাই ২০২৫

যেভাবে ফিনিক্স পাখির মত জুলাই আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়ে দেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

ছবি: সংগৃহীত

২০২৪ সালের ১৬ জুলাই, কোটা সংস্কার আন্দোলন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। চাপে পড়ে সরকার তখন দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়। বহু শিক্ষার্থী হল ছেড়ে চলে যান। আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা অনেক শিক্ষার্থীকে তুলে নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ফলে আন্দোলন স্তিমিত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়।

ঠিক সেই সময়ই দৃশ্যপটে আসে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাঁদের দৃঢ়তা আন্দোলনে নতুন প্রাণ সঞ্চার করে।

এক আন্দোলনকারী বলেন, "যখন সারা দেশে পুলিশ হামলা শুরু করল, তখনই আমরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমে পড়ি। আম্মু বলেছিল কারফিউ চলছে, বের হতে মানা করেছিল। কিন্তু আমি বলেছিলাম, এখন বের না হলে আর কখনো বের হওয়া সম্ভব হবে না। এই রেজিম যদি চলতেই থাকে, তাহলে আমাদের কিছুই করার থাকবে না।"

১৮ জুলাই, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে পুলিশের হামলার ঘটনার কথা স্মরণ করে আরেকজন বলেন, "সেদিন আমরা সবাই এক প্ল্যাটফর্মে এসেছিলাম। ইস্ট ওয়েস্ট, নর্থ সাউথ, আইইউবি, সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রামপুরায় আমাদের সাপোর্ট দিতে আসে। সেই জনসমাগম ছিল বিশাল। তবে দুঃখজনকভাবে সেদিন ইম্পেরিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী জিল্লুর রহমান পুলিশের গুলিতে মারা যান। আমি নিজে তার লাশ দেখেছি। তখনই মনে হয়েছিল, এই সরকারকে আর রাখার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।"

তিনি আরও বলেন, "১৮ জুলাই পুলিশ চারপাশ থেকে হামলা চালিয়েছিল। আমরা ঘিরে ধরেছিলাম, ওরা মাঝখানে পড়ে গিয়েছিল। গুলি ফুরিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ওরা হামলা চালিয়েছিল। আমরা পিছু হটিনি। ব্র্যাক ও ইস্ট ওয়েস্টের মেডিকেল সেন্টার আমাদের ট্রিটমেন্ট দিয়েছে। আহতরা চিকিৎসা নিয়ে ফিরে আসত, আরেক দল সামনে যেত। আমরা জানতাম, যদি আমাদের সবাইকে মেরেও ফেলে, তবু আন্দোলন চলবেই—নতুন নেতৃত্ব উঠে আসবে।"

কারফিউ উঠে যাওয়ার পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গঠন করেন ‘সেন্ট্রাল প্রাইভেট অ্যালায়েন্স কমিটি’। এতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়করা যুক্ত হন। আন্দোলন আরও সংগঠিত হয়।

তিনি বলেন, "আমরা প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এরপর বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা শুরু করি। যখন দেখলাম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেভাবে দাঁড়াতে পারছে না, তখন আমরাই তাদের পাশে দাঁড়াই। কারণ, এটা সবার আন্দোলন ছিল।"

গোপন যোগাযোগের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আমরা ডিসকর্ড, হোয়াটসঅ্যাপের এনক্রিপ্টেড গ্রুপ ব্যবহার করতাম। জানতাম, আমাদের সবকিছু নজরদারির মধ্যে ছিল। তবু নিরাপত্তা নিশ্চিত করে পরিকল্পনা করতাম।

"আরেকটা বড় বিষয় ছিল, আমরা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করতাম। সরকার সেটা ধরতে পারেনি। সব বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা এক ফ্রিকোয়েন্সিতে এনেছিলাম। ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমাদের সুবিধা হয়েছিল—ওরা বুঝতে পারছিল না, আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে। এটাই আমাদের জন্য বড় শক্তি ছিল।"

এই আন্দোলনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন—যেখানে ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে আন্দোলনকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য তাঁরাই হয়ে ওঠেন সবচেয়ে বড় শক্তি।

আবির

×