ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৫ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

দরজার পাশে দাঁড়িয়ে মায়ের প্রতীক্ষা, আর ফিরবে না তার জাফর

 মোঃ তানভীর হাসান, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, মঠবাড়িয়া, পিরোজপুর

প্রকাশিত: ১৯:২৯, ৪ জুলাই ২০২৫

দরজার পাশে দাঁড়িয়ে মায়ের প্রতীক্ষা, আর ফিরবে না তার জাফর

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র  আন্দোলনের গুলিতে ঝরে গেল একজন বাসচালকের জীবন- কোনো মিছিলে ছিলেন না, তবু লাশ হয়ে ফিরলেন বাড়ি | প্রায় বছর হয়ে গেল মা সেতারা বেগম প্রতিদিন সন্ধ্যায় দরজার দিকে তাকিয়ে থাকেন। যেদিন থেকে ছেলে আবু জাফর শহর থেকে ডিউটি শেষ করে বাড়ি ফিরবে বলে গিয়েছিল, সেদিন থেকেই এই অপেক্ষা তাঁর নিত্যসঙ্গী। মাঝে মাঝে স্বপ্নে দেখেন, ছেলে ফিরে এসেছে। ঘরে ঢুকেই বলে- ‘মা,খেতে দে’। ঘুম ভাঙতেই আবার বাস্তবতা গলা চেপে ধরে। আর তিনি ফুঁপিয়ে কাঁদেন- নীরব, নিঃস্ব আর শূন্য এক কান্না।

গত ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই, রাজধানীর গোলাপবাগে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলের মধ্যে পড়েই গুলিবিদ্ধ হন বাসচালক আবু জাফর। সেদিনই ঢাকার রাস্তায় লাশ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। পরদিন রাতে গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার ছোট মাছুয়া গ্রামে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়।

আবু জাফর ছিলেন পরিবারের ভরসার শেষ খুঁটি। স্ত্রী, তিন সন্তান আর বৃদ্ধা মাকে নিয়ে ছোট্ট সংসার তাঁর। চালক হিসেবে শ্যামলী পরিবহনে চাকরি করতেন। সংসারে আয় বলতে ছিল তাঁর হাতের উপার্জন আর পৈতৃক একটি ভিটেমাটি।

জাফরের বড় ছেলে পড়ালেখা শেষ করে এখনো বেকার। মেজো ছেলে ঢাকার কেরানীগঞ্জে একটি মাদ্রাসায় পড়ছে, আর ছোট ছেলটি ষষ্ঠ শ্রেণিতে। সংসারটা এখন যেন হঠাৎ করেই দিশেহারা। মা সেতারা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন,
'আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করত না, মিছিলে ছিল না। সে শুধু ডিউটির পথে যাচ্ছিল। কেন তার মতো নিরীহ একজনের গায়ে গুলি লাগবে?'

ঘটনার দিন সন্ধ্যায় শ্যামলী পরিবহনের এক কাউন্টার ম্যানেজারের ফোন আসে। তাঁকে বাস কাউন্টারে যেতে বলা হয়। জাফর বের হন ঢাকার বাসা থেকে। কর্মস্থলের দিকে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছান রাজধানীর যাত্রাবাড়ী-গোলাপবাগ এলাকায়। সেখানেই পুলিশের ছোড়া গুলি এসে বিদ্ধ করে তাঁকে। পথচারীরা তাঁকে উদ্ধার করে মুগদা হাসপাতালে নিয়ে যায়।কিন্তু তখন সব শেষ।

একজন পথচারী নারীর মুঠোফোন থেকেই প্রথমবার জাফরের মৃত্যুসংবাদ পায় তার পরিবার। তখন থেকেই ঘরের মধ্যে কান্না থামেনি, বিশেষ করে মা সেতারা বেগমের।

আবু জাফরের মা সেতারা বেগম এখন আর বেশি কিছু চান না।কেবল একটা চাওয়া ন্যায়বিচার।আমার মৃত্যুর আগেই ছেলের হত্যার বিচার দেখে যেতে চাই।যে মা সন্তান হারায় সেই বুঝবে এর বেদনা কি।মায়ের সামনে থেকে সন্তানের আগে চলে যাওয়া যে কত কষ্টের।আর কোনও মায়ের বুক খালি না হয়। আমার ছেলেটার কি দোষ ছিল? 

এই ঘটনায় জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় উপজেলা প্রশাসন ও সমাজসেবা কার্যালয় থেকে ঈদ উপহারসহ সহায়তা দেওয়া হয়েছে।তাদের সার্বিক খোঁজ খবর আমরা রাখছি।পরিবারটি যেন আরও সরকারি সহায়তার আওতায় আসে,সে বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে বলে জানান,সমাজসেবা  কর্মকর্তা মো. শফিকুল আলম।

Jahan

×