ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৫ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২

আল জাজিরার অনুসন্ধানে চাঞ্চল্যকর তথ্য

বাংলাদেশিদের কিডনি পাচার হচ্ছে ভারতে

প্রকাশিত: ২৩:৫৭, ৪ জুলাই ২০২৫

বাংলাদেশিদের কিডনি পাচার হচ্ছে ভারতে

ছবি: সংগৃহীত।

বাংলাদেশ থেকে ভারতে কিডনি পাচারের এক ভয়ঙ্কর সিন্ডিকেটের চিত্র উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে। শুক্রবার (৪ জুলাই) প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দারিদ্র্যপীড়িত বাংলাদেশি জনগণের অসহায়তা আর ভারতের ধনী রোগীদের দ্রুত প্রতিস্থাপনের চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে কিডনি পাচার এখন রীতিমতো একটি বাণিজ্যিক ব্যবসায় রূপ নিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতীয় আইনে কিডনি প্রতিস্থাপন সাধারণত নিকটাত্মীয়দের মধ্যেই অনুমোদিত। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে সরকারের অনুমোদনে আত্মীয় নয় এমন দাতার প্রতিস্থাপনও সম্ভব। এই আইনি ফাঁক গলে, দালালচক্র নকল পরিচয় ও ভুয়া আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে তোলে, তৈরি করে জাল কাগজপত্র এবং তা দিয়ে প্রতিস্থাপন সম্পন্ন করে থাকে।

বিশেষভাবে আলোচনায় এসেছে জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলার বাইগুনি গ্রাম, যেখানে প্রায় ৬,০০০ মানুষ একটি করে কিডনি বিক্রি করেছেন। গ্রামটি এখন স্থানীয়ভাবে পরিচিত ‘এক কিডনির গ্রাম’ নামে। ২০২৩ সালে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল গ্লোবাল হেলথ-এ প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে, এই অঞ্চলে প্রতি ৩৫ জন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজন কিডনি বিক্রি করেছেন। অধিকাংশই ৩০-৪০ বছর বয়সী পুরুষ, যারা দারিদ্র্য, ঋণের বোঝা, কিংবা মাদক-জুয়ায় আসক্তির কারণে এই পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন।

কিন্তু বহু ক্ষেত্রে কিডনি বিক্রির পুরো অর্থও পাচ্ছেন না বিক্রেতারা। অনেককেই প্রতিশ্রুত অর্থের একটি অংশ দিয়েই বিদায় করে দিচ্ছে চক্রটি।

ভারতে প্রতিবছর প্রায় দুই লাখ মানুষ চূড়ান্ত পর্যায়ের কিডনি রোগে আক্রান্ত হন, অথচ ২০২৩ সালে মাত্র ১৩,৬০০টি কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে। এই বিশাল চাহিদা ও সরবরাহের ব্যবধানই পাচারকারীদের জন্য সুযোগ তৈরি করছে।

২০১৯ সালে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্তে কিছু চিকিৎসক ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ২০২৪ সালে দিল্লিতে গ্রেফতার হন ড. বিজয়া রাজাকুমারি, যিনি ২০২১-২০২৩ সালের মধ্যে অন্তত ১৫ জন বাংলাদেশির কিডনি প্রতিস্থাপন করেছিলেন। কিন্তু এরপরও কাঙ্ক্ষিত কোনও পরিবর্তন আসেনি।

ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনসুলার বিভাগের মহাপরিচালক শাহ মুহাম্মদ তানভির মনসুর বলেন, ভারতের হাসপাতালগুলো অনেক সময় দায় এড়িয়ে জানায় যে, তাদের দেয়া কাগজপত্র যাচাই করেই অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে এখনো এমন কোনো তথ্য বিনিময়ের যৌথ ব্যবস্থা নেই যার মাধ্যমে এসব চক্রের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও WHO-এর 'Organ Transplantation Taskforce'-এর সদস্য ড. মনিরুজ্জামান বলেন, প্রতারণার কৌশল প্রায় একই—জাল পরিচয়পত্র, ভুয়া নোটারি, এবং ভুয়া আত্মীয়তা। এর ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গ পাচার রোধে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা দিন দিন প্রকট হচ্ছে।

নুসরাত

আরো পড়ুন  

×