
সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার বুকজুড়ে প্রবাহিত ঐতিহাসিক কাকেশ্বর খাল আজ দখল, দূষণ ও অবহেলার বিষদাঁত গেঁথে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর পথে। অথচ একসময় এই খালই ছিল এলাকার মানুষের জীবন-জীবিকার প্রধান উৎস। ইতিহাসের পাতা থেকে কাকেশ্বরের গৌরবগাঁথা কাকেশ্বর খাল একসময় গোলাপগঞ্জ ও আশপাশের অঞ্চলের পানি নিষ্কাশন, কৃষিকাজে সেচ এবং মৎস্য আহরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ছিল। বর্ষাকালে খালটি অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি সঞ্চালন করে আশপাশের বড় নদীগুলোর (সুরমা ও কুশিয়ারা) সাথে সংযুক্ত থাকত, যা বন্যা প্রতিরোধেও সহায়ক ভূমিকা রাখত।
স্থানীয় প্রবীণদের ভাষ্যমতে. এই খাল দিয়েই প্রাচীন যুগ ও ব্রিটিশ আমলে গ্রামের সাধারণ মানুষ নৌকাযোগে যাতায়াত করতেন। গোলাপগঞ্জ সদর থেকে বিভিন্ন হাট-বাজারে ধান, কাঠ, মাছসহ নানা পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত হতো কাকেশ্বর খাল। এটি ছিল এক সময়ের অন্যতম ব্যস্ততম নৌপথ।
বর্তমান চিত্র হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্য বর্তমানে কাকেশ্বর খালের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। খালের অধিকাংশ জায়গা এখন দখল হয়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতিদিন খালে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। বিশেষ করে বাজার এলাকার কিছু দোকানদার, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ খালটিকে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত করেছেন। অনেকেই খালের জায়গায় দোকানঘর নির্মাণ করেছেন, যা খালের স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করছে।
এই দখল ও দূষণের ফলে ফলে অল্প বৃষ্টিতেই ঢাকাদক্ষিণ বাজারের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, যা মানুষের চলাচল ও জীবন যাত্রাকে দুর্বিষহ করে তোলে। পানি ঢুকে পড়ে দোকানঘরে, ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার আঙিনায়ও পানি জমে শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে পড়েন। এমনকি হাট-বাজারের রাস্তায় হাঁটাচলাও নয়, সাধারণ মানুষের জন্য কঠিন হয়ে ওঠে।
কিছুদিন আগে খালটির দখল উচ্ছেদ ও খননকাজ শুরু হলেও তা অজ্ঞাত কারণে বন্ধ হয়ে যায়। তবে গত তিন জুলাই (বৃহস্পতিবার) থেকে স্থানীয় প্রশাসনের নতুন উদ্যোগে আবারও শুরু হয়েছে উচ্ছেদ ও সংস্কার কাজ।
স্থানীয়দের প্রত্যাশা, সঠিক পরিকল্পনা ও কার্যকর বাস্তবায়ন হলে কাকেশ্বর খাল আবারও ফিরে পেতে পারে তার প্রাচীন পরিচিতি। শুধু প্রশাসনিক উদ্যোগ নয়, সাধারণ জনগণের সচেতনতা ছাড়া এই ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়। আর সংস্কার কার্যক্রম যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয়, এবং খালটির স্বাভাবিক প্রবাহ ও প্রশস্ততা ফিরিয়ে আনা যায়, তাহলে এলাকার দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা ও ভোগান্তির অবসান ঘটবে।
Mily