
🔸 সাংবাদিকতা শেখা নারীরা কোথায় হারিয়ে যান?
🔸 মাঠে নেই নারী নেতৃত্ব, পেছনে নিরাপত্তাহীনতা ও সামাজিক বাঁধা
কুমিল্লায় সাংবাদিকতা পেশায় নারীদের অংশগ্রহণ দীর্ঘদিন ধরেই সীমিত। যদিও ইতিহাস বলছে, এই জেলার নারীরা এক সময় সাংবাদিকতায় পথিকৃৎ ছিলেন। ত্রিপুরা হিতৈষী পত্রিকার প্রথম সম্পাদক গুরু দয়াল সিংহের পর তার উত্তরসূরী ঊর্মিলা সিংহ হন কুমিল্লার প্রথম মহিলা সম্পাদক — অনেকের মতে, তিনিই বাংলাদেশের প্রথম মহিলা সম্পাদক।
তবে বর্তমানে কুমিল্লায় নিবন্ধিত নারী সাংবাদিক ৪০ জনের মতো হলেও পেশাদারভাবে সাংবাদিকতায় সক্রিয় নারী হাতে গোনা কয়েকজন মাত্র।
কুমিল্লা জেলা তথ্য অফিসের তথ্য মতে, জেলায় মোট ৪০ জন নারী সাংবাদিক নিবন্ধন করেছেন। তবে এই সংখ্যার বাইরেও কিছু নারী আছেন যারা লেখালেখি করেন, কিন্তু তাদের পেশাদার ভূমিকা প্রায় অনুপস্থিত।
অনেকে আছেন যারা পত্রিকার ‘প্রিন্টার্স লাইনে’ নামমাত্র পদে যুক্ত থাকলেও মাঠ পর্যায়ে রিপোর্টিং করেন না। যেমন, ‘সাপ্তাহিক বাংলার আলোড়ন’ পত্রিকার সম্পাদক ফারহানা শারমিনের দায়িত্ব কার্যত পালন করেন প্রধান সম্পাদক রফিকুল ইসলাম। আবার 'নতুনপত্র'-এর শামসুন্নাহার বাকী কিংবা ‘কুমিল্লা দর্পণ’-এর নাগমা মোর্শেদ- এদের নাম থাকলেও পেশাদার সাংবাদিক বলা যায় না। আর তালিকায় যেসব নাম আছে, মাঠে তাদের দেখা মেলে না। নাম আছে যারা, কিন্তু সক্রিয়তা নেই তাদের মধ্যে রয়েছেন, শাহানা রাব্বী (সপ্তাহিক আমোদ সম্পাদক বাকীন রাব্বীর স্ত্রী, সাংবাদিকতা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হলেও মাঠে আসেননি), কাজী উম্মে সালমা (সানজু), শাহীনুর সুলতানা (একসময় কুমিল্লার কাগজে কাজ করলেও এখন যুক্ত নন), ফারজানা লোপা, দীপান্বিতা সাহা ঊর্মি, নাসরিন লিপি — সবাই শিক্ষিত, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, তবুও সাংবাদিকতা ছেড়ে দিয়েছেন। এদের মধ্যে সংসার সামলে সাংবাদিকতায় হাতেগোনা কিছু মুখ নিবেদিতভাবে কাজ করছেন এমন ক’জন নারী আছেন, যাদের কাজ চোখে পড়ে তারা হলেন, ইয়াসমিন রীমা (দি নিউ এইজ প্রতিনিধি, আগে বর্ণপাঠ ও পাঠকবার্তা সম্পাদনা করতেন), পারভীন হাসানাত — সাপ্তাহিক অভিবাদনের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, কাগজ ছাপা থেকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার সব দায়িত্বে যুক্ত। ফাহিমা বেগম প্রিয়া — আজকালের খবর-এ কর্মরত, মাঠ সাংবাদিকতায় সক্রিয়, একাধিকবার সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন।
সাংবাদিকতা ‘শেখে হারিয়ে যাওয়া’ নারীদের দীর্ঘ তালিকা। নাঈমুল ইসলাম খানের সংস্থা বিসিডিজেসি, দৈনিক আমোদ, রূপসী বাংলা, বর্ণপাঠসহ অনেক সংস্থা নারী সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ দিলেও তারা বেশিরভাগই আর পেশায় টিকতে পারেননি। কেউ চাকরির অভাবে, কেউ সামাজিক বাধায়, কেউবা নিরাপত্তাহীনতায় সরে গেছেন।
নারী সাংবাদিক সংগঠন নেই, নেই নিজস্ব জার্নাল
কুমিল্লায় নারী সাংবাদিকদের কোনো সংগঠন নেই। 'উইমেন ইন মিডিয়া ফোরাম-কুমিল্লা' একসময় গঠিত হলেও সেটি আর টিকে নেই। নারী সম্পাদিত বা নেতৃত্বাধীন কোনো নিয়মিত পত্রিকাও চোখে পড়ে না।
সমস্যার মূল কোথায়?
আন্তর্জাতিক সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিনের প্রোগ্রাম অফিসার রোমানা আক্তার বলেন, “সাংবাদিকতা ঝুঁকিপূর্ণ পেশা—তাই মেয়েরা এখনো প্রস্তুত নয় বলেই মনে হয়।”
এদিকে সাংবাদিক ফাহিমা বেগম প্রিয়া বলেন্ “মেয়েদের সনাতন মানসিকতা না বদলালে সাংবাদিকতায় তারা সফল হতে পারবে না।”
কুমিল্লায় নারী সাংবাদিকতা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়ে গেছে। পুরুষ সাংবাদিকদের সহযোগী হিসেবেই নারীদের উপস্থিতি বেশি, নেতৃত্বে নয়।
সাংবাদিকতা পেশায় নারী-পুরুষ সমান অংশগ্রহণ ছাড়া গণমাধ্যম পূর্ণতা পায় না — কুমিল্লায় এই চিত্র বদলাতে প্রয়োজন সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও নারীদের দীর্ঘমেয়াদি পেশাগত পরিকল্পনা।
রাজু