ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৫ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২

আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে তালেবান ফিরে আসছে?

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:১৮, ৫ জুলাই ২০২৫

আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে তালেবান ফিরে আসছে?

ছবি: সংগৃহীত

২০২১ সালে ক্ষমতায় আসার পর এই প্রথম কোনও দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিল। রাশিয়া এই ঐতিহাসিক ঘোষণা দিয়ে তালেবানদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারে অঙ্গীকার করেছে।

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, “আফগানিস্তানে ইসলামী আমিরাত সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়া আমাদের মধ্যে উৎপাদনশীল দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার পথ সুগম করবে।” এতে বলা হয়, দুই দেশের মধ্যে জ্বালানি, পরিবহন, কৃষি এবং অবকাঠামোগত খাতে সহযোগিতা গড়ে তোলা হবে।

তালেবান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক্স-এ (সাবেক টুইটার) জানায়, রুশ রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি জিরনভ কাবুলে তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুতাক্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ক্রেমলিনের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন।

মুতাক্কি এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “রাশিয়ার এই সাহসী পদক্ষেপকে আমরা কৃতজ্ঞচিত্তে স্বাগত জানাই। ইনশাআল্লাহ, এটি অন্য দেশগুলোর জন্যও একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।”

১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে সোভিয়েত সেনা অভিযান শুরু হয়, যা দশ বছরব্যাপী এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে রূপ নেয়। ১৫,০০০ এরও বেশি সোভিয়েত সেনা এতে প্রাণ হারায়। এরপর ১৯৯২ সালে কাবুলে রুশ দূতাবাসে রকেট হামলার পর মস্কো দূতাবাস বন্ধ করে দেয়। ১৯৯৬ সালে তালেবান ক্ষমতায় এলে তারা জাতিসংঘ কম্পাউন্ডে আশ্রয় নেওয়া রাশিয়া-সমর্থিত সাবেক প্রেসিডেন্ট নাজিবুল্লাহকে হত্যা করে।

২০০১ সালে ৯/১১ হামলার পর রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের পাশে দাঁড়িয়ে তালেবানবিরোধী অভিযানে সহায়তা করে। ২০০৩ সালে তালেবানকে “সন্ত্রাসী সংগঠন” হিসেবে চিহ্নিত করে রাশিয়া। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আইএসআইএস-খোরাসানের হুমকি বেড়ে যাওয়ায় তালেবানকে এ বিষয়ে মিত্র হিসেবে বিবেচনা করছে মস্কো।

২০২৪ সালে মস্কোতে তালেবানকে “সন্ত্রাসী” তকমা প্রত্যাহার করে নেয় এবং প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, “তালেবান এখন বাস্তবতা, আমাদের উচিত আদর্শ নয়, বাস্তবতা মাথায় রেখে কাজ করা।”

আরো স্বীকৃতি দিতে পারে কারা?

চীন: তালেবানের সঙ্গে ২০১৯ সালেই আলোচনায় বসে চীন। ২০২৩ সালে চীনের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান CNPC-এর একটি শাখা তালেবানের সঙ্গে ২৫ বছরের তেল উত্তোলন চুক্তি করে। ২০২৪ সালে তারা তালেবান প্রতিনিধি বিলাল কারিমকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানায়।

ইরান: ১৯৯৮ সালে মাজার-ই-শরীফে ইরানি কূটনীতিকদের হত্যা করে তালেবান। এরপর সম্পর্ক ছিন্ন হলেও আইএস-খোরাসানকে বড় হুমকি হিসেবে দেখে ইরান এখন তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে। ২০২৫ সালের মে মাসে মুতাক্কি তেহরানে ডায়ালগ ফোরামে অংশগ্রহণ করেন।

ভারত: ২০০১ সালে তালেবান পতনের পর ভারত কাবুলে দূতাবাস চালু করে। তবে ২০২১ সালে তালেবান ফের ক্ষমতায় এলে দূতাবাস সাময়িকভাবে বন্ধ হয়। কিন্তু ২০২৫ সালে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুতাক্কির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন।

পাকিস্তান: একসময় তালেবানের প্রধান আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষক হলেও এখন তাদের সম্পর্ক টানাপোড়েনে ভরা। পাকিস্তান অভিযোগ করে, তালেবান সরকার তাদের সীমান্তে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (TTP)-এর সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিচ্ছে। ডিসেম্বর ২০২৪-এ পাকিস্তান আফগানিস্তানের পাকতিয়া প্রদেশে বিমান হামলা চালায়, তালেবান দাবি করে ৪৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়।

বিশেষজ্ঞ কাবির তানেজা বলেন, “আফগানিস্তানের আশপাশের দেশগুলোর আর বিকল্প নেই—তাদের কৌশলগত ও নিরাপত্তাজনিত কারণেই তালেবানের সঙ্গে কাজ করতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “রাশিয়ার স্বীকৃতি তালেবানের জন্য কূটনৈতিক বড় বিজয়।”

মুমু ২

×