
ছবি: সংগৃহীত
অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশ 'চাইনিজ ব্লেসিং স্ক্যাম'-এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা সিডনির ৭৭ বছর বয়সী এক মহিলাকে প্রতারণার মাধ্যমে ১,৩০,০০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার (প্রায় ৮৫,০০০ মার্কিন ডলার) মূল্যের নগদ অর্থ ও গয়না থেকে বঞ্চিত করে।
নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশ জানায়, স্ক্যামটি বহু বছর ধরেই বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশে ঘটে আসছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও নিউজিল্যান্ডে। এসব প্রতারণা মূলত বয়স্ক এশীয় নারীদের লক্ষ্য করে পরিচালিত হয়।
সিডনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বৃহস্পতিবার এক ৬৩ বছর বয়সী নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই গ্রেপ্তার এসেছে স্ট্রাইক ফোর্স সেনটিনেল নামক একটি বিশেষ তদন্ত ইউনিটের তত্ত্বাবধানে, যারা এপ্রিল মাসে এই স্ক্যামের তদন্তে নিয়োজিত হয়।
পরের দিন ব্রিসবেন বিমানবন্দর থেকে তার এক সহযাত্রীকেও (তার বয়সও ৬৩ বছর) গ্রেপ্তার করা হয়, যখন সে চীনের উদ্দেশে দেশত্যাগ করতে যাচ্ছিল। পুলিশ জানায়, তার বিরুদ্ধেও দ্রুত অভিযোগ গঠন করা হবে।
স্ক্যামটির ধরন হলো—প্রতারকরা নিজেদের ‘আধ্যাত্মিক চিকিৎসক’ বা ‘ভবিষ্যৎবক্তা’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে বয়স্ক নারীদের বিশ্বাস করিয়ে তাদের অর্থ ও গয়না একটি ব্যাগে রাখতে বলে, এবং নির্দেশ দেয় এটি কয়েক সপ্তাহ বা মাস পর্যন্ত না খোলার জন্য। পরে ব্যাগ খুললে দেখা যায় সবকিছু উধাও।
নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশের গোয়েন্দা সুপারিনটেনডেন্ট গাই মাগি বলেন, “এটি ধূর্ত উপায়ে সংঘটিত ডাকাতি। প্রতারকরা দলবদ্ধভাবে আক্রমণ করে, যেন শিকার খুঁজে পাওয়া হায়েনার দল।”
স্ট্রাইক ফোর্স সেনটিনেল এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০টি অভিযোগ পেয়েছে, যাতে ৩০ লক্ষ অস্ট্রেলিয়ান ডলারের (প্রায় ২০ লক্ষ মার্কিন ডলার) সম্পদ চুরি হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এই স্ক্যাম নেটওয়ার্কে অন্তত ৫০ জনের সম্পৃক্ততা আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যাদের মধ্যে ২৫ জনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে এবং ১১টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজেও আরও ২৫ জন সন্দেহভাজনকে শনাক্ত করা হয়েছে।
গাই মাগি বলেন, এই অপরাধ ব্যাপকভাবে ‘অপ্রকাশিত’ থেকে যাচ্ছে, কারণ অনেক ভুক্তভোগী লজ্জা বা অপরাধবোধে তা জানান না। বাস্তবে ভুক্তভোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।
গত বছর নিউজিল্যান্ডেও একই ধরনের একটি ঘটনা ঘটে, যেখানে তিন চীনা নাগরিক গ্রেপ্তার হন দেশ ছাড়ার চেষ্টা করার সময়। তারা অক্টোবর মাসে দেশটিতে পৌঁছানোর কয়েক দিনের মধ্যেই বৃদ্ধাদের লক্ষ্য করে প্রতারণা করে, এবং প্রায় ৩০,০০০ নিউজিল্যান্ড ডলারের (প্রায় ১৮,০০০ মার্কিন ডলার) নগদ অর্থ ও গয়না নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে।
নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশ জনগণকে সাবধান করে বলেছে, অপরিচিত কেউ যদি ‘হিবাল ডাক্তার’ বা আধ্যাত্মিক চিকিৎসকের সন্ধান চায়, তাহলে সতর্ক থাকতে হবে। কাউকে বাসায় না নেওয়া, কোনো মূল্যবান জিনিস হস্তান্তর না করা এবং কোনো অর্থ বা গয়না আশীর্বাদ দেওয়ার নাম করে কোনো আচার-অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সূত্রঃ টাইমস অফ ইন্ডিয়া
নোভা