ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৫ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২

রাকিবুলের সমন্বিত খামারে ‘তাই ওয়ান কিং’ পেঁপের বাম্পার ফলন

মনোয়ার হোসেন লিটন, কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ১৫:২১, ৫ জুলাই ২০২৫

রাকিবুলের সমন্বিত খামারে ‘তাই ওয়ান কিং’ পেঁপের বাম্পার ফলন

পড়াশোনার পাশাপাশি কৃষকের সন্তান হিসেবে কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নিজস্ব দুই একর জমিতে সমন্বিত খামারের পঞ্চাশ শতাংশ জমিতে উন্নত জাতের ‘তাই ওয়ান কিং’ পেঁপে চাষাবাদে বাম্পার ফলনে মুনাফা অর্জনের স্বপ্ন বুনছেন রাকিবুল ইসলাম (২১)। ‘তাই ওয়ান কিং’ জাতের পাঁচ শতাধিক গাছের বাগান থেকে ১০ থেকে ১২ হাজার কেজি পেঁপে উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শ ও সহযোগিতায় গড়ে ওঠা সমন্বিত খামারে রয়েছে হাঁস, পুকুরে মাছ, পুকুর পাড়ে সবজি, সুপারি চারাগাছের পাশাপাশি বাবা ও ছেলের যৌথ শ্রমে জৈব সার উৎপাদন ব্যবস্থা। সমন্বিত খামারের উদ্যোক্তা রাকিবুল ইসলাম উপজেলার রাজারহাট সদর ইউনিয়নের দুধখাওয়া গ্রামের নজরুল ইসলামের পুত্র এবং সরকারি মীর ইসমাইল হোসেন কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।

রাকিবুল ইসলাম বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এসএসিপি-রেইনস প্রকল্পের সহযোগিতায় দুই একর জমিতে সমন্বিত খামার তৈরির চেষ্টা করছি। তার মধ্যে পঞ্চাশ শতাংশ জমিতে পাঁচ শতাধিক ‘তাই ওয়ান কিং’ পেঁপের চারাগাছ ৫ মাস আগে রোপণ করি। উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় কৃষি উপ-সহকারী সোহানা আপার নিয়মিত খোঁজখবরে প্রায় ৫ মাসের নিবিড় পরিচর্যায় গড়ে ওঠা বাগান থেকে পেঁপে কর্তন শুরু করছি। আশা করছি, প্রতিটি গাছে কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ কেজি পেঁপে উৎপাদন হবে।

সঙ্গে পুকুর পাড়ে মালচিং পদ্ধতিতে বিভিন্ন জাতের সবজি রোপণ করেছি, সাড়ে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার সুপারি চারাগাছ আছে, পাশেই ঘরে দেড় শতাধিক দেশি হাঁস আছে। এছাড়াও পঁচাত্তর শতাংশ পুকুরে কয়েক জাতের প্রায় ২০ মণ মাছ চাষ করছি। এতে আমাদের সব মিলিয়ে তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আমার বাগানের পেঁপে, মাছ, হাঁস, সুপারির চারাগাছ বাজারজাত করলে কমপক্ষে ৬ থেকে ৯ লাখ টাকা আয় হবে।

রাজারহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোছা. সাইফুন্নাহার সাথী বলেন, স্মলহোল্ডার এগ্রিকালচার কম্পিটিটিভনেস প্রকল্পের সহযোগিতায় ৩০ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। যুব মডেল বাস্তবায়নের জন্য রাকিবুল ইসলামকে সমন্বিত খামার করতে উদ্বুদ্ধ ও সহযোগিতা করি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এসএসিপি-রেইনস প্রকল্পের বিভাগীয় কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. নজরুল ইসলাম বলেন, খামারি যুবক/যুবতীদের ইনডিভিজুয়াল মডেল পেঁপে বাগান করা হয়েছে। এখানে পাঁচ শতাধিক ‘তাই ওয়ান কিং’ পেঁপের চারাগাছ রোপণ করা হয়েছে। প্রতিটি গাছ থেকে ২০ থেকে ৩০ কেজি পেঁপে উৎপাদন হবে। রাকিবুল ইসলাম উদ্বুদ্ধ হয়ে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন শুরু করেছে। নিজস্ব তৈরি কেঁচো সার জমিতে ব্যবহারের পাশাপাশি বিক্রিও করতে পারবে। আমরা তাকে সমন্বিত খামার গড়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছি।

উদ্বুদ্ধ হয়ে সে পুকুরে মাছ চাষাবাদ শুরু করেছে, ছোট হলেও হাঁসের খামার করেছে, জমিতে কয়েক হাজার সুপারি চারাগাছ করেছে। আমরা উপজেলা পর্যায়ে প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও মৎস্য অধিদপ্তরের সঙ্গে চাষীকে সংযুক্ত করেছি। এ মডেল দেখে যদি অন্যান্য কৃষকেরাও এগিয়ে আসে, তাহলে আমরা মনে করি দেশের পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে এটি অনেকটা সহায়ক হবে।

সানজানা

×