
ছবি: সংগ্রহীত
গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ওজন বাড়ালে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, অকাল প্রসব এবং প্রি-ইক্লাম্পসিয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তবে অতিরিক্ত ওজন কম হওয়াও শিশুর অটিজম এবং হৃদরোগের সম্ভাবনা বাড়াতে পারে। তাহলে কি সত্যিই কতটা ওজন বাড়ানো নিরাপদ?
গর্ভাবস্থায় কতটা ওজন বাড়ানো উচিত?
প্রতিটি গর্ভাবস্থা আলাদা, কেউ এই সময়টাকে খাবারে নিজেকে উদার করার সময় হিসেবে দেখেন, আবার কেউ সারাক্ষণ বমি বমি ভাব এবং রক্তস্বল্পতায় ভুগেন। ওজন বাড়ানোর নিরাপদ মাত্রা নিয়েও অনেক মতভেদ রয়েছে। প্রচলিত ‘দুটি মানুষের জন্য খাওয়া’ কথাটি বেশিরভাগ সময় ভুল; কারণ তৃতীয় ত্রৈমাসিকে দৈনিক মাত্র ২০০ ক্যালোরি বাড়ানোই প্রয়োজন। তবে খুব কম ওজন বাড়ানোও কিছু গবেষণায় বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে ধরা হয়েছে।
বেশির ভাগ ওজন বৃদ্ধি হয় শিশুর আয়তন, পানিপাত্র এবং প্লাসেন্টার কারণে, যা মায়ের শরীরের ফ্যাটের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নয়। বাচ্চার বৃদ্ধি নির্ভর করে মায়ের বয়স, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস এবং জেনেটিক্সের উপর।
সাধারণত স্বাভাবিক বিএমআইয়ের মহিলাদের জন্য, ডাক্তাররা এই পরামর্শ দেয়—
-
গর্ভাবস্থার শেষ পর্যন্ত ১১.৫ থেকে ১৬ কেজি (২৫-৩৫ পাউন্ড) ওজন বাড়ানো।
-
যাদের গর্ভধারণের সময় ওজন কম ছিল, তাদের জন্য ১৮ কেজি (৪০ পাউন্ড) পর্যন্ত বৃদ্ধি গ্রহণযোগ্য।
-
যদি বিএমআই বেশি হয়, তাহলে ৫ থেকে ৭ কেজি (১১-১৫ পাউন্ড) ওজন বাড়ানোই যথেষ্ট।
গর্ভাবস্থায় ওজন কমানো নিরাপদ?
ডা. কেইটলিন ডিন, নারীস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, বলেন, “গর্ভবতী মায়ের খুব বেশি ওজন কমানো ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, কারণ এটি শিশুর অটিজম এবং হৃদরোগের সম্ভাবনা বাড়ায়। বেশির ভাগ নারী গর্ভকালীন বমি ভাবের সম্মুখীন হন, কিন্তু যদি খাবার নেওয়ার সামর্থ্য কমে যায় এবং দ্রুত ওজন কমতে থাকে, তখন অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।”
অতিরিক্ত ওজন বাড়ালে কী ঝুঁকি থাকে?
অনেক নারী বমিভাবের কারণে ওজন বাড়িয়ে ফেলেন। সাংবাদিক মিরান্ডা ডাওয়েল বলেন, “আমার প্রথম গর্ভাবস্থায় ভীষণ বমিভাব ছিল, যা শুধুমাত্র চিজ টোস্ট খেতে পারলে কমতো। এর ফলে আমি ডায়েটে অনেক খারাপ অভ্যাসে পড়ে গিয়েছিলাম—সকালে বেকন এবং ডিমের স্যান্ডউইচ, দুপুরে পিৎজা, আর রাতে মিষ্টি।” প্রথম গর্ভাবস্থায় তার ওজন ২৮ কেজি বাড়ে।
বেশি ওজন বাড়ানোর ফলে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, অকাল প্রসব এবং প্রি-ইক্লাম্পসিয়ার ঝুঁকি কিছুটা বাড়ে, যদিও অনেকেই এরকম কোনো সমস্যা ছাড়াই সুস্থ থাকেন।
সুস্থ ওজন বজায় রাখার উপায়:
ব্যায়াম
অ্যান্টেনাটাল কোর্স ‘দ্য বাম্প ক্লাস’ পরিচালনাকারী মেরিনা ফোগল বলেন, “সপ্তাহে চার দিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন। কার্ডিও ও স্ট্রেংথ এক্সারসাইজের সমন্বয় রাখতে হবে। ব্যায়াম করার সময় যদি অস্বস্তি বা ব্যথা অনুভব করেন, অবিলম্বে থামুন।”
খাবার
গর্ভাবস্থায় ক্যালরি নিয়ন্ত্রণে কঠোর ডায়েট করা ঠিক নয়। দ্রুত ওজন বাড়লে মিষ্টি, সোডা ও সাদা কার্বোহাইড্রেট কমান। দিনে তিনবার বড় অথবা পাঁচবার ছোট খাবার খান। পুষ্টির জন্য দুধ বা ফুল ফ্যাট দই খাওয়া ভালো। প্রোটিনের অভাবে চিনি খেতে ইচ্ছা বাড়ে, তাই প্রতিটি খাবারে ডিম, মাছ, মাংস বা পনির রাখুন। মাঝেমধ্যে চিনাবাদাম আর আপেল বা বাদাম খেয়ে শরীর চালিয়ে নিন।
ফোগল আরও বলেন, “জন্মের পর দ্রুত ওজন কমানোর জন্য চাপ দেওয়া ঠিক নয়। অনেক সময় স্তন্যপানেও দ্রুত ওজন কমে না, কারো ক্ষেত্রে বছরখানেক সময় লাগে। জন্মের পর নিজের শরীরের দিকে ভালোভাবে তাকান এবং নিজের অর্জনকে সম্মান করুন।”
আবির