ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৫ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২

কিডনি রোগের প্রাথমিক ৫টি লক্ষণ, যেগুলো অনেকেই গুরুত্ব দেয় না

প্রকাশিত: ১১:৫০, ৫ জুলাই ২০২৫

কিডনি রোগের প্রাথমিক ৫টি লক্ষণ, যেগুলো অনেকেই গুরুত্ব দেয় না

ছবি: সংগৃহীত

কিডনি সমস্যা হঠাৎ করে শুরু হয় না। এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ দুটি শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে, তরল ও ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং লাল রক্তকণিকার উৎপাদনে সাহায্য করে। কিন্তু কিডনির ক্ষতির প্রাথমিক লক্ষণগুলো সাধারণত নীরব থাকে বা তুচ্ছ কারণে ভুল ব্যাখ্যা করা হয়।

ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (CKD) যদি প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ে, তবে তার অগ্রগতি থামানো সম্ভব হতে পারে। নিচে এমন ৫টি উপসর্গ তুলে ধরা হলো যা অনেকেই উপেক্ষা করেন, অথচ এগুলো কিডনি সমস্যার প্রাথমিক সতর্ক সংকেত হতে পারে:

১. দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি ও দুর্বলতা
কিডনি ব্যর্থ হলে শরীরে টক্সিন জমে যায়, যার ফলে শক্তি কমে যায়। এছাড়া কিডনি পর্যাপ্ত এরিথ্রোপয়েটিন হরমোন তৈরি করতে না পারলে রক্তস্বল্পতা (অ্যানিমিয়া) দেখা দেয়। এতে ক্লান্তি, মনোযোগের অভাব এবং হালকা কাজেও শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। অধিকাংশ সময় এগুলো বয়সজনিত ক্লান্তি ভেবে উপেক্ষা করা হয়।

২. প্রস্রাবে পরিবর্তন
প্রস্রাবের পরিমাণ, রঙ বা ধরণে পরিবর্তন কিডনির সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। বিশেষ করে রাতে ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া (নকচুরিয়া), ফেনিল বা বুদবুদযুক্ত প্রস্রাব (প্রোটিন নিঃসরণের ইঙ্গিত), প্রস্রাবে রক্ত বা অস্বাভাবিক গাঢ় রঙ—এসবই কিডনি ক্ষতির সতর্ক সংকেত।

৩. পা, গোড়ালি বা মুখমণ্ডলে ফোলা
যদি কিডনি শরীর থেকে অতিরিক্ত সোডিয়াম ও তরল বের করে দিতে না পারে, তবে শরীরে ফোলাভাব (ইডিমা) দেখা দেয়। বিশেষ করে পা ও চোখের চারপাশে এটি স্পষ্ট হয়। অনেকেই এটিকে দাঁড়িয়ে থাকার ফল বা ডায়েটের কারণ মনে করে গুরুত্ব দেন না।

৪. ত্বকে চুলকানি বা পরিবর্তন
চর্মরোগ ছাড়া যদি ত্বকে স্থায়ী চুলকানি থাকে, তবে তা কিডনির সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। রক্তে বর্জ্য পদার্থ জমে যাওয়া এবং ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের ভারসাম্যহীনতা এ ধরনের চুলকানি তৈরি করে।

৫. খাওয়ার ইচ্ছে কমে যাওয়া, মুখে ধাতব স্বাদ, বা বমিভাব
কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হলে শরীরে ইউরেমিক টক্সিন জমে যায়, যার ফলে মুখে ধাতব স্বাদ, দুর্গন্ধযুক্ত নিঃশ্বাস (ইউরেমিক ফেটর), খাওয়ার অনীহা ও বমিভাব দেখা দেয়। এগুলো অনেক সময় হজমের সমস্যা বলে ভুল ব্যাখ্যা করা হয়।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি?
যদি উপরোক্ত লক্ষণগুলোর মধ্যে একাধিক লক্ষণ দেখা যায়—বিশেষ করে যদি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির পারিবারিক ইতিহাস বা দীর্ঘমেয়াদি ব্যথানাশক ওষুধ গ্রহণের ইতিহাস থাকে—তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। রক্তে ক্রিয়াটিনিন ও eGFR, এবং প্রস্রাবে অ্যালবুমিন পরীক্ষার মাধ্যমে কিডনির কার্যকারিতা নিরূপণ করা যায়।

প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে জটিলতা রোধ করা যায় এবং জীবনমান অনেকটাই ভালো রাখা সম্ভব।

কিডনি সুস্থ রাখার মূল চাবিকাঠি: সচেতনতা ও পদক্ষেপ
ডা. মোহিত খিরবত, কনসালট্যান্ট, নেফ্রোলজি, সি কে বীরলা হাসপাতাল, গুরগাঁও-এর মতে— সুস্থ কিডনি শরীরের তরল ও বর্জ্য পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে। নিয়মিত পানি পান কিডনিকে সজীব রাখে এবং পাথর জমা প্রতিরোধ করে। ফল, শাকসবজি, পূর্ণ শস্য এবং কম সোডিয়াম ও প্রক্রিয়াজাত খাবারে পরিপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস কিডনিকে রক্ষা করে। এছাড়া নিয়মিত শরীরচর্চা রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।

পানি, স্বাস্থ্যকর খাদ্য ও শরীরচর্চা—এই তিনটি কিডনি সুস্থ রাখার মূলভিত্তি। সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন।

নোভা

×