ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৫ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২

বড়লেখা পৌর মার্কেটের পাশে ময়লার ভাগাড়, দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ শিক্ষার্থী, পথচারী ও ব্যবসায়ীরা

আশফাক আহমদ, বড়লেখা, মৌলভীবাজার

প্রকাশিত: ১৫:৪৬, ৫ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৫:৪৭, ৫ জুলাই ২০২৫

বড়লেখা পৌর মার্কেটের পাশে ময়লার ভাগাড়, দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ শিক্ষার্থী, পথচারী ও ব্যবসায়ীরা

ছবি: জনকণ্ঠ

মৌলভীবাজারের বড়লেখা পৌর শহরের হাজিগঞ্জ বাজারে ময়লা-আবর্জনা ফেলার কোনো নির্দিষ্ট ‘ডাম্পিং স্টেশন’ না থাকার কারণে অপরিকল্পিত ছোট-ছোট ডাস্টবিনসহ যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলায় গড়ে উঠেছে ‘ভাগাড়’। এ অবস্থায় চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন বাজারের ব্যবসায়ী, পথচারী, শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় সাধারণ মানুষজন।

বাজারের কেন্দ্রস্থল পৌর মার্কেট, মেমোরিয়াল মার্কেট, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স এলাকায় পাকার ছোট-ছোট ডাস্টবিনে প্রতিদিনই ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। বিশেষ করে শহরের মেইন রোডের পাশে ছোট-ছোট পাকার ডাস্টবিন তৈরি করে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ যা ঐ স্থানের অনেকটাই অনুপযোগী বলে দাবি করছে স্থানীয় ব্যবসায়ী। দীর্ঘদিন ধরে এখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় দুর্গন্ধে পথচারি, ব্যবসায়ী, ছাত্র-ছাত্রী ও গণপরিবহনের চালক যাত্রীরাও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ডাস্টবিন ভরাট হয়ে আবর্জনা সড়কের উপরে স্তূপ হয়ে পড়ে আছে যা শহরে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

শনিবার (৫ জুলাই) সরেজমিনে বড়লেখা হাজিগঞ্জ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের পাশে পাকার ছোট ডাস্টবিনে ফেলা হচ্ছে ময়লা আবর্জনা। এসব ময়লা-আবর্জনা পঁচে দুর্গন্ধে মানুষের চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তার ওপর সামান্য বৃষ্টিতেই আবর্জনা ছড়িয়ে যায় সাড়া সড়ক জুড়ে। ফলে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি পথচারিদের যাতায়াতেও চরম দুর্ভোগ তৈরি হচ্ছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী, পথচারি ও যানবাহন চালকরা অভিযোগ করে বলেন, ‘বাজারের গুরুত্বপূর্ণ স্হানগুলোতে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় কয়েকটি স্থানে ময়লার ‘ভাগাড়’ তৈরি হচ্ছে। এ বিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিকার চেয়েও সৃষ্ট সমস্যার কোন সমাধান হয় নাই’। ফলে সমস্যা দিনকে দিন বাড়ছেই।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজ বলেন, ‘আপনারা এক দিন এখানে থাকলে বুঝতেন আমরা কী যন্ত্রণায় আছি। ময়লা আবর্জনার স্তূপের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে বমি আসে। শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে, বৃদ্ধরা শ্বাস নিতে পারে না। মনে হয় এলাকা ছেড়ে পালাতে হবে।’

কলেজ ছাত্র এমরান আহমদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এটা এক দিনের সমস্যা নয়। বছরের পর বছর ধরে যেখানে সেখানে ময়লা ফেলায় ভাগাড় তৈরি হয়েছে। কেউ খোঁজ নেয় না। কেউ শোনে না। কী গন্ধ, বলে বোঝানো যাবে না’।

উপজেলা ইমাম সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুফতি জিয়াউল হক বলেন, বাজারের ভেতরে যেভাবে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে, এতে শুধু পরিবেশ নয়, এসব ময়লা থেকে মশা-মাছি বাড়ছে, ছড়াচ্ছে রোগব্যাধি। পৌর কর্তৃপক্ষ সময় মতো ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা আছে বলে তিনি জানান’।

হাজিগঞ্জ বাজার বনিক সমিতির সদস্য সচিব আব্দুর রহমান মানিক বলেন, আমরা কয়েকদিন থেকে বেশ অসুবিধায় রয়েছি। এই ময়লা আবর্জনা অপসারণ না হওয়ার কারণে বাজারে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। চার দিন আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট বনিক সমিতির পক্ষ থেকে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি বিগত দুইদিন থেকে ময়লা-আবর্জনা সড়কের উপরে চলে এসেছে। দ্রুত প্রতিকারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করছি।

উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবিদুর রহমান বলেন, পৌর শহরে ময়লা আবর্জনা ফেলার জন্য কোন উদ্যোগ না নেওয়ায় শহরবাসী অনেকটা বাধ্য হয়েই পাকা করা ছোট-ছোট ডাস্টবিনসহ যেখান-সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলছে। পরিচ্ছন্নকর্মীরাও নিরুপায় রাস্তা বা সড়কের পাশে ময়লা ফেলছে। এতে জনভোগান্তি চরমে উঠেছে। জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় দ্রুত ডাম্পিং ষ্টেশন নির্মাণ করা উচিত।

পৌরসভা প্রকৌশলী কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা বর্তমানে পৌর এলাকার আবর্জনা ফেলার জন্য নির্ধারিত সরকারি জমি পাচ্ছি না। যে কয়টি স্থান পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো জনবসতিপূর্ণ এলাকায় হওয়ায় সেখানেও সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে। এ কারণে আপাতত আমরা একটি বিকল্প জায়গা সিলেক্ট করেছি যেখানে সাময়িকভাবে ময়লা-আবর্জনা ফেলা সম্ভব। তবে এটি স্থায়ী সমাধান নয়। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয়েছে পৌর শহরের মধ্যে যেখানে পূর্বের পৌর মেয়র কিছু পাকা ডাস্টবিন নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু এসব ডাস্টবিন সঠিক নিয়ম মেনে নির্মাণ করা হয়নি। ফলে একটু পরিমাণে ময়লা জমলেই তা ডাস্টবিন উপচে পড়ে সড়কের পাশে ছড়িয়ে পড়ে, যা জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। এই পরিস্থিতি থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে আমরা এখনই সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক তাহমিনা আক্তার জানান, আমরা আবর্জনা পরিস্কার করার জন্য একটা মিটিং করেছি এবং তারা কিছু কাজ করেছে। তারপরও আজকের বিষয়টি আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ প্রদান করবো।

আবির

×