ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা

মাইফুল জামান ঝুমু

প্রকাশিত: ২১:২০, ৫ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২১:৪৪, ৫ জুলাই ২০২৫

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা

প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। স্বপ্ন, আবেগ, অভিযোগ আর প্রতিবাদের বুলি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৪তম জন্মদিনে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী। গ্রন্থনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরাসি ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগের 
শিক্ষার্থী- মাইফুল জামান ঝুমু

চাই গবেষণামুখর বিশ্ববিদ্যালয়
বিশ্ববিদ্যালয় হলো জ্ঞানের আতুরঘর। ধর্ম থেকে শুরু করে দর্শন, গবেষণা, সাহিত্য, রাজনীতি ও  মূল্যবোধ- এমন কোনো জ্ঞানের শাখা নেই যা বিশ্ববিদ্যালয়ে চর্চা হয়ে থাকে না। বিশ্ববিদ্যালয় একজন শিক্ষার্থীর সুপ্ত প্রতিভাকে জাগিয়ে তোলার অনন্য হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের এমন একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যা প্রত্যন্ত এলাকার নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান থেকে শুরু করে গুলশানের উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানকে একত্রে জ্ঞান চর্চার সুযোগ করে দেয়। নানান ধর্মের, নানা মতাদর্শের, নানা জেলার শিক্ষার্থীদের সংমিশ্রণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠে এক উৎসব কেন্দ্র।
কিন্তু হলের সংকট, খাবারের নি¤œমান, নিরাপত্তার অভাব একদিকে যেমন জ্ঞান চর্চায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ঠিক তেমনি পর্যাপ্ত গবেষণার অভাব, পুরানো পাঠদান পদ্ধতির কারণে বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনেক পিছিয়ে। 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি এমন একটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যাশা করছি, যেখানে নতুন পাঠদান পদ্ধতির মাধ্যমে একটি শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ গড়ে উঠবে। একই সাথে পর্যাপ্ত গবেষণা ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীর যৌথ প্রচেষ্টায় একটি আর্দশ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হবে।হল সংকট, নিরাপত্তাহীনতা, নোংরা রাজনীতি ইত্যাদি সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে প্রত্যেক শিক্ষার্থী জ্ঞান অর্জন করে একজন ভালো মানুষ হয়ে দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সুনাম বয়ে আনুক এই কামনা।

সানজিদা ইয়াসমিন সেথা
শিক্ষার্থী, ফরাসি ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

জাতির কল্যাণই হোক ব্রত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালগ্নে যে উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে যাত্রা শুরু করেছিল তার কিঞ্চিৎ পরিমাণ পূরণ করতে পারলেও ১০৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এসেও নানাবিধ সংকট আজও বিদ্যমান। এই সংকট নিরসনে আমি মনে করি নি¤েœাক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া জরুরী। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রমে নৈতিক শিক্ষার অন্তর্ভুক্তিকরণ; যাতে একজন শিক্ষার্থী শুধু কাগজের সনদ লাভ নয়, বরং সে যেন উন্নত চরিত্র ও ব্যক্তিত্বের অধিকারী হওয়ার পাশাপাশি দেশ ও জাতির কল্যাণ করাই হবে তাঁর প্রধান ব্রত এবং পরমতসহিষ্ণু, অসাম্প্রদায়িক, বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে উঠবে।

শিক্ষার্থীরা যেন তাদের মেধা ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে সমাজের বিরাজমান সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখতে পারে। শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনো দলীয় রাজনীতির প্রার্থী নয় বরং যে যোগ্য তাকেই নিয়োগ দেওয়া। এক্ষেত্রে প্রার্থীদের ভালো ফলাফল এবং পিএইচডি ডিগ্রি নিশ্চিতকরণে গুরুত্বারোপ। মতো করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চালিত করতে না পারে।

জুয়েল মিয়া
দর্শন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ছড়িয়ে দাও হৃদয়ের কণ্ঠস্বর
আমার শিল্প, স্বপ্ন ও সত্তার কেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়- এই নামটি কেবল একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, এটি আমার মতো হাজারো স্বপ্নবাজ মানুষের অন্তরের আলোয় জ্বলতে থাকা প্রদীপ। একজন লেখক, শিল্পী ও সংস্কৃতির চর্চাকারী হিসেবে আমার কাছে এই বিশ্ববিদ্যালয় এক জীবন্ত নাট্যমঞ্চ; যেখানে ইতিহাস, শিল্প, প্রতিবাদ ও প্রেম একই ছায়ার নিচে দাঁড়িয়ে থাকে। এই বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা সাহিত্যের বিশাল বৃক্ষ- যার ডালে রবীন্দ্রচিন্তা, বুদ্ধদেব বসুর চেতনা, আহমদ ছফার তীব্র আত্মসমালোচনা ও জীবনানন্দের নীরবতা একসঙ্গে বাস করে।
একজন লেখক হিসেবে এই জায়গা আমাকে ভাবতে শেখায়- নিজেকে ছাপিয়ে বৃহত্তর মানুষ হওয়ার দীক্ষা দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেই জায়গা যার হৃদপি- আসলে এর ছাত্রছাত্রীরা, যারা বইয়ের বাইরেও ইতিহাসের নির্মাতা। তারা গান গেয়ে বদলে দিয়েছে বিকেল, কখনো তারা প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে লিখে দিয়েছে সময়ের সংজ্ঞা।  জন্মদিনে আমার প্রার্থনা একটাইÑ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেন তার হৃদয়ের কণ্ঠস্বর কখনো হারিয়ে না ফেলে। যেন এখানে শিল্প, সাহিত্য, প্রশ্ন ও প্রেম সবসময় হাত ধরে হাঁটে।
ইরাতফা বিনতে রেদোয়ান
শিক্ষার্থী, উর্দু বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

প্যানেল

×