
ছবিঃ সংগৃহীত
বর্ষাকাল যেমন গরম থেকে স্বস্তি আনে, তেমনি এই সময়টায় বিভিন্ন জীবাণু ও ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবও বেড়ে যায়। এর ফলে শিশুদের চোখে সংক্রমণের ঝুঁকিও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এখনও পূর্ণ বিকশিত না হওয়ায় এবং বাইরে খেলার প্রতি আগ্রহ থাকায় তাদের চোখ সহজেই সংক্রমিত হতে পারে। বর্ষাকালের কিছু সাধারণ চোখের সংক্রমণ এবং তা প্রতিরোধে কীভাবে অভিভাবকরা সাহায্য করতে পারেন—তা নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন সূর্য আই ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও সিনিয়র চক্ষু চিকিৎসক ডা. জয় গোয়েল।
বর্ষাকালে চোখের সাধারণ রোগসমূহ
১. ড্রাই আই বা শুষ্ক চোখ:
অনেকেই মনে করেন বর্ষাকালে চোখ শুকিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম, তবে বাতাসে দূষণ ও ঘরের ভিতরে এয়ার কন্ডিশন ব্যবহারের ফলে ড্রাই আই হতে পারে। চোখ জ্বালাপোড়া, আঠালো তরল, আলোতে সংবেদনশীলতা, লালচে ভাব, পানি পড়া, ঝাপসা দেখা ইত্যাদি এর লক্ষণ। শিশুদের চোখে সোজাসুজি বাতাস লাগা থেকে রক্ষা করুন, সানগ্লাস ব্যবহার করান এবং প্রয়োজনে কৃত্রিম অশ্রু ব্যবহার করুন।
২. কনজাংকটিভাইটিস বা লাল চোখ:
বর্ষাকালে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় conjunctivitis বা লাল চোখের সমস্যা। এটি ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা অ্যালার্জির কারণে হতে পারে। লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে: লালচে চোখ, চুলকানি, খসখসে অনুভূতি, ঘুমের পর চোখে ময়লা জমে যাওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া ও আলোতে চোখে ব্যথা হওয়া। প্রতিরোধে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন, চোখে হাত না দেওয়া, নিজের তোয়ালে ও রুমাল ব্যবহার করার পরামর্শ দিন।
৩. স্টাই (Stye):
স্টাই হলো চোখের পাতায় লালচে ফোঁড়া বা ফুসকুড়ি, যা তেলগ্রন্থিতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে হয়। এটি সাধারণত বেশি আর্দ্রতা ও অপরিচ্ছন্নতা থেকে হয়। এর লক্ষণ: চুলকানি, আলোতে অস্বস্তি, ফোলা, পুঁজ পড়া, ব্যথা। শিশুদের মুখ ধোয়ার ও হাত পরিষ্কার রাখার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
৪. অন্যান্য সংক্রামক চোখের রোগ:
বর্ষাকালে ভিড়ভাট্টা ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে আরও অনেক ধরনের চোখের সংক্রমণ। লক্ষণ: চোখে পুঁজ পড়া, দৃষ্টি ঝাপসা হওয়া, চোখ জোড়া লেগে যাওয়া, মাঝে মাঝে জ্বর। প্রতিকার: হাত পরিষ্কার রাখা, চোখে না ঘষা, কনট্যাক্ট লেন্স ভালোভাবে পরিষ্কার করা।
অভিভাবকরা কী করতে পারেন
শিশুদের নিয়মিত সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস শেখান।
চোখে হাত না দেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
মুখ মুছতে হাতের বদলে পরিষ্কার রুমাল বা টিস্যু ব্যবহার করাতে বলুন।
কাদাপানিতে বা বৃষ্টির জলে খেলা নিষেধ করুন।
তোয়ালে, বালিশের কভার ও রুমাল ধুয়ে পরিষ্কার রাখুন এবং অন্যের সঙ্গে ভাগাভাগি না করতে বলুন।
যদি সাঁতার শেখে, তবে নিশ্চিত করুন পুলের পানি পরিষ্কার ও নিয়মিত ক্লোরিন দেয়া হচ্ছে।
চোখে সমস্যা হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
চোখ লাল হওয়া, চুলকানি, পানি পড়া বা ঝাপসা দেখার মতো উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে চক্ষু চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। নিজের মতো করে ওষুধ না দিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করানো জরুরি। এছাড়া চোখ সুস্থ রাখতে ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ খাবার, পর্যাপ্ত পানি পান ও ভালো ঘুমের অভ্যাস গড়ে তুলুন।
সূত্র: টাইমস অফ ইন্ডিয়া
নোভা