ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২

সমুদ্রের গভীরে সক্রিয় আগ্নেয়গিরিতে জীবনের রহস্যে হতবাক বিজ্ঞানীরা

প্রকাশিত: ১৬:৩৭, ৬ জুলাই ২০২৫

সমুদ্রের গভীরে সক্রিয় আগ্নেয়গিরিতে জীবনের রহস্যে হতবাক বিজ্ঞানীরা

ছবি: সংগৃহীত

প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশে চার মাইল গভীরে এক জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরির গুহায় লক্ষ লক্ষ সোনালী ডিমের সন্ধান পেয়েছেন কানাডার একদল গবেষক। প্রথম দেখায় সেগুলো যেন সোনার তৈরি, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এগুলো জীবন্ত প্রাণীর ডিম—এমনটাই দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষণা মহলে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক আলোড়ন, শুরু হয়েছে ডিমগুলোর প্রকৃতি নিয়ে তীব্র গবেষণা ও আলোচনা।

কানাডার ফিশারিজ অ্যান্ড ওশানস বিভাগের গবেষণা দলটি ২৪ দিনের এক দুঃসাহসিক সমুদ্র অভিযান চালায় আলাস্কা উপসাগর এলাকায়। মূলত সমুদ্রের তলদেশে আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপ ও ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণই ছিল তাদের লক্ষ্য। কিন্তু গবেষণার মাঝপথে যেটি আবিষ্কৃত হয়, তা সকলকে চমকে দেয়।

দলের প্রধান গবেষক ডুপ্রিস বলেন, ‘আমরা ক্যামেরায় ধরা ছবিগুলো বারবার পর্যবেক্ষণ করছিলাম। হঠাৎ চোখে পড়ে আগ্নেয়গিরির ঢালে সারি সারি সোনালী বস্তু। মনে হলো যেন কোনো অজানা জগতের দরজা খুলে গেছে আমাদের সামনে।’

প্রতিটি ডিমের দৈর্ঘ্য প্রায় ২০ ইঞ্চি, ব্যাস ৪ ইঞ্চির মতো। নমুনা সংগ্রহ করা হয় একটি রিমোট-চালিত সাবমেরিনের সাহায্যে। গবেষকদের ভাষ্য, ডিমগুলোর আবরণ অত্যন্ত সূক্ষ্ম। ফাটলে রেশমের মতো একধরনের টিস্যু বেরিয়ে আসে, যা ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে বিশ্লেষণের জন্য।

প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল, এটি হয়তো সম্পূর্ণ নতুন কোনো সামুদ্রিক প্রাণীর ডিম। কিন্তু দীর্ঘ দুই বছরের পরীক্ষার পর গবেষকেরা এখন মনে করছেন, এগুলো প্রশান্ত মহাসাগরীয় সাদা স্কেট নামক এক বিরল প্রজাতির ডিম। সাধারণত এই মাছ ৯৫০০ ফুট গভীরে ঠান্ডা জলে বাস করে, এবং বড় আকৃতির ডিম পাড়ে—যাতে ভ্রূণ দীর্ঘদিন ধরে পুষ্টি নিতে পারে।

তবে প্রশ্ন উঠেছে—একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরির গুহার মধ্যে এত বিপুল সংখ্যক ডিম কীভাবে এল? গবেষকদের ব্যাখ্যা, আগ্নেয়গিরির আশেপাশের উষ্ণ পানি ও খনিজসমৃদ্ধ তরল এই স্থানকে প্রাকৃতিক ইনকিউবেটরের মতো তৈরি করেছে। এতে ডিম ফোটার প্রক্রিয়া অনেক দ্রুত হয়।

তবু অনেক বিজ্ঞানী এখনো নিশ্চিত নন। কেউ বলছেন, এই স্থান হয়তো একাধিক প্রাণীর প্রজনন ক্ষেত্র, আবার কেউ মনে করছেন—এটি নতুন কোনো প্রজাতিরও ইঙ্গিত হতে পারে।

গবেষক ডুপ্রিস বলেন, ‘একটি ডিমের খোলসে সূক্ষ্ম ছিদ্র দেখা গেছে, যা থেকে বোঝা যায়, হয়তো কোনো ভ্রূণ ইতোমধ্যেই বেরিয়ে এসেছে। এমন দৃশ্য আমরা আগে কখনো দেখিনি।’

এই আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের নতুন করে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, পৃথিবীর পৃষ্ঠতলের চেয়েও সমুদ্রের গভীর তলদেশ অনেক বেশি রহস্যময়। যেখানে ভূতাত্ত্বিকভাবে সক্রিয় অঞ্চল শুধু বিস্ফোরণের উৎস নয়, বরং জীবনের এক নতুন রূপও ধারণ করে থাকতে পারে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে এই গবেষণায় আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বিশেষজ্ঞদের মত, ভবিষ্যতে এই ধরনের গরম ও খনিজসমৃদ্ধ অঞ্চলগুলোকে গভীর সমুদ্রের প্রাণীদের জন্য হ্যাচারি বা নিরাপদ ডিম ফোটানোর স্থান হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

ফিশারিজ অ্যান্ড ওশানস বিভাগ জানিয়েছে, তারা এই অঞ্চল নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে এবং আরও রিমোট যন্ত্র পাঠানো হবে ডিম থেকে বের হওয়া প্রাণী শনাক্তের জন্য। গবেষণাগারের বিশ্লেষণ শেষ হলে কানাডিয়ান সরকার এক সরকারি প্রতিবেদন প্রকাশ করবে বলেও জানা গেছে।

এই আবিষ্কার নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে, প্রকৃতির গভীরে এখনো অসংখ্য রহস্য লুকিয়ে রয়েছে—যা মানব কল্পনারও বাইরে।

 

সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=TNjb0aQefbM

রাকিব

×