ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২

মস্তিষ্কও কি হ্যাক হতে পারে? নিউরোসায়েন্স জানাল ভয়ঙ্কর সত্য

প্রকাশিত: ১৯:৫৭, ৬ জুলাই ২০২৫

মস্তিষ্কও কি হ্যাক হতে পারে? নিউরোসায়েন্স জানাল ভয়ঙ্কর সত্য

ছবি: সংগৃহীত

বিজ্ঞানের অগ্রগতির কল্যাণে আজকাল শুধু কম্পিউটার বা মোবাইল নয়—মানব মস্তিষ্কও হ্যাকিংয়ের ঝুঁকিতে। ‘ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস’ (BCI) নামের এক নতুন প্রযুক্তি ঘিরে উদ্বেগ বাড়ছে বিশ্বজুড়ে।

এই প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষের মস্তিষ্ক থেকে নির্গত স্নায়বিক সংকেত ডিজিটাল নির্দেশে রূপান্তরিত করা হয়, যা ব্যবহার করা হচ্ছে কৃত্রিম হাত-পা চালানো থেকে শুরু করে ভিডিও গেমিংয়ের মতো নানা খাতে। তবে নতুন এই আবিষ্কারে দেখা দিচ্ছে ভয়ংকর নিরাপত্তা ঝুঁকি।

‘চিন্তা’ পড়ে নেওয়া সম্ভব?

মেরিল্যান্ড গ্লোবাল ক্যাম্পাস বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, BCI প্রযুক্তি দুই ধরনের—ইমপ্লান্ট করা যন্ত্র ও বহনযোগ্য সেন্সর—উভয়ই স্নায়বিক তথ্যকে ডিভাইসে রূপান্তর করে।

কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, এই প্রযুক্তির নিরাপত্তা একাধিক স্তরে হুমকির মুখে। প্রথমত, হ্যাকাররা মস্তিষ্ক থেকে ডিভাইসে পাঠানো ‘নিউরাল ডেটা’ বা চিন্তার তথ্য চুরি করতে পারে। গবেষকরা প্রমাণ করেছেন, EEG-ভিত্তিক BCI সিস্টেমে ‘ব্যাকডোর’ অ্যাটাক চালিয়ে মস্তিষ্কের তরঙ্গ বিশ্লেষণের ফলাফল পরিবর্তন করা সম্ভব। এর ফলে খেলাধুলা বা চিকিৎসা ব্যবস্থার ফলাফলও বদলে যেতে পারে।

ভাবনা নিয়ন্ত্রণের সম্ভাবনা

দ্বিতীয়ত, হ্যাকাররা নিউরাল সংকেত বিকৃত করে ব্যবহারকারীর আবেগ, সিদ্ধান্ত বা আচরণ প্রভাবিত করতে পারে। এমনকি, পার্কিনসনের মতো রোগে ব্যবহৃত গভীর মস্তিষ্ক উদ্দীপক যন্ত্র হ্যাক করে সরাসরি মস্তিষ্কে পরিবর্তন আনার ঘটনাও ঘটতে পারে বলে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা।

‘কগনিটিভ লিবার্টি’ বা মনের স্বাধীনতা হুমকিতে

তৃতীয়ত, এসব প্রযুক্তির মাধ্যমে কারও ব্যক্তিগত চিন্তা, মানসিক অবস্থা কিংবা গোপন রোগ জানার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এতে গুরুতরভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বা ‘কগনিটিভ লিবার্টি’।

টাইম ম্যাগাজিনের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, যদিও এখনই কেউ অন্যের চিন্তা পড়ে ফেলতে পারছে না, কিন্তু বিজ্ঞান, সরকার ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত সেই ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলেছে। তাই বিশেষজ্ঞরা ‘মনের স্বাধীনতা’কে মানবাধিকারের একটি নতুন মাত্রা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন।

‘মাইন্ড কন্ট্রোল’ এখনো কল্পনা, তবে হুমকি বাস্তব

ইউনেস্কো জানায়, এখন পর্যন্ত কোনও সত্যিকারের 'মাইন্ড কন্ট্রোল' বা 'নিউরো-ওয়েপন' হামলার প্রমাণ মেলেনি। ‘হাভানা সিনড্রোম’ সহ নানা দাবিকে এখনো প্রমাণহীন বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। তবে দিনে দিনে প্রযুক্তির যে গতি, তাতে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

নিউরোসিকিউরিটি: মস্তিষ্কের জন্য সাইবার নিরাপত্তা

এই প্রেক্ষাপটে নতুনভাবে গড়ে উঠছে ‘নিউরোসিকিউরিটি’ শাখা, যেখানে হ্যাকারদের হাত থেকে মস্তিষ্ক সংযুক্ত যন্ত্র রক্ষা করতে কাজ করা হচ্ছে। কম্পিউটার নিরাপত্তার মতোই এসব যন্ত্রে এনক্রিপশন, সুরক্ষিত প্রোটোকল ও ফায়ারওয়াল ব্যবহারের তাগিদ দিচ্ছেন গবেষকরা।

মাথা যদি মেশিনে সংযুক্ত হয়, হ্যাকিং সম্ভব—কিন্তু সুরক্ষাও সম্ভব

তবে বিজ্ঞানীরা আশ্বস্ত করছেন, যথাযথ নিরাপত্তা ও নীতিমালার মাধ্যমে এই হুমকি প্রতিহত করা সম্ভব। প্রযুক্তির সঙ্গে মানবাধিকারও নিশ্চিত করতে হবে একযোগে। নাহলে ভবিষ্যতে প্রযুক্তির দখলে চলে যেতে পারে আমাদের চিন্তা, অনুভব আর স্বাধীন মন।

 

সূত্র: এনডিটিভি।

রাকিব

×