
সময় বড়ই অদ্ভুত। জীবনের পথে চলতে চলতে অসংখ্য মানুষের সঙ্গে দেখা হয়, কথা হয়। তাদের ভিড় থেকে কেউ কেউ স্থান করে নেয় মনের গহীনে রাতের গল্প, নিঃশব্দ চিন্তা কিংবা স্মৃতির পাতায়। জীবন যখন বাঁক নেয়, তখন কেউ হারিয়ে যায় মাঝপথেই, আবার কেউ থেকে যায় চুপচাপ, রাতের নরম আলোয়।
পাতায় জড়িয়ে থাকা সুখ-দুঃখের গল্প, হাসি-কান্নার মুহূর্তগুলো বারবার ফিরে আসে মনে। মাঝখানের দিনগুলো শুধুই স্মৃতি। যার শেষ হয়েও যেন শেষ হয় না। কারণ স্মৃতির গহীনে থেকে যায় একটি অজানা প্রশ্নবোধক চিহ্ন—তবুও কেন এই শূন্যতা?
আমি বড্ড একা।
এই জীবনে অনেক কিছু পেয়েছি, পেয়েছি মানুষের ভালোবাসা। ক্ষুদ্র পৃথিবীকে অনেক বড় করে অনুভব করেছি। তবু এই জীবন কেটেছে সুখের অর্থ না জেনেই। সময় থাকতে কিছুই বোঝা যায় না, উপলব্ধি আসে যখন, সময় থাকে না তখন। চোখের পলকেই হারিয়ে যায় মুহূর্তগুলো, স্মৃতি হয়ে বসে থাকে মনের কোণে।
অনেকের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে এই ছোট্ট জীবনে। বাস্তবতা, সময়, জীবনযুদ্ধ সবকিছুর ভারে আবেগ আর ভালোবাসা হেরে গেছে। মাঝেমধ্যে হঠাৎ গভীর রাতে মনে পড়ে যায় সেই দিনগুলোর কথা, যেগুলোর স্মৃতি আজও চোখে জল এনে দেয়।
একদিন আমি থাকবো না।
টেবিলের পাশে রাখা এলার্ম ঘড়ি ঠিকই বেজে উঠবে, কিন্তু আমি আর শুনবো না। নিজের হাতে সাজানো ঘরটা নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে থাকবে, কিন্তু আমি থাকবো না। যে কোলবালিশ ছাড়া ঘুমাতে পারতাম না, সেটাও একা পড়ে থাকবে বিছানার পাশে, কিন্তু আমি থাকবো না।
আমার ফেসবুকে দেওয়া ছবিতে নোটিফিকেশন আসবে, কেউ কমেন্ট করবে কিন্তু রিপ্লাই দেওয়ার মতো আমি আর থাকবো না। আমার নামটাও বদলে যাবে। কেউ আর ‘মিশুক’ বলে ডাকবে না, ডাকবে “লাশ কয়?”, “লাশ কোথায়?”
সবকিছু থেকে যাবে, শুধু আমি থাকবো না।
যে স্বপ্নগুলো দিনের পর দিন বুনেছি সেগুলোও পড়ে থাকবে, ধুলোয় ঢাকা। আর আমি হয়তো শুয়ে থাকবো মাটির নিচের এক অন্ধকার কবরে যেখানে শব্দ নেই, আলো নেই, প্রিয়জনের সান্নিধ্য নেই।
তবুও স্মৃতিগুলো আমাকে কাঁদায়।
মাঝে মাঝে মনে হয় আমি কি সত্যিই একা? সেই তো সেদিন চায়ের দোকানে আড্ডার সময়, চায়ের কাপটা পাশে রেখে কেউ বলেছিল, “আছি তো পাশে।” আজ সেই জায়গাটা ফাঁকা। গাড়ির সিটটা এখনো খালি, অথচ আমি বসে নেই সেখানে।
জীবনের বাঁকে বাঁকে মনে পড়বে কেউ ছিল, কেউ পাশ কাটিয়ে চলে গিয়েছিল। আমি থেকে গেছি শুধুই নীরবে, এক আশায়—শান্তির পথের দিশা খুঁজে, মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে একদিন হয়তো আবার নিজেকে খুঁজে পাবো।
মোহাম্মদ মিশুক হাসান
কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, (শৈলকুপা) ঝিনাইদহ
শিক্ষার্থী, সংবাদ কর্মী
মিমিয়া