ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৭ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২

টাঙ্গুয়ার হাওরের সৌন্দর্য ও মেঘালয়ের চিরহরিৎ দৃশ্যে মুগ্ধ বাকৃবিসাসের সদস্যরা

সুমন গাজী, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, বাকৃবি

প্রকাশিত: ০১:০০, ৭ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০১:০১, ৭ জুলাই ২০২৫

টাঙ্গুয়ার হাওরের সৌন্দর্য ও মেঘালয়ের চিরহরিৎ দৃশ্যে মুগ্ধ বাকৃবিসাসের সদস্যরা

ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ।

প্রকৃতি যেন তার রঙতুলিতে আঁকছে এক অপার নৈসর্গিক দৃশ্যপট নীল জল, সবুজ পাহাড়, আকাশের সীমাহীনতা আর মাঝখানে এক ঝাঁক মুখরিত তরুণ সাংবাদিক। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) সাংবাদিক সমিতির সদস্যরা বের হয়েছে দেশের প্রাকৃতিক রত্নভাণ্ডার টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে। সাংবাদিক সমিতির ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের কার্যনির্বাহী কমিটির অংশ হিসেবে বার্ষিক ভ্রমণে এবারের গন্তব্য সিলেটের অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর।

যাত্রা শুরু হয় ৫ জুলাই সন্ধ্যা ৭টায়। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) অবস্থিত সাংবাদিক সমিতির অফিসের সামনে থেকে যাত্রা শুরু করে। রাতে বাসে ১০ ঘণ্টার সড়কপথ অতিক্রম করে বাকৃবিসাস সদস্যরা পৌঁছায় সুনামগঞ্জ শহরে। তখনও আকাশের সূর্যের দেখা মিলেনি চারিদিকে ভোরের নীলাভ আভা। এরপর লেগুনায় চেপে সবাই রওনা দেন সাহেববাড়ি ঘাটের উদ্দেশ্যে, যা টাঙ্গুয়ার হাওরের মূল প্রবেশদ্বার। 

সাহেববাড়ী ঘাটে পৌঁছায় সকাল ৬টায়, ঘাটে সারিবদ্ধভাবে বেঁধে রাখা হয়েছে রংবেরঙের ছোট বড় মাঝারি আকারের হাউস বোট। আগে থেকে বুকিং করা একটি হাউসবোটে ওঠে সাংবাদিকদের দল। শুরু হয় হাওরের বুকে ভেসে থাকার গল্প। নীল জল আর আকাশের ছায়ায় তৈরি হয় এক অনুপম ছন্দ। হঠাৎই শহরের ক্লান্তি, ক্যাম্পাসের ব্যস্ততা সব ফিকে হয়ে আসে এই প্রকৃতির সান্নিধ্যে।

হাউজবোট ছাড়ে সকাল সাড়ে ৮টায়। বাকৃবিসাসের সদস্যদের প্রথম গন্তব্য ছিল হাওরের বুকে মাথা উঁচু করে গর্বভরে দাঁড়ানো ওয়াচ টাওয়ার। যাত্রাপথে সকালবেলার স্নিগ্ধ আলোয় ভেসে ওঠে হাওর পাড়ের জীবন ও জলরাশি। হাওরের মানুষজন সকাল হতেই জীবিকা সন্ধানে ডিঙি নৌকা নিয়ে বের হয়। 

এরপর বোটে করে ৫ ঘণ্টা নৌপথে যাত্রা শেষে টাওয়ারে পৌঁছায়। হাউসবোট থেকে ওয়াচ টাওয়ারে উদ্দেশে যেতে ছোট নৌকা ভাড়া করে সাংবাদিক দলটি। টাওয়ারে উঠার আগে পাশের হিজল করচের বাগানে ছোট নৌকাটি থামে। তখন সাংবাদিক সদস্যরা হাওরের পানিতে গোসল করে, প্রকৃতির কাছাকাছি যাওয়া ও হাওরের নীলাভ পানিতে নিজেদেরকে সিক্ত করে নেয়। কেউ কেউ হিজল করচ গাছে উঠে লাফ দেয়, নিজেদেরকে  আবারো ছোটবেলার স্মৃতির পাতায় ফিরিয়ে নিতে চেষ্টা করে। এরপর সকলে হাওরের মূল সৌন্দর্য ওয়াচ টাওয়ারের উপরে উঠে, সে একটু অপরূপ মনোমুগ্ধকর নয়াভিরাম দৃশ্য। 

এরপর সাংবাদিক দলটির গন্তব্য ছিল বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তঘেঁষা নীলাদ্রি লেক। যাওয়ার পথে হাওরের পরিষ্কার নীল পানি আর চারপাশের পাহাড়ঘেরা দৃশ্য যেন ক্যানভাসে আঁকা ছবি। মেঘালয়ের উঁচু পাহাড়ের অংশবিশেষ সবার চোখে-মুখে আনে বিস্ময় আর অন্যরকম প্রশান্তি। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করে সাংবাদিক দলটি, ফটোফ্রেমের কাজটিও সেরে ফেলে। এরপর রওনা হয় পাশের চিরহরিৎ লাকমাছড়ার উদ্দেশ্যে, সবুজ পাহাড় আর ঝর্ণার ঢল। লাকমাছড়ায় যেতে পাড়ি দিতে হয় কাদামাখা পথ, পাহাড়ি ঢালু বেয়ে উপরে ওঠা সব মিলিয়ে যেন অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ।

সেখান থেকে সন্ধায় আবার হাউসবোটে ফিরে আসে বাকৃবিসাসের সদস্যরা। খোলা আকাশের নিচে প্রকৃতির গভীর নির্জনতায় ভেসে থাকা হাউসবোটে কাটে সেই রাত। হাওরের জলে মৃদু বাতাস, ঢেউয়ের হালকা দুলুনি  আর তরুণ সাংবাদিকদের গান, গল্প আর প্রাণবন্ত আড্ডায় ভরে ওঠে পুরো পরিবেশ। এ যেন প্রকৃতির কোলে ফিরে পাওয়া এক নতুন জীবন।

এসময় ট্যুরের আয়োজক ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. তানিউল করিম জীম বলেন, 'সাংবাদিকতা মানেই শুধু খবরের পেছনে ছোটা নয়, মাঝে মাঝে নিজেকেও নতুনভাবে খুঁজে নেওয়ার প্রয়োজন হয়। তাই এই ট্যুর শুধু ভ্রমণ নয়, এটা আমাদের জন্য আত্মিক প্রশান্তি ও পারস্পরিক বন্ধন আরও দৃঢ় করার একটি সুযোগ। আমরা চেষ্টা করেছি যেন সবার জন্য সুন্দর, নিরাপদ ও স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়। আশা করি, এই তিন দিনের যাত্রা আমাদের সবার জীবনে ছোটখাটো কিছু বড় স্মৃতি  তৈরি করবে।'

ট্যুর আয়োজক ও বাকৃবিসাসের ২০২৫ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আমান উল্লাহ বলেন, 'প্রতিটি যাত্রার পেছনে থাকে একেকটি গল্প, যা আমাদের মানুষ হিসেবে পরিপূর্ণ করে। এই ট্যুর শুধু আনন্দ কিংবা অবসর নয়, বরং আমাদের মাঝে যে বন্ধন, সহযোগিতা আর সম্মিলনের চেতনা আছে তা আরও দৃঢ় করার একটি প্রয়াস। আমি বিশ্বাস করি, টাঙ্গুয়ার হাওরের এই অভিজ্ঞতা আমাদের সবাইকে আরও প্রাণবন্ত, উৎসাহী ও কর্মদক্ষ করে তুলবে, যা আমরা আমাদের সাংবাদিকতা ও ব্যক্তিজীবনে কাজে লাগাতে পারব।'

মিরাজ খান

×