
ছবি: সংগৃহীত
ইতিহাস শুধু অতীত জানার বিষয় নয়, এটি ভবিষ্যতের আয়নাও। প্রাচীন বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম সভ্যতাগুলোর একটি ছিল ব্যাবিলন। আজ সে সভ্যতা ইতিহাসের পাতায় শুধুই ধ্বংসস্তূপ। একসময় জ্ঞান, প্রযুক্তি ও রাজনীতিতে শীর্ষে থাকা এই জাতি কোথায় হারিয়ে গেল? আর আজকের মুসলিম জাতি, যারা এক সময় বিশ্ব নেতৃত্ব দিয়েছে তারা কি এখন সেই ব্যাবিলনের পথেই হাঁটছে?
এই প্রশ্নটিই আমাদের এই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
ব্যাবিলন সভ্যতার এক বিস্ময়— ব্যাবিলন ছিল প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার রাজধানী, ইউফ্রেটিস নদীর তীরে গড়ে ওঠা এক উন্নত নগর। খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ১৮৯৪ সালে এটি গড়ে ওঠে হ্যাম্মুরাবি ও পরবর্তীতে নেবুচাদনেজারের মতো সম্রাটদের নেতৃত্বে। হ্যাম্মুরাবির প্রণীত আইন ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা আজও ইতিহাসে স্মরণীয়।
এই নগর ছিল একদিকে জ্যোতির্বিজ্ঞান, সাহিত্য, স্থাপত্য ও চুক্তির বিধাননায়ক, অন্যদিকে ধর্মীয় অপসংস্কৃতি, মূর্তিপূজা ও জাদুবিদ্যারও কেন্দ্রস্থল। এই দ্বৈততার ফলেই একসময় পতন ঘটে ব্যাবিলনের— একটি জাতি প্রযুক্তিতে যতই উন্নত হোক না কেন, যদি নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতা হারিয়ে যায়, তবে তাদের ধ্বংস অনিবার্য।
কুরআনের ভাষ্যে ব্যাবিলনের ইঙ্গিত— পবিত্র কুরআনে ব্যাবিলনের নাম সরাসরি উল্লেখ না থাকলেও, সূরা বাকারা (২:১০২)-তে হরুত ও মারুত নামে দুই ফেরেশতার মাধ্যমে ব্যাবিলনের জাদুবিদ্যার ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, এই ফেরেশতারা মানুষকে সতর্ক করে দিতেন, আমরা তো পরীক্ষা স্বরূপ পাঠানো হয়েছি, কাজেই তুমি কুফরি করো না।
এই ঘটনা স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয়, জ্ঞান ও প্রযুক্তি থাকা সত্ত্বেও, যদি তা ব্যবহার হয় ভ্রান্ত পথ ও ক্ষমতার অপব্যবহারে, তবে তা শেষ পর্যন্ত ধ্বংসই ডেকে আনে। ব্যাবিলনের মানুষ সত্য জ্ঞানকে অস্বীকার করে, জাদুবিদ্যা ও অহংকারে গা ভাসিয়ে দেয়, আর এর ফলেই আল্লাহর গজব তাদের ওপর নেমে আসে।
মুসলিম জাতির ইতিহাস ও বর্তমান অবস্থা— ইসলামের উত্থানও শুরু হয়েছিল এক বিপরীত বাস্তবতা থেকে। নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সময় আরব ছিল বিভ্রান্তি, পৌত্তলিকতা ও নৈতিক শূন্যতায় ডুবে থাকা এক সমাজ। কিন্তু কুরআনের আলো, নবীর চরিত্র ও সাহাবাদের ত্যাগের মাধ্যমে মুসলিম জাতি গড়ে তোলে এক আদর্শিক সমাজ, যার ভিত্তি ছিল তাওহীদ, ইনসাফ ও জ্ঞান।
তবে সময়ের সাথে সাথে অনেক মুসলিম রাষ্ট্র ও সমাজ সেই মূল পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে। আজ মুসলিম বিশ্বে দেখা যায় মতভেদ ও বিভক্তির রাজনীতি, ধর্মের অপব্যাখ্যা, দুর্নীতি ও ক্ষমতার লালসা, জ্ঞানচর্চার অভাব এবং নৈতিক অবক্ষয়। এই চিত্র কি ব্যাবিলনের শেষ সময়ের চিত্রের সঙ্গে মিলে যায় না?
মুমু ২